কাজটাকে ইবাদত মনে করেছি, কখনো মিথ্যা বলিনি: চুনকার মেয়ে আইভী
জেলা সংবাদদাতা
নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার পর পর দুইবার নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান প্রয়াত আলী আহাম্মদ চুনকা ও তদীয় কন্যা মেয়র আইভী -ফাইল ফটো
নারায়ণগঞ্জ: ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ডা. সেলিনা হায়াত আইভী জনগণের পওতি সাড়া দিতে সময় নেননি। গত শনিবার তিনি স্থানীয় মিডিয়াকে বলেন, “তিনটি কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমার ফের (মেয়র হিসেবে) পথ চলা শুরু হবে। এমধ্যে রয়েছে শীতলক্ষ্যা সেতু, ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং ব্যবস্থা ও অসমাপ্ত কাজ শেষ করা।
এছাড়া সুবজ, পরিছন্ন নগরায়ণ এবং শহরের খালগুলো খনন ও জলাশয় রক্ষার মাধ্যমে একটি আধুনিক নগর হিসেবে নারায়ণগঞ্জ সিটিকে গড়ে তোলার মিশন তো আছেই। মোট কথা, আমি কাজ করতে চাই দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে, সবাইকে নিয়ে। আগেও বলেছি এখনো বলছি, সিটি করপোরেশন হবে সবার। এখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে।”
গত শনিবার শহরের দেওভোগে অবস্থিত বাড়িতে বসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।
নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন আমি এবারও নামবো একা: আইভী
দেশের ইতিহাসে কোনো সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) প্রথম নারী মেয়র এবং একই পদে ফের নির্বাচিত আইভী তার অগ্রাধিকারে থাকা কাজ সম্পর্কে বলেন, “দ্বিতীয়বারের মতো আবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। শীতলক্ষ্যা নদীর উপর একটা ব্রিজ করতে হবে। এটা নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি। আমরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় সেতুর ড্রয়িং ও ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন করেছি। সেটি স্থানীয় সরকারের কাছে জমা দেওয়া আছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ব্রিজ নির্মাণে নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবি প্রধানমন্ত্রী পূরণ করবেন।
দ্বিতীয়ত, সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার কোনো জায়গা নেই। ডাম্পিং স্টেশন করা খুব দরকার। এটা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেবো। তবে এই সমস্যাটা শুধু নারায়ণগঞ্জে না, সারাদেশেই রয়েছে। সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ফেলার স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছি, কিন্তু অর্থের কারণে মানে জমির মূল্যবাবদ অর্থ দিতে না পারায় জমিটি পাইনি। তবে এখন আমরা নতুন পরিকল্পনা ছয় মাস আগে জমা দিয়েছি। সরকারি প্রক্রিয়ায় সব শেষ করে দ্রুতই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হবে। এটি হলে ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থায়ী সমাধান হবে।
আমাদের দুটি অস্থায়ী ডাম্পিং স্পট রয়েছে, এর কারণে মানুষের সমস্যা হচ্ছে এটা ঠিক। তবে আমি মনে করি, নারায়ণগঞ্জবাসী এটি মেনে নিয়েছে। কারণ, তারা দেখছে আমি রাত-দিন পরিশ্রম করেছি নারায়ণগঞ্জকে একটি আধুনিক সবুজ শহরে পরিণত করার জন্য।
এবং তৃতীয়ত অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করবো। কারণ, অনেক কাজ বাকি আছে, সেগুলো সম্পন্ন করব।
নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন হ্যাটট্রিক জয়ে কাজের পুরস্কার আইভীর, এবার না’গঞ্জবাসী চায় ব্রিজ
চলমান কাজগুলো শেষ করাই আমার তিনটি প্রধান কাজের একটি। যেমন, নারায়ণগঞ্জ শহরের বুক চিরে বাবুরাইল খাল নামে একটি খাল প্রবাহমান আছে। এটা শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীর সঙ্গে যুক্ত। এটাকে সুন্দর করে সাজাতে চাই। ইতিমধ্যে এর জন্য ড্রয়িং হয়ে গেছে, দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। এ খালের উন্নয়নের জন্য আমরা এশিয়া জুরি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। এ কাজটি দ্রুত শেষ করবো। এছাড়া জিমখানা লেকের উন্নয়নের একটা কাজ চলছে, এটি শেষ করবো।”
গত ১৩ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা নারায়ণগঞ্জ শহরের টানা তিনবারের মেয়র (প্রথমবার পৌর মেয়র ছিলেন) আইভী সাংবাদিকদের আরও বলেন, “গত নির্বাচনে আমি বলেছিলাম অবৈধ দখলে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করব। এটি কিন্তু আমি করেছি। সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি যাদের দখলে ছিল তা কিন্তু উচ্ছেদ করেছি। এক্ষেত্রে আমি ৯৫শতাংশ সফল হয়েছি। এবার নির্বাচিত হলে আমি আয় বর্ধনে কিছু কাজ করতে চাই, যেখান থেকে আয় আসবে, আর সেই আয় দিয়ে সিটি করপোরেশন চলবে।
মোটকথা সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে যতগুলো খাল রয়েছে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে এবার আমার মূল লড়াই। এসব খালের পাশ দিয়ে ওয়াকওয়ে (হাঁটা রাস্তা), গাছ লাগানো, খালের পাশে মানুষের বসার স্থানসহ খালের বিউটিফিকেশন (সৌন্দর্যবর্ধন) করব। ইতিমধ্যে আমরা সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য খুবই ভালো মানের একটি পার্ক তৈরি করেছি। পার্কটি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে। এবার আমরা নিজেরা একটি পার্ক নির্মাণ করতে চাই, যা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।”
গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার ঘটনা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক ফেলেছে যার ধাক্কা লেগছে নাসিকের উন্নয়ন কাজেও। এ প্রসঙ্গে মেয়র আইভী বলেন, “সিদ্ধিরগঞ্জের নয়টা ওয়ার্ডের মধ্যে এক নাম্বার ওয়ার্ডটি পিছিয়ে আছে। জাইকার সঙ্গে কথা হয়েছিল। হলি আর্টিজানে হামলার কারণে ওরা একটু ভেঙ্গে পড়েছে। যেভাবেই হোক এই জায়গাটায় নজর দিতে চাই। গত নির্বাচনে বন্দরের উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। উন্নয়ণ করেছি। এবং আশা করি আপনাদের চোখে পড়েছে।
গতবারের নির্বাচনের সময় আমি বলেছিলাম আমাদের সিটি প্ল্যান নেই, এটা সত্য। সারা দেশের বড়, ছোট, মাঝারি শহরগুলোর সিটি প্ল্যান নেই। এবার কিন্তু সেই প্ল্যানগুলো করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাপানের সরকারি সাহায্য সংস্থা জাইকা এই সিটি মাস্টারপ্ল্যান করে দিচ্ছে। রাজউকের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি শহরের কোথায় কতটুকু জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে আমরা সেটি কার্যকর করার চেষ্টা করবো।”
দীর্ঘ বক্তব্যের শেষপর্যায়ে সিটি করপোরেশনের ভোটারদের উদ্দেশ্যে আইভী বলেন, “বিগত পাঁচ বছরে আমাকে দেখেছেন, এর আগে আট বছর আমাকে পৌরসভায় দেখেছেন, আমি ইমানের সহিত দায়িত্ব পালন করেছি। আমি আমার কাজটাকে ইবাদত মনে করেছি। কখনো মিথ্যা বলিনি। আমার সরকার ক্ষমতায় ছিল, বিগত আট বছর ক্ষমতায় আছে, এর পরও প্রচণ্ড প্রতিকূলতার সঙ্গে আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করেছি।
প্রতিকূলতার মাঝেও আমি জনগণের কাছাকাছি পৌঁছার চেষ্টা করেছি, তাদের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। এবারো আমার সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। জনগণ যেন আমার এই চেষ্টাকে মূল্যায়ন করে। আমাকে বিজয়ী করে তারা মাননীয় প্রধামমন্ত্রীর মান রেখেছেন এজন্য তাদের আমি ধন্যবাদ ও কতৃজ্ঞতা জানাই। বিগত দিনে তারা যেভাবে আমার পাশে থেকে আমাকে মানসিক শক্তি যুগিয়েছে, আমার বিশ্বাস- আগামী পাঁচ বছরও তারা আমার পাশে থাকবে।
আমিও নগরবাসীর সঙ্গে আছি, থাকবো। আর আমি আমার আগের অবস্থান থেকে নড়িনি, নড়বোও না।”
ব্যক্তিজীবন
আলী আহাম্মদ চুনকার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। ১৯৭৯ সালে ট্যালেন্টপুলে জুনিয়র বৃত্দি পান এবং ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় স্টারমার্কসহ উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯৮৫ সালে রাশিয়ান সরকারের বৃত্তি পান। ১৯৮৬ সালে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওদেসা নগরের পিরাগভ মেডিকেল ইনস্টিটিউটে। ১৯৯২ সালে সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্ন সম্পন্ন করেন।
শিক্ষা জীবনের পর ১৯৯৩-৯৪ সালে মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৯৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলেন আইভী। ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাজবাড়ী নিবাসী কাজী আহসান হায়াতের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী কাজী আহসান হায়াৎ বর্তমানে কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে নিউজিল্যান্ডে কর্মরত আছেন। পারিবারিক জীবনে তিনি কাজী সাদমান হায়াত সীমান্ত ও কাজী সারদিল হায়াত অনন্ত নামে দুই পুত্র সন্তানের জননী। সীমান্ত ১৯৯৮ সালের ৫ মে ও কাজী সারদিল হায়াত অনন্ত ২০০২ সালের ২০জুন জন্মগ্রহন করে।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে
- ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র আশ্রমের সেবককে কুপিয়ে হত্যা
- পরকীয়া, গোয়েন্দাগিরি আর ব্ল্যাকমেলিংয়ের জটিল কাহিনী
- পুলিশ ঘটনার শেষে নয়, আগেও আসে তাহলে!
- গাছের পাতা চুরি: রংপুরে বেগম রোকেয়া কলেজে তুলকালাম
- টেকনাফে সোয়া লাখ ইয়াবা উদ্ধার
- ত্রিশালে ‘অলৌকিক পানি’, ১৪৪ ধারা জারি
- সবুজ পাতার খামে হেমন্তের চিঠি
- সীমান্তরক্ষায় বিজিবিতে এবার নারী
- আধমণের হরিণ গিলে খেল পনের ফুটের অজগর (ভিডিও)
- শিকলে বাঁধা বাকপ্রতিবন্ধী ছেলের জন্য কেঁদে মরছেন মা-বাবা
- জামিন নামঞ্জুর, মানিকগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা তাপস সাহা জেলহাজতে
- ছাগলনাইয়ার ‘উভয় পক্ষের লোক’ যুবলীগ নেতা ফারুক!
- নয়াপল্টনে হঠাৎ ড্রোন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক!
- বৃদ্ধ বাবাকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল, মেয়ে আটক
- ব্যবসায়ী সাইফুল সাভারে মুক্ত

জমঈয়ত শুব্বানে আহলে হাদীস এর উদ্যোগে তাফসিরুল কুরআন মাহফিল
মুশফিকের শততম টেস্টে হামজার বিশেষ বার্তা
‘ফাঁদে পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অনেক বাংলাদেশি’
ভারতকে হারিয়ে ফিফা থেকে সুখবর পেল বাংলাদেশ