ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:

মফস্বল সাংবাদিক নাজু... লড়তেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতেন না!

সৌরভ হাবিব

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২১ নভেম্বর ২০১৬  

সদ্য প্রয়াত সাইদুর রহমান নাজু                    -ফাইল ফটো

সদ্য প্রয়াত সাইদুর রহমান নাজু -ফাইল ফটো

ছোট বড় সবাই তাকে সাংবাদিক হিসেবেই চেনে। একদিন আমিও চিনলাম। ছোট বেলায় সব্জি বিক্রেতা প্রাইমারি স্কুলের এক বন্ধু দূর থেকে দেখিয়ে বললেন `ওই লোকটা সাংবাদিক। ভালো বেতন পায়, অনেক ক্ষমতা। আমার কাছ থেকে সব্জি কেনে। মাঝে মাঝে বাকীতেও সব্জি নেয়।`

অনেকটা গর্ব করেই সেদিনের ছোট্ট বন্ধুটা তার কাছ থেকে সব্জি কেনা সাংবাদিকের গল্প করছিলেন।

এভাবেই দূর থেকে চেনা। পরে ৯৮-৯৯ সালের দিকে পুঠিয়া থেকে সাংবাদিকতা শুরু করতে গিয়ে র সঙ্গে আলাপ হয়। সবসময় চাইতেন ভালো কোনো পত্রিকায় কাজ করতে। চেষ্টাও করতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতেন না। কখনো করতোয়া, কখনো আভাস, অপরাধ জগত, চিত্রবাংলা, ডেসটিনি, দৈনিক খবরসহ নানা পত্রিকায় কাজ করেছেন। পেশার প্রতি এতটাই মনোযোগী ছিলেন যে, আমাদের মতো যারা ছোট মানুষ- তাদের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় নামতেন।

তার বাড়ি উপজেলা সদর থেকে বেশ ভেতরে। বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা জমতো। সবকিছু মাড়িয়ে খুব সকালে তিনি বাড়ি থেকে পুঠিয়া সদরে আসতেন। রাস্তা পাকা হবার আগে একটি জং ধরা সাইকেল ছিলো তার বাহন। পরে অবশ্য দেখতাম ভ্যানের সামনে চালকের পাশে বসে আসছেন সাইদুর রহমান নাজু।

আমার জানা মতে, তিনি কখনোই দুপুরের খাবার খেতেন না। চা-বিস্কুট খেয়ে কাটিয়ে দিতেন সারাদিন। কারণ, তিনি সাংবাদিক, সবাই তাকে চেনে, বেতন না পেলেও সবাই সমীহ করে, তাই হয়তো তিনি পরিচয়টা মুছে ফেলতে চাননি।

ঘাড়ে একটি ব্যাগ কিংবা হাতে একগুচ্ছ ম্যাগাজিন নিয়ে তিনি পুঠিয়ার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত হাঁটা চলা করতেন। এক চা-স্টল থেকে আরেক চা-স্টলে আড্ডা দিতেন। তিনি মানুষের নজর কাড়ার জন্য সবার সামনে সংবাদ লেখা কিংবা প্রভাবশালী কারো বিরুদ্ধে লেখা সংবাদ ম্যাগাজিন উচ্চস্বরে পড়ে শোনাতেন। তার এ ধরনের সাহসিকতা তখন সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তো। এ থেকে বিড়ম্বনায়ও পড়তেন। একবার এক আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমানকে খুব মারপিট করলেন। তার মোবাইল ফোনটি মাটিতে আছড়ে ভেঙে দিলেন। কেউ তাকে বাঁচাতে এলেন না। সবাই তাকিয়ে দেখছেন। আমার বাবা এবং আমি দুজনই দৌড়ে গিয়ে সেদিন রক্ষা করি সাইদুর রহমানকে।

সাংবাদিকতা জীবনের শত সমালোচনার মাঝেও তার কঠোর পরিশ্রম আমাকে আশার আলো দেখাতো। একটি মানুষ পেশার প্রতি কতোটা নিবেদিতপ্রাণ হলে সারাজীবন দুপুরে অনাহারে থাকতে পারেন! কিংবা সারাজীবন একটি ভালো মিডিয়ায় চাকরির জন্য পরিবার ছেড়ে বছরের পর বছর দুরে থাকতে পারেন?

শুধু তাই নয়, মৃত্যুর আগের দিনগুলোতেও তিনি ঢাকায় থেকে চেষ্টা করেছেন একটি ভালো মিডিয়ায় চাকরির। আমি নিশ্চিত সেখানেও তিনি অবহেলা করেছেন খাবারকে, ঠিকমমো বেতন না থাকায় হয়তো নিজের যত্নও নিতে পারেননি। তাই হয়তো অকালে তাকে চলে যেতে হলো। সাংবাদিক সাইদুর রহমান নাজু ব্যক্তিগতভাবেও ছিলেন সরলপ্রাণ একজন মানুষ।

তার প্রতি শ্রদ্ধা। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

লেখক: দৈনিক সমকাল ও ডিবিসি নিউজ চ্যানেলের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

আরও পড়ুন
স্বদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত