ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫
সর্বশেষ:

ক্রসফায়ার ‘ফিলিপাইন স্টাইল’: এবার জেলখানায় মেয়র হত্যা

অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ৬ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১৮:৪৬, ৯ নভেম্বর ২০১৬

নিহত মেয়র এসপিনোসা পুলিশ প্রধান রোনাল্দ দেলা রোসার সঙ্গে, গত আগস্টে আত্মসমর্পণকালে    -ফাইল ফটো

নিহত মেয়র এসপিনোসা পুলিশ প্রধান রোনাল্দ দেলা রোসার সঙ্গে, গত আগস্টে আত্মসমর্পণকালে -ফাইল ফটো

ফিলিপাইনে দিনকয়েকের ব্যবধানে আরেক মেয়র নিহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে। যদিও এটাকে বলা হচ্ছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ তবে এবারকার ঘটনাটি ঘটেছে জেলখানার নিরাপদ পরিবেশের ভেতরে।

গত শনিবার ভোরের আগে নিহত এই মেয়রের নাম রোলান্দো এসপিনোসা। তিনি মধ্যাঞ্চলীয় লেইতে প্রদেশের আলবুয়েরা শহরের মেয়র ছিলেন। খোদ দেশের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের ‘ড্রাগ লিস্ট’-এ ছিল তার নাম।

ফিলিপাইন পুলিশ জানায়, লেইতের বেবে শহরের প্রাদেশিক জেলখানার ভেতরে চালানো মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকালে সেখানে বন্দি মেয়র রোলান্দো ও তার এক সঙ্গী পুলিশের ওপর গুলি ছোড়ে। পাল্টা গুলিতে তারা দুজনই নিহত হয়।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ  আরও পড়ুন কথা রাখছেন প্রেসিডেন্ট দুতার্তে: ফিলিপাইনে এবার মেয়রসহ নিহত ১০

কড়া নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর জেলখানায় বন্দি অবস্থায় মেয়র রোলান্দো ও তার সঙ্গীর হাতে কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছালো? আর তা সম্ভব হলেও কোন বাস্তবতায় তা দিয়ে একদল সশস্ত্র পুলিশের ওপর হামলা চালালেন, তাও কারাবন্দি অবস্থায়- এ প্রশ্ন অনেকে তুলেছেন। কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা ও একজন অপরাধ-বিরোধী পর্যবেক্ষক এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

এ ঘটনা ফিলিপাইনি পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে উল্লেখ করে দেশটির সাবেক পুলিশ প্রধান সেন পেনফিলো ল্যাকসক বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে শুধু বলতে পারি- এখানে আমি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের গন্ধ পাচ্ছি।

সাম্প্রতিককালের সন্দেহজনক এসব হত্যাকাণ্ড দেশে পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতাকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। গত সপ্তাহেই এই পুলিশ অপর একটি শহরের মেয়ের সামসুদিন দিমাউকমকে তার নয়জন সঙ্গিসহ হত্যা করেছে।

তবে নিহত মেয়র এসপিনোসা এবং মেয়র সামসুদিন- দুজনেরই নাম ছিল প্রেসিডেন্ট দুতার্তের ‘ছিছি প্রচারণা’র (শেম ক্যাম্পেইন) তালিকাভুক্ত ১৫০ অপরাধীর মধ্যে। এসপিনোসার ছেলে কেরউইন একজন কুখ্যাত মাদকসম্রাট। গত মাসে আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্টের নিজের করা মাদকসন্ত্রাসীদের তালিকায় এসপিনোসার নাম আসার পর গত আগস্টে দেশের পুলিশ প্রধানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। ওই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান দেশজুরে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তবে কিছুদিন পরে তিনি মুক্তি পান। কিন্তু মাদক ও অবৈধ অস্ত্র রাখার মামলায় সাজা ঘোষণা হলে গতমাসে ফের গ্রেপ্তার হন। এছাড়া আগস্টেই এসপিনোসার বাড়ির বাইরে তার ছয়জন সমর্থককে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন মাদক-সম্রাটকে অফিসে ডেকে হত্যার হুমকি দিলেন প্রেসিডেন্ট! 

পুলিশি হিসেবেই প্রেসিডেন্ট দুতার্তে গত ৩০ জুন ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৬০০ মাদক ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে বাস্তবের হিসাব আরও বেশি, এমনকি চার হাজারেরও বেশি বলে মনে করেন অনেকে। 

বর্তমানে ৭১ বছর বয়সী ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তে নিজেও একজন মেয়র ছিলেন। তিনি দক্ষিণাঞ্চলের মিন্দানাওয়ের দাবাও শহরের মেয়র থাকাকালেও অনেক মাদক সন্ত্রাসী নিহত হয় ওই শহরে। বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ক্ষমতায় আসার আগেই দুর্তেতেকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছিল ‘দ্য পানিশার’ (জনাব শাস্তিদাতা) শিরোনামে।

তবে মাদকের বিরুদ্ধে এমন কঠোর-কড়াল অভিযানের সমালোচনা করে পাল্টা সমালোচনার শিকার হছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ পশ্চিমা অনেক দেশের সরকার। দুতার্তের এই সমালোচনায় বাদ যায়নি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী বিরাজমান এমন এক দানবের বিরুদ্ধে আমি লড়ছি যা রাজনীতিকে করে ফেলছে কলুষিত পুঁতিগন্ধময়, এমনকি সেনাবাহিনীর জেনারেলদের পর্যন্ত দুর্নীতিবাজে পরিণত করছে। এই দানব দেশকে লাতিন আমেরিকার কিছু দেশের মতো ‘মাদক রাষ্ট্রে’ (নারকো স্টেট) রূপান্তরের শংকা তৈরি করেছে।

বর্তমানে ফিলিপাইনে মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। সিবিএসনিউজ, আলজাজিরা
নিউজওয়ান২৪.কম/একে

আরও পড়ুন
বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত