ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

হীরক কথন!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৯, ২ অক্টোবর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

হীরা বলতে গেলে নিতান্তই এক টুকরো পাথর। কিন্তু নারীসঙ্গীকে যদি বিমোহিত করতে চান, তবে সবচেয়ে মূল্যবান উপহারটি হতে পারে এই হীরা। বড় হোক কিংবা ছোট, হীরের আবেদন কোনো নারী ফেলতে পারেন না। শুধুমাত্র সৌন্দর্যের বিচারেই নয়, হীরের উৎপত্তিস্থল, ঐতিহাসিক মূল্য, কাটার রকম ফের, কি ধরণের গয়নায় হীরক খন্ডটি বসানো হয়েছে তার উপর নির্ভর করে হীরার আর্থিক মূল্য। বিশ্বাস করুন সাড়া জীবনের সঞ্চয়ও কিন্তু লুণ্ঠিত হতে পারে যদি বিশ্ব সেরা কোনো হীরের মালিক হতে চান।

আজকের লেখায় তুলে ধরবো বিশ্ব সেরা কিছু হীরের হিরক কথন যা তাঁজ ও তক্তে এবং আপন জৌলুসে বাড়িয়েছে রাজা বা সম্রাট-এর মান। স্থান পেয়েছে রাজ মুকুট বা রাজদণ্ড। কখনো বা তা গহনায় স্থান পেয়ে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করেছে কোনো তারকার সৌখিনতা। চলুন তবে শুরু করা যাক-

বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরক খণ্ড:

1.হীরক কথন!

বিশ্বের বৃহত্তম হীরা কোনটি? এ নিয়ে রয়েছে হাজারো তর্ক। রত্ন ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরাটি আবিষ্কৃত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিশাল কুলিনান হীরক খনিতে। সেখান থেকে পাওয়া হীরাগুলোর মধ্যে থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা ‘কুলিনান’। যার ওজন ৩ হাজার ১০০ ক্যারেটের বেশি। ১৯০৫ সালের ২৬শে জানুয়ারি, কুলিনান আবিষ্কৃত হয়। যতটুকু জানা যায় কুলিনান হীরক খণ্ডটিকে ৯টি খন্ডে ভাগ করা হয়েছিলো যা ১ম কুলিনান হতে ৯ম কুলিনান হিসেবে পরিচিত। নয়টি বৃহত্তম হীরক খন্ডই ব্রিটিশ ক্রাউন জুয়েল হিসেবে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সংগ্রহে রয়েছে।

প্রথম কুলিনান আফ্রিকার স্টার হিসাবে পরিচিত। ৫৩০.২০ ক্যারেট ওজনের হীরাটি ৫২৪ ক্যারেট এর গোল্ডেন জুবিলী হীরা আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পালিশড হীরা ছিল যা প্রিমিয়ার খনিতে পাওয়া যায়। কিং এডওয়ার্ড ক্রাউন জুয়েলের অংশ হিসাবে তা রাজদণ্ডে স্থাপন করেন। এটি এখন লন্ডনের টাওয়ারে প্রদর্শিত হয়। দ্বিতীয় কুলিনান ৩১৭.৪০-ক্যারেট কুশন-কাটা পাথর যা ব্রিটিশ রাজমুকুটের ব্যান্ডে সাজানো এবং লন্ডন টাওয়ারে ক্রাউন জুয়েল হিসেবে স্বীকৃত। কুলিনান তৃতীয়টি ৯৪.৪০ ক্যারেটের ওজনের একটি মুক্তা আকৃতির হীরক এবং রাণী মেরির মুকুটে সজ্জিত। এটি কুলিনান চতুর্ভুজ যা দুল হিসেবে পরিধান করা যেতো। প্রায়ই রাণী মেরিকে এটি পরিধেয় অবস্থায় দেখা যেতো। এমনকি রাণী এলিজাবেথও এই পাথর পরিধান করতে দেখা যায়। কুলিনান চতুর্থ ৬৩.৬০ ক্যারেট কুশন আকৃতি মূলত রাণী মেরির মুকুটের ব্যান্ডে সেট করা হয়েছিলো।

পঞ্চম কুলিনান একটি ত্রিভুজ-মুক্তাকৃতির হীরে। যার ওজন ১৮.৮০ ক্যারেট। এটি মূলত কোহ-ই-নূরের প্রতিস্থাপন হিসাবে রাণী মেরির মুকুটে স্থাপিত ছিলো। ১৯৩৭ সালে এলিজাবেথ (এখন কুইন মাদার) এর জন্য তৈরি করা নতুন মুকুটটিতে বসার জন্য কোহ-ই-নূরকে যখন সরানো হয়েছিল তার বিপরীতে কুলিনান ৫ম ব্যবহৃত হয়। কুলিনান ষষ্ঠ ১১.৫০ ক্যারেটের মার্কুইজ পাথর যা রাজা এডওয়ার্ড তার স্ত্রী রানী আলেকজান্দ্রাকে উপহার দেন। সপ্তম কুলিনান ৮.৮০ ক্যারেটের মারকুইজ পাথরের কুশন কাট ছোট হীরার ব্রোচের উপর একটি দুল হিসেবে রানী ২য় এলিজাবেথের সংগ্রহ শালায় রয়েছে।

2.হীরক কথন!

কুলিনান নবম ৪.৩৯-ক্যারেট পেয়ারা আকৃতির হীরের আংটি যা রাণী মেরির জন্য তৈরি করা হয়েছিলো। বর্তমানে রাণী ২য় এলিজাবেথ এটি পরিধান করে থাকেন। কুলিনান ডায়মন্ডের সবচেয়ে বড় পালিশ করা মণিটি ‘কুলিনান আই’ নামে পরিচিত। একে আফ্রিকার গ্রেট স্টার নামেও ডাকা হয়। ৫৩০.৪ ক্যারেট ওজনের হীরক খন্ডটি ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞীর রাজদন্ডে ক্রসের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, যা উল্লেখযোগ্য ব্রিটিশ ক্রাউন জুয়েলের মধ্যে একটি। মতান্তরে, কুলিনান মোটেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরক খন্ড নয়। যদিও ১৯০৮ সাল থেকে এই অবস্থানটি ধারণ করে রয়েছে। কুলিনান খুবই অল্প পরিচিত হীরক খন্ড গোল্ডেন জুবিলী’র কাছে আয়তন ও ওজনে হার মেনেছে। কথিত রয়েছে গোল্ডেন জুবিলী নামক হীরেটির পেছনে এক বড় রহস্যময় ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে যা থাইল্যান্ডের রাজ পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।

3.হীরক কথন!

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিমিয়ার খনিতে ১৯৮৬ সালে গোল্ডেন জুবিলী আবিষ্কৃত হয়। বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে এই খনিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরা নামে পরিচিত কুলিনানের জন্ম। আসলে ১৯৮৬ সালে প্রিমিয়ার খনিতে দুটি উল্লেখযোগ্য হীরা আবিষ্কৃত হয়, একটি গোল্ডেন জুবিলী এবং অন্যটি ২৭৩.৮৫ ক্যারেট এর হীরা ‘দ্য শেরেনারি’ যার মালিকানা ডি বিয়ারস কর্পোরেশনের। অসাধারণ পরিপূর্ণতার কারণে ‘দ্য শেরেনারি’ হীরাকে গ্রেড ডি’তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রঙ ও বর্ণহীন হীরাগুলোর জন্য সর্বোচ্চ গ্রেড হিসেবে গ্রেড ডি- কে বিবেচনা করা হয়। গোল্ডেন জুবিলী’র গল্প সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন ছিলো। গোল্ডেন জুবিলী’র প্রাথমিক নামকরণ করা হয় "অনাকাঙ্ক্ষিত বাদামী" নামে। কথিত রয়েছে শেরেনারি ডায়মন্ড কেটে ফেলার জন্য বিশেষ সরঞ্জাম এবং কাটিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। বিখ্যাত হীরা কর্তনকারী গ্যাব্রিয়েল টলকস্কিকে ডি বিয়ার্স কর্পোরেশন দ্য শেরেনারি কাটার বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়। গ্যাব্রিয়েল "গোল্ডেন জুবিলী’র উপর নিজের ডায়মন্ড কাটিং স্টাইল পরীক্ষা করেন।

4.হীরক কথন!

হীরক ব্যবসায়ীদের বিস্মিত করে টলকস্কি ৭৫৫.৫০ ক্যারেট এর "অনাহূত বাদামী" হীরক খন্ড থেকে ফায়ার রোজ কুশন কাট নামক ডায়মন্ড কাটিং স্টাইলে একটি অত্যাশ্চর্য হলুদ-বাদামী হীরার জন্ম দেন। সেই অত্যুজ্জ্বল বাদামি হীরাটির ওজন ছিল ৫৪৫.৬৫ ক্যারেট, যা কুলিনান ১ এর তুলনায় ১৫.৩৭ ক্যারেট বেশি। থাইল্যান্ডের হেনরি হো ১৯৯৫ সালে ডি বিয়ার্স থেকে বাদামি হীরেটি কিনে নেন। রাজত্বের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুল্যদেজ এর সম্মাননায় গোল্ডেন জুবিলী নামক অনুষ্ঠানে হীরাটি রাজাকে উপহার দেয়া হয়। রাজা ভূমিবল বাদামি হীরাটির নামকরণ করেন দ্য গোল্ডেন জুবিলী। তখন থেকেই গোল্ডেন জুবিলী থাইল্যান্ডের রাজ মুকুটের জহর অংশ এবং ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্রাসাদে সংরক্ষিত।

নিউজ ওয়ান২ ৪/জেডএস