ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

শয়তানের ত্রিভুজ সম্পর্কে জানেন কি?

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

পৃথিবীতে রহস্যের আদৌ কি কোনো শেষ আছে! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হওয়া বিজ্ঞান পৃথিবীর সকল অজানা রহস্য উন্মোচনের প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এমনও কিছু ঘটনা বা রহস্য রয়েছে যা আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানও ভেদ করতে পারে নি। আবার এমন কিছু ঘটনাও রয়েছে যার রহস্য নাড়া দিয়েছে গোটা বিশ্বকে এবং প্রবল চেষ্টা, পরিশ্রম ও গবেষণার ফলে সফলভাবে রহস্য ভেদ করেছে বিজ্ঞানীরা।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এমন একটি রহস্যের নাম যা পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর যতগুলো রহস্য নিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ ও জিজ্ঞাসা রয়েছে তার মধ্যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল অন্যতম। এই অঞ্চলটি শয়তানের ত্রিভুজ বলেও পরিচিত। বলা হয় এই অঞ্চলের উপর দিয়ে কোনো জাহাজ বা প্লেন গেলে তা আর ফিরে আসে না। হাজার চেষ্টা করেও এর কোনো সমাধান খুজে পাচ্ছিল না বিজ্ঞানীরা। ফলে সকলের কাছে প্রচুর রহস্যের জালে বুনা একটি ধাঁধার নাম হয়ে দাঁড়ায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। কিন্তু অবশেষে উন্মোচন হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য।

১৯৪৫ সালের ৫ই ডিসেম্বর ফ্লোরিডার কাম্পের জন্য ১৪ জন নেভি এয়ারম্যান প্রতিদিনের মতো রুটিন প্র্যাকটিসে বের হয় একটি প্লেনে করে যার নাম ফ্লাইট ১৯। প্রায় দের ঘণ্টা পর ফ্লাইট লিডার চালস টেইলর ফ্লোরিডার কন্ট্রোল রুমে ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানায় তাদের ৩ টা কম্পাসের একটাও কাজ করছে না, তারা পশ্চিম দিক চিনতে পারছে না। তাদের সঙ্গে খুব খারাপ কিছু হচ্ছে। এরপর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। 

সেদিন সন্ধ্যায় অন্য একটি প্লেনকে পাঠানো হয় ফ্লাইট ১৯ কে খোঁজার জন্য, কিন্তু তারও কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। ১৩ জন মানুষসহ গায়েব হয়ে যায় ২য় প্লেনটিও। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে প্রথম এরকম ঘটনার কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তার ক্রু মেম্বারদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছিলেন, হঠাত সমুদ্রে আলোর খেলা দেখতে পান, জাহাজের কম্পাস কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বারমুডা, ফ্লোরিডা এবং পর্ত রিকার মধ্যবর্তী অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমে অবস্থিত ত্রিভুজাকারের এই অংশকে বলা হয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল।

গত শতাব্দীতে প্রায় কয়েকশো জাহাজ ও প্লেন এই বিশাল প্রায় ৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে নিখোঁজ হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য উন্মোচনের জন্য কিছু রিসার্চার এর উপর কাজ করে কিছু এমন তথ্য পান যা দ্বারা এটা প্রমাণ হয় যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কোনো রহস্যময় স্থান নয়। 

মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে ঘটা দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত দায়ী ২৭৩ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত বিধ্বংসী ঝর। এই ঝর মূলত সৃষ্টি হয় ষড়ভুজ মেঘ থেকে। তারা বলেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের উপর ষড়ভুজ মেঘ এমনভাবে জমাট বাঁধে যার ফলে বায়ু বোমা তৈরি হয়। এ ঝরের এতো ক্ষমতা যার আঘাতে সমুদ্রের ৪০ থেকে ৫০ ফুট বিশাল ঢেউ সৃষ্টি হয়, যা একটি জাহাজ বা প্লেনকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। ধারনা করা হয়, এতদিনে নিখোঁজ হওয়া শত শত জাহাজ বা প্লেনের ধ্বংসাবশেষ স্রোতের সঙ্গে ভেসে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে বা পর্তরিক খাদে পরে যায়।

এ খাদ অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের তলদেশের গভীরতম খাদ যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মধ্যেই পরে। এর গভীরতা প্রায় ৩৭৩ ফুট। সুতরাং কোনো ধ্বংসাবশেষ এই খাদের ভিতরে পরলেও তা উদ্ধার করা সম্ভব না। 

আরো ধারনা করা হয়, এই অঞ্চলের আবহাওয়ায়া ইলেকট্র-ম্যাগনেটিক অ্যারোমালিজ আছে যার ফলে ম্যাগনেটিক কম্পাস ঠিক মতো কাজ করে না এবং পাইলট ও নাবিকরা পথ হারায়। 

আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল এ অঞ্চলের সমুদ্রের তলদেশে প্রচুর পরিমানে মিথেন গ্যাস রয়েছে যা জাহাজ ডুবার কারণ বলে ধারনা করা হয়। সুতরাং বলা যায়, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কোনো রহস্যময় স্থান নয়। সভ্যতার চরম শিখরে বিজ্ঞান বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো এক রহস্যের জাল এমন নিখুঁতভাবে ছিঁড়ে ফেলায় ধীরে ধীরে সকল রহস্য উন্মোচন হবে বলে আশা করা যায়।

নিউজওয়ান২৪/এএস