কে হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান!
আহ্সান কবীর

সেনাপ্রধানের দৌড়ে ৪ কোর্সমেট- লে. জেনারেল জুবাইর হায়াত, লে. জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, লে. জেনারেল জাভেদ ইকবাল রামদে ও লে. জেনারেল ইশফাক নাদিম আহমেদ
কে হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান? কার অধীনে থাকবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সেনাবাহিনী যার সদস্য সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ?
পর্যবেক্ষকদের মতে- এই প্রশ্নের জবাব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সামনে প্রধান চারটি বিকল্প আছে। চলতি নভেম্বরের শেষদিকে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ অবসরে যাচ্ছেন। সে মোতাবেক দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে তিনি তার বিদায়ী সফরে রয়েছেন এখন।
সেনাপ্রধান বাছাই করা যে কোনো রাষ্ট্রনায়কের জন্যই একটি জটিল আর স্পর্শকাতর ইস্যু। তবে নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি সেনাপ্রধান নিয়োগ দেওয়া শাসক হিসেবে এ ক্ষেত্রে আলাদা কিছু ‘দক্ষতা’ অর্জন করেছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। বিশেষ করে ১৯৯৯ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে যেভাবে তারই সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতা দখল করে নেন- তা তার জন্য পরবর্তীতে সেনা প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরাট শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
আর তাই ২০১৩ সালের মে মাসে ফের নির্বাচনে জেতার পর পরই নওয়াজ শরিফ তার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে যে গুটিকয়েক বিষয় নিয়ে সবার আগে গুরুত্বের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করেন, তার অন্যতম ছিল- কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী সেনাপ্রধান। তখনও কিন্তু নওয়াজ ক্ষমতা গ্রহণ করেন নাই। আর তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল কায়ানির অবসরে যেতেও আরও পুরো ছয়মাস বাকি ছিল।
জানা গেছে, সেনাপ্রধান বাছাই বিষয়ে নওয়াজের ঘনিষ্ঠ মহল তাকে সৎ পরামর্শ দিয়ে বলেছে- সিনিয়রটি লঙ্ঘন করে সেনাপ্রধান নির্বাচনের কুফল আগের সরকারগুলোর ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল তা যেন ভূলে যাওয়া না হয়। তাকে পরামর্শদাতারা সেনাপ্রধানের অফিসের ক্ষমতাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করতেও অনুরোধ করেন। নওয়াজের উপদেষ্টারা তাকে জেনারেলদের মাঝে ‘আপনা বান্দা’ অর্থাৎ ‘অনুগত দাস’ খোঁজার গতানুগতিক মানসিকতা ত্যাগ করতে বলেন।
নওয়াজ শরিফের উপদেষ্টারা এই উপদেশসমূহের পেছনে সেনাবাহিনী সম্পর্কিত একটি বড় বাস্তবতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন- এটা হলো, পাকিসতআনের মতো দেশে যখনি কোনো জেনারেল সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান সঙ্গে সঙ্গে তিনি এতসব দায়িত্বভারের বোঝায় ন্যুব্জ হয়ে পড়েন যে তিনি তখন আর তার ‘নিজের আপনার জন’ও থাকেন না। সেনাবাহিনীর জটিল আইন-কানুনের আর নিয়ম-বিধির প্যাঁচে তিনি ভালমতো জড়িয় যান। একই সঙ্গে তাকে ভাবতে হয় অধীনস্থদের সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং সুযোগ সন্ধানী অন্যসব ‘দুষ্টু’ জেনারেলদের চোখে চোখে রাখার বিষয়টিও।
আর অনেক জেনারেল বিশেষ করে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানদের অনেকেই যারা ভাবেন রাষ্ট্রক্ষমতার স্বাদ আরও বেশি করে নিতে [পাকিস্তানি সেনাপ্রধানদের মধ্যে শুধুমাত্র জেনারেল আসিফ জানজুয়াই (যিনি সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান) রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী ছিলেন না- এমন অনেকে মনে করেন] কিংবা যারা চান মেয়াদ বাড়াতে অথবা নিছকই চান সসম্মানে অবসরে যেতে- তাদের সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়েও মেধা-মনোযোগের বিরাট অংশ সেখানে বিনিয়োগ কতে হয়। তাই সত্যিকারার্থে নিয়মনিষ্ঠ আর বিবেকবান একজন সেনাপ্রধান হলে পরবর্তীতে অহেতুক ঝামেলা-অশান্তি থেকে বাঁচা যায়। তাই উচিৎ কাজ হচ্ছে সিনিয়রিটির বড়সর কোনো বরখেলাপ না করে সবচেয়ে উপযুক্ত লোকটিকে দায়িত্ব দেওয়া।
এসব বিষয় বিচেনায় নিয়ে ২০১৩ সালের নভেম্বরে জেনারেল কায়ানির স্থলাভিষিক্ত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বেছে নেন জেনারেল রাহিল শরিফকে। নওয়াজের অধীনে নিয়োগ পাওয়া চতুর্থ সেনাপ্রধান তিনি (এত অধিকসংখ্যক সেনাপ্রধানের নিয়োগদাতা হিসেবে এটা নওয়াজের একটি রেকর্ড)। অবশ্য সেনাপ্রধান হওয়ার আগে দিয়ে অন্য জেনারেলদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার দৌড়ে জেনারেল রাহিল ধর্তব্যের মধ্যেই ছিলেন না। কিন্তু উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে তালেবান, আলকায়েদা, লশকর-ই-জাঙ্গভি, হাক্কানি নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো অপারেশন জার্ব-ই-আজব পরিচালনা করে দ্রুতই অন্যদের ছাপিয়ে একেবারে নওয়াজের চোখের মণি হয়ে যান তিনি।
যাহোক, পাকিস্তানি দৃষ্টিতে মোটামুটি সফল এই সেনাপ্রধান অবসরে যাচ্ছেন আর দিন কয়েকের মধ্যে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে পঞ্চমবারে মতো বেছে নিতে হবে তার দেশের পরবর্তী সেনা প্রধানকে।
এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে জেনারেল জিয়াউল হকের পর পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত যে সাত জন সেনাপ্রধান হয়েছেন তার মধ্যে পাঁচজনকেই নিয়োগ দিয়েছেন নওয়াজ (তবে ১৯৯৯ সালে পারভেজ মোশাররফকে বরখাস্ত করে জেনারেল জিয়াউদ্দিন ভাটকে নিয়োগ দিয়েছিলেন নওয়াজ। সেটা গণনায় নিলে এবার ষষ্ঠবারের মতো সেনাপ্রধান নিয়োগ দেবেন নওয়াজ। পারভেজ মোশাররফের ক্যু-এর ফলে ভাট আর সেনাপ্রধানের কুরসিতে বসতে পারেননি)।
এদিকে, এমুহূর্তে সিনিয়রিটি লিস্টে সবার আগে আছে চিফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল জুবাইর হায়াতের নাম। এর পরের তিনটি নাম হচ্ছে মুলতান কর্পস কমান্ডার লে. জেনারেল ইশফাক নাদিম আহমেদ, বাহাওয়ালপুর কর্পস কমান্ডার লে. জেনারেল জাভেদ ইকবাল রামদে ও পাকিস্তান আর্মির ট্রেনিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল লে. জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।
অবশ্য জেনারেল জুবায়ের ও জেনারেল ইশফাকের মাঝে আরও দুজন আছেন। এরা হলেন হেভি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স টাক্সিলা চেয়ারম্যান লে. জেনারেল সাইদ ওয়াজিদ হুসাইন ও ডাইরেক্টর জেনারেল অব জয়েন্ট স্টাফ লে. জেনারেল নাজিবুল্লাহ খান। তবে সিনিয়রিটির ধাপে থাকলেও কৌশলগত কারণে তাদের উভয়েই সেনাপ্রধান হবার যোগ্য নন। কারণ, তারা আর্মির কোনো কর্পসকে কমান্ড করেননি।
নয়া সেনাপ্রধানের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজকে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির একজন নয়া চেয়ারম্যানও খুঁজতে হবে এবার। কারণ, সেনাপ্রধান রাহিলের সঙ্গে সঙ্গে অবসরে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জেনারেল রাশাদ মাহমুদ।
ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সেনা ও অন্যান্য সূত্রে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে- মুলতান কর্পস কমান্ডার লে. জেনারেল ইশফাক নাদিমই হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী সেনাপ্রধান। গুঞ্জন আরও বলছে- এছাড়া জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির নয়া চেয়ারম্যান হচ্ছেন লে. জেনারেল জুবাইর মেহমুদ।
অবশ্য ইশফাক নাদিম সেনাপ্রধান হচ্ছেন- এই মতের বিরোধীতাকারীদের একটি পক্ষ বলছে বাহাওয়ালপুর কর্পস কমান্ডার লে. জেনারেল জাভেদ ইকবাল রামদে-ই হতে যাচ্ছেন পরবর্তী সেনাপ্রধান। আর আরেকটি পক্ষ বলছে- জাভেদ বা ইশফাক কেউ নন, পরবর্তী সেনাপ্রধান হবেন লে. জেনারেল কামার বাজওয়া যিনি সেনা ট্রেনিং অ্যান্ড ইভালুয়েশনের ইন্সপেক্টার জেনারেলের পদে আছেন বর্তমানে।
এদিকে, নওয়াজের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে ডন.কম বুধবার জানায়, প্রধানমন্ত্রী তার মনস্থির করে ফেলেছেন কাকে বসাবেন ওই গুরুদ্বপূর্ণ পদে। তবে তিনি তা নিজের মস্তিষ্কে সুরক্ষিত করে রেখেছেন। সময় হলেই তা প্রকাশ করবেন।
নিয়মমাফিক পাকিস্তানে সেনাপ্রধান বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয় সেনাসদর থেকে (জেনারেল হেডকোয়ার্টার্স) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে সিনিয়রমোস্ট জেনারেলদের তালিকা পাঠানোর মাধ্যমে। পরে প্রধানমন্ত্রী ওই তালিকা নিয়ে পরামর্শ করতে বসেন বিদায়ী সেনাপ্রধানের সঙ্গে।
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শরিফ আর সেনাপ্রধান শরিফ- এই দুই শরিফে বৈঠকের পরই নির্ধারিত হয়ে যায় পরের সেনাপ্রধান কে হচ্ছেন।
আগামী ২৯ নভেম্বর অবসরে যাচ্ছেন বর্তশান সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ।
এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- নয়া সেনাপ্রধানের ইঁদুর দৌড়ে থাকা চার জেনারেলই পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে (পিএমএ) ছিলেন কোর্সমেট (একই কোর্স বা ব্যাচের শিক্ষানবীশ)। তারা ৬২তম পিএমএ লংকোর্সের ক্যাডেট ছিলেন।
নিউজওয়ান২৪.কম/একে
- পাকিস্তানি পরমাণু হামলা ঠেকাতে পারবে না ভারত: রুশ বিশেষজ্ঞ
- ইমরান খানের স্ত্রী শুকরের মাংস পাকান!
- কুয়েতে সীমিত আকারে বাংলাদেশি পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের অনুমোদন
- অভিযানে পিস্তল জ্যাম, দারোগা মুখে বললেন ‘ঠা ঠা’! (ভিডিও)
- ‘বিশেষ অঙ্গ’ বড় হওয়ায় আদালতে প্রেমিকার অভিযোগ!
- কে হবে শ্রেষ্ঠ ‘গাই সুন্দরী’!
- থাই-উপসাগরের তলায় শুয়ে আছে ফ্লাইটএমএইচ৩৭০!
- এবার সৌদিতে প্রকাশ্যে নারী নিগ্রহ
- যে তিন কারণে `মনহুশ` রাহুল!
- ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হলেন ময়মনসিংহ মেডিকেলের ছাত্র
- নেপালে পাহাড়ি এলাকায় কলেজবাস খাদে, নিহত ২১
- ‘সিমেন্টের ব্যাগ’-এ বিয়ের পোশাক!
- শান্তিমিশনে যৌন হয়রানি: ২ ভারতীয় সেনার শাস্তি
- মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসছে!
- পাপোষে হিন্দু দেবদেবী ও কোরানের ছবি: বিতর্কে অ্যামাজন