ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫
সর্বশেষ:

‘জোকার’ নয় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য খুলে গেল সাদা বাড়ির দরজা

নিউজওয়ান২৪.কম রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ৯ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১২:২৫, ১০ নভেম্বর ২০১৬

নির্বাচন ঘিরে প্রচারিত অসংখ্য কার্টুনের একটি। এতে ট্রাম্পকে ভাঁড় ও নারীবিদ্বেষী আর হিলারিকে রাণীর ন্যায় যোগ্য ও নারীবান্ধব হিসেবে দেখানো হয়েছে

নির্বাচন ঘিরে প্রচারিত অসংখ্য কার্টুনের একটি। এতে ট্রাম্পকে ভাঁড় ও নারীবিদ্বেষী আর হিলারিকে রাণীর ন্যায় যোগ্য ও নারীবান্ধব হিসেবে দেখানো হয়েছে

সর্বশেষ ফল: ট্রাম্প ২৭৬, হিলারি ২১৮

‘বহুরূপী সেজে কেউ জিতে নেয় বাজি
কেউ তবু বোঝে নারে সেই কারসাজি!’

অনেক আগে দস্যু বনহুর নামে বাংলা সিনেমার নায়কের কণ্ঠে শোনা গানের দুটি লাইন এটি। তবে অনেকদিন পরে মনে হচ্ছে এই লাইন দুটি সদ্য শেষ হওয়া মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গেও খাপ খায়। অরাজনৈতিক, ব্যবসায়ী এবং রগচটা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনেকেই হয়তো পাগল ঠাউরেছিলেন তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে।

এমনকি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারির সঙ্গে সরাসরি তিনটি বিতর্কেও তার বিভিন্ন আচরণকে জোকারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। বিতর্কে জয়ের রায় এসেছে মেধাবী পলিটিশিয়ান, আইনবিদ হিলারির পক্ষে। কিন্তু ট্রাম্প সাহেবের যেসব আচরণকে অনেকেই মূল্যায়ণ করেছিলেন খাপছাড়া পাগলামির নামান্তর হিসেবে, সেইসব ‘পাগলামি’ এখন অন্য অর্থ বহন করছে।

ট্রাম্প এই কায়দায় হিলারিকে বিভ্রান্ত করেছেন, জাগিয়ে তুলেছেন বৃহৎ মার্কিনিদের ভেতরকার অহংবোধ- তারা গোপনে-সন্তর্পণে যে ধারণা পোষণ করে সব সময়ে- দুনিয়ায় আমেরিকাই হবে শেষ কথা, আমেরিকাই হবে সর্বেসর্বা, ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই অবদমিত অহমিকাকে জাগিয়ে তুলেছিলেন বৃহৎ স্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মাঝে। তার সামনে পানসে হয়ে গেছে হিলারির নারী ভোটের জোয়ার, তরুণ ভোটের জোয়ার, আফ্রো-এশীয় ভোটের জোয়ার, মুসলিম-ল্যাতিন সমর্থন।

জরিপওয়ালাদের নানান ফাঁক-ফোকড়ওয়ালা সংখ্যাতাত্ত্বিক মারপ্যাঁচের গালগল্পকে মনে করিয়ে দিয়ে বলা যায়- ট্রাম্প কিন্তু সেই সনাতন সাম্প্রদায়িক ইস্যুটাকে জাগিয়ে দিয়েছিলেন যাক দুনিয়ার অনেক বড় বড় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের নিয়ামক। তা হচ্ছে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা।

তিনি শুরুতেই সরাসরি মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য এবং বিভিন্ন ঘোষণা দিয়ে বৃহত্তর খ্রিস্টান ভোটারদের মনের গহীনে স্থান করে নেন। যদিও দিবালোকের মতো সত্য এই বিষয়টাকে প্রায় কোনো বিশেলষকেই স্বীকার করতে চায়নি। এই কায়দাটা মাত্র বছর দুয়ক আগে অনুসরণ করে ধন্বন্তরী ফল পেয়েছেন ভারতের নরেন্দ্র মোদি। চরম হিন্দু মৌলবাদী শিবিরের এই নেতা ভারতের প্রায় সর্বস্তরের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের, মানবাথিকারবাদীদের একাট্টা তৎপরতাকে অনেকটাই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তোলপাড় করা বিজয়ে ক্ষমতায় আসেন। তার অস্ত্রও ছিল মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতা।

ট্রাম্প তাই করেছেন- ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন আমেরিকান অহমিকাবোধের সাম্পদ্রায়িকতা, রক্ষণশীলতার সাম্পদ্রায়িকতা, স্বোতাঙ্গবাদী সাম্প্রদায়িকতা- সবগুলি গাছই বিষবৃক্ষ হলেও্র তাকে ফল দিয়েছে। এবং নির্বাচনী বাজারে এই ফল অন্য যে কোনো সুমিষ্ট-প্রগতিশীল ফলের সঙ্গেই এক দামে এক ওজনে এক গণনায় বিকোয়। অর্থাৎ ধনীর হোক আর গরীবের হোক- সব ভোটই তো সমান।

সুতরাং, ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডেকে যারা জোকারের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন এখন হয়তো তারাই সেই কাতারে নেমে গেছেন তার চাল ধরতে না পেরে। ট্রাম্প আসলে তার বাহ্যিক কর্মকাণ্ড দিয়ে ডেমোক্রেট শিবিকে বিভ্রান্ত করেছেন। ভেতরে ভেতরে তিনি ঠিকই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের মন জয় করে ফেলেছিলেন। এবং এটা তিনি বুঝতে দেননি প্রতিপক্ষকে।

সেই আনন্দেই হয়তো তার নানা জোকারি আচরণ দেখা গেছে। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, গত রাতেও (মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময়) ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণা শেষদিকে বলেন- এই নির্বাচন না জিতলে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হবে এটা। আর্থিক রাজনৈতিক সব দিক থেকেই। এটাকেও অনেকে তার জোকারি হিসেবে ধরেছিলেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার- ট্রমা্প দুনিয়ার একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী। আর একজন ব্যভসায়ী যখন এভাবে বলেন, তার অর্থ তিনি ‘নির্বাচনী ট্রেন্ডার’ জেতার নিশ্চয়তা নিয়েই তা বলতে পারেন। কারণ, এমন উঁচুদরের ব্যবসায়ী-বাজিগর অন্যের কাছে নিজের হার এভাবে মেনে নেন না। তারা হারের মধ্যেও বিজয়ের অঙ্কুর দেখেন।

সেই হিসাবের খেলোয়াড় ট্রাম্পই এখন বাসিন্দা হতে যাচ্ছেন হোয়াইট হাইসের, আপাতত আগামী চার বছরের জন্য।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

আরও পড়ুন
বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত