ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫
সর্বশেষ:

‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’ মেনে চল: ভারতীয় সেনাকে সুপ্রিম কোর্ট

বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৯ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ১১:৪৯, ১৭ জুলাই ২০১৬

দিল্লিতে আফস্পা বিরোধী প্রচারণা    -ফাইল ফটো

দিল্লিতে আফস্পা বিরোধী প্রচারণা -ফাইল ফটো

মানবাধিকার সংগঠনগুলির দাবির পক্ষে অবশেষে ভারতের শীর্ষ আদালতের আদেশ এসেছে।

গত শুক্রবার এক রায়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সেনাবাহিনী বা আধাসামরিক বাহিনী কোনোভাবেই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বা প্রতিশোধমূলক আচরণ করতে পারবে না দেশের কোনো এলাকার জনসাধারণের ওপর। তা সে যতোই জঙ্গি উপদ্রুত এলাকা হোক না কেন কিংবা সেখানে ‘আফস্পা আইন’ বলবৎ থাকুক না কেন।

রায়ে বলা হয়- সন্দেহ হলেই কাউকে হত্যা করা চলবে না।
রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেন, গত দু’দশকে মণিপুরে দেড় হাজারের বেশি সাজানো সংঘর্ষে হত্যার যেসব অভিযোগ উঠেছে, তার প্রত্যেকটির তদন্ত করতে হবে। অভিযোগের সত্যতা মিললে আদালতে তার বিচারও হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান সেনা অভিযান ও সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে ১০ দফা নীতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন জওয়ানদের। তবে পরবর্তীতে অনেক ক্ষেত্রেই তার ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়। সেনাদের কাছে ‘টেন কম্যান্ডমেন্টস’ নামে পরিচিত সাবেক সেনাপ্রধানের ওই দশ নীতি-নির্দেশিকা মেনে চলতেও এদিন নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ভারতের মণিপুর রাজ্যসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ এবং জম্মু-কাশ্মীরেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। এই কাজে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বা ‘আফস্পা’। ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে বারবার এ অভিযোগ উঠেছে যে আফস্পা আইনকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গি সন্দেহে ভুয়া সংঘর্ষ বা এনকাউন্টারে অসংখ্য নিরীহ নারী-পুরুষদের হত্যা করা হয়েছে যেসবের কোনো তদন্ত বা বিচার হয়নি।

উল্লেখ্য, মণিপুরে ভুয়া সংঘর্ষে ১৫২৮টি হত্যার ঘটনাকে একত্র করে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যালার্ট’ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল তিন বছর আগে। শীর্ষ আদালত এর মধ্য থেকে ছয়টি ঘটনার তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ের নেতৃত্বে কমিশন গঠন করে। সেই হেগড়ে কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ছয়টিই ছিল ভুয়া বা সাজানো সংঘর্ষের ঘটনা!

সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি মদন বি লোকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সংবিধানের ৩২-তম অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে বিচার পাইয়ে দিতে এসব ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।

বেঞ্চের রায়, সামরিক বাহিনীর নিয়মাবলীতে ‘কী করা যাবে কী করা যাবে না’- তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই সেই নিয়ম ভাঙা যায় না। জওয়ানরা ভারতীয় দণ্ডবিধির ঊর্ধ্বে নয়।
মণিপুর থেকে আফস্পা প্রত্যাহার ও ভুয়া সংঘর্ষে হত্যায় জড়িতদের সাজার দাবিতে লড়াই চালানো মানবাধিকার সংগঠনগুলির কাছে এই রায় নৈতিক জয়। যদিও তারা মনে করছে, এটি কোনোভাবেই দোষী জওয়ানদের সাজা বা আফস্পা প্রত্যাহারের বিকল্প নয়।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বন্দি ইরম শর্মিলা চানুর হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া তার ভাই ইরম সিংহজিৎ বলেন, আদালতের রায়ে দিদি খুশি। তবে আফস্পা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তার অনশন চলবে। মণিপুরে আফস্পার নামে যা হচ্ছে, বাকি দেশ কিছুটা হলেও তার আঁচ পেল।

আফস্পার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী মানবাধিকার কর্মী বীনালক্ষ্মী নেপ্রামের আশা, এবার হয়তো আফস্পা প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু মামলার মূল বাদী মানবাধিকারকর্মী বাবলু লইতংবাম এখনও বিশ্বাস করেন না যে এর পরেও জওয়ানদের আচরণে বদল আসবে।

১৯৫৮ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতে আফস্পা চালু হয়। তখন থেকেই আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম লাগোয়া মেঘালয়, মিজোরাম, অরুণাচলের বিভিন্ন অংশে আফস্পা বলবৎ আছে। ত্রিপুরা গত বছর আফস্পা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত (শিখদের খালিস্তান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে) পঞ্জাব-চণ্ডীগড়েও আফস্পা বলবৎ ছিল। ১৯৯০ থেকে জম্মু-কাশ্মীরে আফস্পা বলবৎ রয়েছে।

এদিকে, মণিপুরের মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্যে গত ৫৮ বছরে নিছক সন্দেহের বশে নিরাপত্তা বাহিনী হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে খুন করেছে। নিহতদের পরিবার কোনো বিচার বা ক্ষতিপূরণ পায়নি। ২০০০-এর ২ নভেম্বর মালোম গ্রামে ১০ জন গ্রামবাসীকে খুনের অভিযোগ ওঠে জওয়ানদের বিরুদ্ধে। সেই থেকে অনশন শুরু ইরম শর্মিলা চানুর। যিনি এখন বন্দি এবং অসুস্থ অবস্থায়ও অনশন-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০০৪-এর ১০ জুলাই টি মনোরমাকে গণধর্ষণের পর গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে সেনার বিরুদ্ধে। তার প্রতিবাদে কাংলা দুর্গের সামনে নগ্ন হয়ে মিছিল করেন মহিলারা।

সাদা ব্যানারে ‘ইন্ডিয়ান আর্মি রেপ আস’ লিখে কাংলা দুর্গের সামনে মণিপুরের মায়েদের নগ্ন প্রতিবাদের ঘটনাটা ঘটে এসময়েই। ১২ বছর আগে সেই ঘটনার ছবি নিয়ে দুনিয়া তোলপাড় হয়েছিল। তার পরেও এ ধরনের ঘটনা কমেনি বলেই অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয়। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

নিউজওয়ান২৪.কম/এএন

আরও পড়ুন
বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত