ঢাকা, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

এ যেন দুবাই শহর

ফরিদপুর সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০০:২৭, ১২ জুন ২০২১  

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে

ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে

ফরিদপুর জেলার গ্রামীণ জনপদ ভাঙ্গায় গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক এই নিদর্শনটি দেখে মনে পড়ে যাবে দুবাইয়ের কথা। বা মনে হতে পারে ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা উন্নত কোনো বহির্বিশ্বের চিত্র। তবে এটি বহির্বিশ্বের কোনো চিত্র নয়। বলা হচ্ছে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কথা।

এশিয়ান হাইওয়ে করিডর-১ এর অংশ এই এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। সদ্যনির্মিত এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে এখন সময় লাগছে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সময় লাগে ২৭ মিনিট। অবশ্য এখনই ঢাকা থেকে সরাসরি ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে না। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এই সুফল পুরোপুরি ভোগ করা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১২ মার্চ বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সদর এখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার। এ প্রবেশদ্বার দিয়ে পশ্চিম দিকে রাস্তা চলে গেছে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনা-বেনাপোল পর্যন্ত। দক্ষিণে মাদারীপুর, বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর সাগরসৈকত কুয়াকাটা, উত্তরে ফরিদপুর শহর হয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে।

পূর্বে মাদারীপুর হয়ে পদ্মা সেতু পার হলেই মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিটে ঢাকা। অবশ্য পদ্মা সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত এই সুবিধা পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যাবে না।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৬ হাজার ২৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরুর পর পরবর্তীতে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৮৯২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর বাইরে মূল প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এমন কিছু কাজের জন্য পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জুনে চার হাজার ১১১ কোটি টাকার আরেকটি পৃথক ডিপিপি অনুমোদন করে সরকার। এই ডিপিপি অনুযায়ী কাজের মেয়াদ ধরা হয় জুনের ২০২০ সাল পর্যন্ত। দুটি ডিপিপি মিলিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা।

আট লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)।

সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং মুন্সিগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তফা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম অগ্রাধিকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের নান্দনিক এই সড়ক মোড়টি ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হলে এই মোড় ব্যবহার করে জেলাগুলো সরাসরি যুক্ত হবে রাজধানীর সঙ্গে। এতে সংযোগ সৃষ্টি হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র মোংলা, পায়রা ও বেনাপোল বন্দরের। সড়কের পাশাপাশি তৈরি হবে রেল যোগাযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে ভাঙ্গার মোড়টি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় গত বছরের এপ্রিলে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে রয়েছে ২৫টি ছোট ও চারটি বড় সেতু, ১৯টি আন্ডারপাস, ৫৪টি কালভার্ট, চারটি রেলওয়ে ওভারব্রিজ, পাঁচটি ফ্লাইওভার ও দুটি ইন্টারচেঞ্জ। ভাঙ্গা মোড়ে চারটি আন্ডারপাস, একটি ফ্লাইওভার ও চারটি পৃথক লেন রয়েছে।

ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ এবং আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর তিনটি বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণ হয়েছে আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও ভাঙ্গা ফ্লাইওভার। এছাড়া জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস ও তিনটি ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ও ভাঙ্গায়। এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তে দুটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। দ্রুতগতির গাড়ি চলবে এক লেন দিয়ে, ধীরগতির গাড়ি অন্য লেনে। লেন ভুল করলে ঘুরে আসতে হবে অন্তত ১০ কিলোমিটার।

এক্সপ্রেসওয়েটি রাজধানীর পোস্তগোলা থেকে মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার। আর নদী পার হয়ে শরীয়তপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। মাঝের প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার পদ্মা সেতু যুক্ত করবে দুই পাশকে। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যেতে সময় লাগবে ৪০-৪৫ মিনিট, যা এখনো লাগছে আড়াই-তিন ঘণ্টা। আগে লাগত পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা।

আরও পড়ুন
স্বদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত