ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

পাকিস্তানের মাটিতে কড়া হামলা চালাতে চায় ভারতীয় সেনা

সার্ক অঞ্চল ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১৮:৩৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জরুরি পরিস্থিতিতে তৎপর ভারতীয় সেনা   -ফাইল ফটো

জরুরি পরিস্থিতিতে তৎপর ভারতীয় সেনা -ফাইল ফটো

গত রোববার কাশ্মিরের উরিতে ভারতীয় আর্মিবেসে হামলা চালিয়ে ১৮ সেনাকে হত্যা করে সন্দেহভাজন স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। প্রথমদিকে অবশ্য ১৭ জন সেনা নিহতের খবর পাওয়া গিয়েছিল। একই ঘটনায় সন্দেহভাজন ৪ বিচ্ছিন্নতাবাদীও নিহত হয়েছে।

এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ আর প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে ভারতীয় সশ্রস্ত বাহিনী। তারা মনে করছে পাকিস্তানই ওই হামলার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে। ভারতীয় সেনা কমান্ডাররা চাইছেন পাকিস্তানি সীমানার ভেতরে অভিযান চালাতে। পাকিস্তানের সঙ্গে ৭৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এলওসি (নিয়ন্ত্রণ রেখা) বরাবর এলাকায় অস্ত্রের ভাষায় কড়া জবাব দিতে চাচ্ছে তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হতে পারে।

নবভারত টাইমস জানায়, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি বড় অংশ পাকিস্তানি সীমান্তে পাল্টা হামলা চালানোর পক্ষে। এই পক্ষের মতে- পাকিস্তানি সীমানার ভেতর সীমিত আকারে হলেও কড়া হামলা চালানো হোক।

এনবিটি সোমবার সকালে জানায়, এ অবস্থায় ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ প্রতিরক্ষীমন্ত্রী মনোহর পাররিকরের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করছেন যাতে উপস্থিত আছেন বিএসএফ এবং সিআরপিএফের ডিজি, গোয়েন্দা সংস্থা র-এর শীর্ষকর্তা ও আইবিসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোর বড় কর্তারা। ধারণা করা হচ্ছে এই বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠিন সামরিক ব্যবস্থার বিষয় আলোচিত হবে।

ভারতীয় সরকারি সূত্রের বরাতে এনবিটি জানায়, এলওসি বরাবর মোতায়েন করা ভারতীয় আর্মি ব্যাটালিয়নসমূহ এবং ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে থাকা এয়ারবেসকে ‘ফুল অ্যালার্টে’ রাখা হবে যাবে যে কোনো হামলার তাৎক্ষণিক কড়া জবাব দেওয়া যায়।

এর সমান্তরালে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনেকেই মনে করছে- পাকিস্তানের সঙ্গে চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু করা হবে কি না- এ বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার যাতে করে পাকিস্তানকে বোঝানো যায় যে- অনেক হয়েছে, আর না। একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, আর কতদিন আমরা ২৬/১১ থেকে নিয়ে পাঠানকোট হামলা পর্যন্ত কড়া জবাব না দিয়ে সব আক্রমণ সহ্য করতে থাকবো? আমাদের রক্ষণাত্মক নীতি-ই বাস্তবে পাকিস্তানি সেনা আর আইএসআইকে দুঃসাহসী কর তুলছে।

এদিকে, ঘটনার পেছনে ইন্ধনদাতা হিসেবে পাকিস্তানকে দায়ি করেছেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে টুইটারে মন্তব্য করেছেন।

তবে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেশটির পররাষ্ট্র মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, কোনো তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত তাৎক্ষণিক অভিযোগ তুলেছে। আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি।

অপরদিকে, আজ সোমবার শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনকে সামনে রেখে প্রতিবেশী শত্রুভাবাপন্ন দুটি রাস্ট্রের কঠোর বাগযুদ্ধ দেখার অপেক্ষায় এখন সারাবিশ্ব।

পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ডন প্রকাশিত খবরে বলা হয়- অধিবেশনে যখন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ভাষণ দেবেন তখন জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে বালুচরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে যাতে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ভারত।

পাকিস্তান জাতিসংঘ অধিবেশনে তুলে ধরতে চাইবে যে ভারত জোর করে কাশ্মিরের একাংশ দখল করে আছে আর এর বিপরীতে ভারত তুলে ধরবে বালুচিস্তান ইস্যু- কারণ বালুচরাও স্বাধীন হতে চাইছে যাতে আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন। দুই পক্ষে চাল দেওয়ার জন্য দাবার ঘুঁটির অবস্থান মোটামুটি এই।

একই সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই চাইছে চলমান ঘটনাবলীর পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে টানতে। তবে, দৃশ্যমান বাস্তবতায় বোঝা যাচ্ছে- এক্ষেত্রে মার্কিনিরা কোনো পক্ষেই ভিরতে চাইছে না।

গত জুলাই মাসে ভারতীয় পুলিশের গুলিতে হিজবুত মুজাহিদিন নেতা আব্দুল বুরহান ওয়ানি হত্যাকাণ্ডের জেরে ভূস্বর্গ কাশ্মিরে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ আর হানাহানির সূত্রপাত হয়। মাত্র ২২ বছর বয়সে নিহত এই স্বাধীনতাকামী কাশ্মিরি ভারতীয় প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছিল। অবশ্য একসময় তাকে ভারতীয় এজেন্টও বলা হতো। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বুরহানকে হত্যা করে যতটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাইছিল দিল্লি- তা যে আর হয়ে ওঠেনি এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

 

বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত