ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

অবশেষে কারামুক্ত রোহিঙ্গা নির্যাতনের সংবাদ প্রকাশকারী ২ সাংবাদিক

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ৭ মে ২০১৯  

নির্মম হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে ৫১১ দিন কারাভোগ করেন সংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সো

নির্মম হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে ৫১১ দিন কারাভোগ করেন সংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সো

রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর-পৈশাচিক নির্যাতন চালানোর খবর প্রচারকারী রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩৩) ও কিয়াও সো (২৯) মুক্তি পেয়েছেনপয়েছেন শেষ পর্যন্ত। শান্তিতে নোবেল জয়ী সুচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক বিভিন্নমহলের চাপে নতি স্বীকার করে শেষ পর্যন্ত তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে।

মিয়ানমারেরর রাখাইনের একটি গ্রামে নিরীহ ১০জন রোহিঙ্গাকে লাইন করে বসিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের করা সেই ঘটনার তথ্য ও চিত্র অনুসন্ধানী রিপোর্ট হিসেবে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সে প্রকাশ হয়। এতে ওই দুই সাংবাদিকের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয় তাদের দেশের সরকার।

আজ (মঙ্গলবার) দেশটির সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের কাছের একটি কারাগার থেকে তাদের মুক্দি দেওয়া হয়। মোট ৫১১ দিন কারাভোগের পর  ছাড়া পেলেন রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন তোলা ওই দুই সাংবাদিক।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দেশটিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের খবর প্রকাশ করায় রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলায় তাদের আটক করে জান্তা সরকারের পুলিশ। রাখাইনের গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করার খবর প্রচারের সূত্রে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া এবং কিয়াকে পাকড়াও করে দেশটির সামরিক জান্তারা প্রহসনের বিচারে শাস্তি দেয়। তাদের বিরুদ্ধে 'রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস' করার অভিযোগ এনে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় ক্ষমতাসীন এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দেশের জান্তারা।

তাদের আটকের ঘটনাটি সারা বিশ্বে মিয়ানমারের শাসকদের নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ ও মুক্ত সাংবাদিকতার পথে বিরাট বাধা হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বের অনেক দেশের সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনেরাতাদের মুক্তির দাবিতে নিন্দা-বিবৃতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল। শেষ তক নানামুখী আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতিস্বীকার করে ওই সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে বাধ্য হলো মিয়ানমারের খুনী শাসকরা।

এদিকে, মুক্তি পেয়েই ওয়া লোনে সাংবাদিকদের বলেন, সত্য প্রকাশে কখনও পিছপা হব না। মিথ্যা অভিযোগে জেল-জুলুম আমাকে আমার নীতি থেকে টলাতে পারবে না। সব সময় আমি সত্যটাই বলে যাব। প্রসঙ্গত, ঝান্তা শাসিত মিয়ানমারের নববর্ষ উপলক্ষে কয়েক হাজার বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়। তাদের সঙ্গে এবার রয়টার্সের দুই সাংবাদিককেও মুক্তি দিল নেপিডো সরকার।

অপরদিকে, বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশের জন্য গত এপ্রিল মাসে ওয়া ও কিয়া সাংবাদিকদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন। রয়টার্সের নির্বাহী সম্পাদক স্টিফেন জে এডলার এ প্রসঙ্গে বলেন, দুই সাহসী সাংবাদিককে মুক্তি দেয়ায় আমরা যারপরনাই খুশি। সারা বিশ্বে তারা মুক্ত সাংবাদিকতার প্রতীক হয়ে থাকবেন।

প্রসঙ্গত, এ বছরের জানুয়ারিতে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ওয়া লোন ও কিয়াও সোর আপিল খারিজ করে দেন ইয়াঙ্গুন হাইকোর্ট। পরে জান্তা শাসিত দেশটির সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলেও সেখানেও প্রত্যাখাত হন তারা।

এমন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে দুই সাংবাদিককে ‘সাধারণ ক্ষমা’ করার আবেদন করেন তাদের স্ত্রীরা। চিঠিতে তারা বলেন, যদিও তারা কোনও অপরাধ করেননি, তবু পরিবারের কথা ভেবে যেন তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

এদিকে, দুই সাংবাদিকের মুক্তি বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য করেনি মিয়ানমার জান্তা কর্তৃপক্ষ বা অং সান সুকি।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত