ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘রাজা-রানী’

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ৩০ অক্টোবর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

রাজা-রানী সম্পর্কে মানুষের মনে বরাবরই আগ্রহের কমতি নেই। অন্যান্যদের মত তাদের জীবনেও বিচিত্রতার অভাব ছিল না।

অজস্র প্রাচুর্য আর শান-শওকতের ভেতরে থেকে কারো কারো মাথায় আবার জন্ম নিয়েছিল পাগলাটে খেয়াল, কেউ কেউ হয়ে ওঠেন অতিশয় হিংস্র।

ষষ্ঠ চার্লস:

1.রাজা-রানী বিচিত্রতা

শতবর্ষের যুদ্ধ চলার কঠিন সময়ে ফরাসী দেশ ছিল রাজা ষষ্ঠ চার্লসের তত্ত্বাবধানে। আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে, তিনি ছিলেন স্কিৎজোফ্রেনিক। ১৩৯২ সালে একদিন ঘোড়ার পিঠে বনে ঘুরতে গিয়ে জ্ঞান হারানোর পর থেকে তার মানসিক অবস্থা বিগড়ায়। মাসের পর মাস তিনি না-কি স্নান করতেন না, এমনকি কাপড়ও বদলাতেন না। তার সবচেয়ে বড় বিচিত্রতা ছিল ‘গ্লাস ডেল্যুসন’ বা কাঁচ বিভ্রম। তিনি ভাবতেন তার দেহ কাচের তৈরি এবং যে কোনো সময় তা ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি ঘন স্তরের কাপড় পরতেন, কাপড়ের ফাঁকে লোহার রড গেঁথে রাখতেন এবং কাউকে তাঁর শরীর স্পর্শ করতে দিতেন না।

কিন শি হুয়াং:

2.রাজা-রানী বিচিত্রতা

চৈনিক সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের মৃত্যু ভয় এতটাই প্রকট ছিল যে, তিনি জীবনের একটা লম্বা সময় শুধু অমরত্বের খোঁজ করে গেছেন। শত্রুরা জায়গা চিনে আক্রমণ করতে পারে তাই একই স্থানে তিনি দ্বিতীয়বার ঘুমাতেন না। সবসময় ভ্রমণে সঙ্গে রাখতেন আড়ধনুক, যেতেন গোপন সুড়ঙ্গপথে যেন কেউ তাকে প্রাসাদে ঢুকতে বা বের হতে না দেখে! তাছাড়া জীবদ্দশায়ই তিনি নিজের জন্য এক বিরাট সমাধি নির্মাণ করেন যেখানে ৮ হাজারের অধিক প্রমাণ সাইজের সৈনিকের টেরাকোটা এবং একটা ক্ষুদ্রাকার শহরের নকশা তৈরি করেন। মরার পর সম্রাট যেন আবার এদের নিয়ে সেই শহরে রাজত্ব কায়েম করতে পারেন তাই এত উদ্যোগ আর কী!

প্রথম ইব্রাহীম:

3.রাজা-রানী বিচিত্রতা

অন্যতম নিষ্ঠুর এবং বিকৃত মননের এক তুর্কি সুলতান ছিলেন অটোমান সম্রাট প্রথম ইব্রাহীম। শৈশবে না-কি তাকে প্রায়ই জানালাহীন এক কুঠুরিতে বন্দী করে রাখা হত যা জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে তাকে এতটা নিষ্ঠুর করে তোলে। ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে ভাইয়ের মৃত্যুর পর ২৩ বছরের ইব্রাহীমকে পুরোপুরি মুক্ত করে দেয়া হয়। তার ভেতর যেমন ছিল নৃশংসতা তেমনি বিকৃত যৌন ক্ষুধা। স্থূলকায় নারীদের প্রতি তিনি তীব্র আকর্ষণ বোধ করতেন, ফলে তার প্রহরীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে স্থূলকায় নারীদের এনে তার হেরেমে বন্দী করে রাখতেন। ৩৫০ পাউণ্ড ওজনের এক নারী ছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গিনী, সবার কাছে এ নারীর পরিচিতি ছিল ‘সুগার কিউব’ নামে। ইব্রাহীমের পাশবিকতা সীমা ছাড়িয়ে যায়, যেদিন তিনি প্রতারণার অভিযোগে হেরেমের ২৮০ জন নারীকে একসঙ্গে বসফরাস সাগরে ডুবিয়ে মারার নির্দেশ দেন ।

ক্যালিগুলা:

4.রাজা-রানী বিচিত্রতা

মাত্র চারটি বছর রোমের সম্রাট ছিলেন ক্যালিগুলা। এ অল্প সময়েই কঠোরতম সম্রাট হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেন তিনি। অদ্ভুত কিছু আইনের উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। যেমন, কেউ তার মুখের দিকে সরাসরি তাকালে তাকে সিংহের গুহায় নিক্ষেপের আদেশ দেয়া হতো। অপরাধীর গাঁ মধুতে আবৃত করে বোলতার ঝাঁক ছেড়ে দেয়া হতো। নিজেকে তিনি উপদেবতা ভাবতেন, প্রায়ই তার প্রাসাদে ভোজ আয়োজন করা হতো। কথিত রয়েছে তার পাশবিকতা এবং বিকৃত যৌনাচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি আপন তিন বোনও। তবে ক্যালিগুলার বিচিত্রতার ষোলকলা পূর্ণ হয় প্রিয় ঘোড়াকে ঘিরে। ইনসিটেটাস নামক ঘোড়াটিকে তিনি দামি ব্লাংকেটে মুড়িয়ে রাখতেন, ডিনার পার্টিগুলোতে নিজেদের টেবিল থেকে খাওয়াতেন। শুধু তাই নয়, ইনসিটেটাসকে তিনি রোমের নাগরিক, দূত এমনকি পুরোহিত হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্তও নেন।

মারিয়া ইলিওনোরা:

5.রাজা-রানী বিচিত্রতা

শুধুই কি রাজারা, খেয়ালি আচরণ দেখাতে ছাড়েননি রানীরাও। সুইডেনের রানী মারিয়া ইলিওনোরা- সে যুগের অন্য দশটা রানীর মত তিনিও চেয়েছিলেন রাজা গুস্তাভাস অ্যাডলফাসকে উত্তরাধিকার দিতে। কিন্তু যখন ব্যর্থ হলেন তখন যেন রীতিমত খ্যাপাটে হয়ে গেলেন। ১৬২৬ সালে তিনি ক্রিস্টিনা নামের এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তখনই মেয়েকে তিনি ‘দানব’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর বহুবার নিজের এই মেয়েকে তিনি ওপরের সিঁড়ি থেকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছেন। আর রাজা গুস্তাভের মৃত্যুর পর তো তার পাগলামো সব সীমাই ছাড়িয়ে যায়। এক বছরেরও অধিক সময় রাজার দেহ সমাহিত হতে দেননি, একটা ঝুলন্ত বক্সে রাজার হৃদপিন্ড রেখে সেটি পাশে নিয়েই ঘুমাতেন।

হুয়ানা:

6.রাজা-রানী বিচিত্রতা

স্পেনের হ্যাপ্সবার্গ রাজবংশের রানী হুয়ানা পতিপ্রেমে আচ্ছন্ন ছিলেন। তার স্বামী রাজা ফিলিপের এলোমেলো, বাছবিচারহীন চলাফেরা এবং নাস্তিক্যবাদ তাকে এক রকম মানসিক রোগীতে পরিণত করে। তার স্বামী যেকোনো সময় অন্য নারীর ওপর আকৃষ্ট হতে পারে সে ভয় থেকে তিনি প্রাসাদে কেবল বৃদ্ধ এবং কুৎসিত নারী অনুচরদের অনুমতি দিতেন। এমনকি তিনি নানা জাদুটোনার কৌশল অবলম্বণ করতেন স্বামীকে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে। ১৫০৬ সালে যখন স্বামীর মৃত্যু হয় তখন থেকে তিনি কালো কাপড় পরতে শুরু করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বামীর কফিন খুলে মৃতদেহের পায়ে চুমু খেয়ে তবেই আনুষ্ঠানিকতার সূচনা করেন। এমনকি স্বামী যেন মৃত্যুর পরেও তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে সেজন্যে কফিনের সামনে পর্যন্ত কোনো নারীকে ঘেঁষতে দেননি, কোন গির্জার সন্ন্যাসিনীকেও নয়।

দ্বিতীয় লুডউইগ:

7.রাজা-রানী বিচিত্রতা

খেয়ালী বা বৈচিত্র্যের অর্থ এই নয় যে, সম্রাট-সম্রাজ্ঞীরা কেবল নিষ্ঠুরই ছিলেন। অনেক মজার ঘটনাও আছে তাদের নিয়ে। বাভারিয়ার রাজা দ্বিতীয় লুডউইগ টেবিলে সব সময় একা খেতে বসতেন। তিনি মনে করতেন, খাবার সময় টেবিলে তাকে সঙ্গ দিচ্ছে তারই মৃত পূর্বপুরুষের আত্মারা। কঙ্গোর কুবা রাজ্যের রাজা তৃতীয় নিয়ামি কক মাবিনটাস। তার একেকটি পোশাকের ওজন না-কি ৮৫ কেজি। কারণ রাজকীয় সেসব পোশাকে রয়েছে ধাতুর ছড়াছড়ি। ওজনদার একেকটি পোশাক পরাতে লাগতো দুই ঘন্টার মত সময়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার সময় এ রাজা কী করতেন তাই ভাবছি!

গুড উইল জুয়েলতিনি: দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু গোষ্ঠীর নাম কে শোনেনি! যোদ্ধা হিসেবে খ্যাত এ গোষ্ঠীর রাজা গুড উইল জুয়েলতিনির মাত্র ৬টি বউ এবং ২৭টি সন্তান রয়েছে। রাজা কিন্তু উচ্চশিক্ষিত, সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। প্রিয় বাহন তার মার্সিডিজ।

রানী মডজাজি:

8.রাজা-রানী বিচিত্রতা

দক্ষিণ আফ্রিকারই আরেক সম্প্রদায়ের রানী মডজাজি। এনার না-কি বৃষ্টির উপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ডাকিনী বিদ্যার ওপর বিশেষ পারদর্শী এ নারীকে জুলু সম্প্রদায়ের যোদ্ধারাও বিশেষ তোয়াজ করে চলে। রানীর আবার রয়েছে ৩৩ জন ঘনিষ্ঠ সহচরী। তবে নিয়মানুসারে, ইনি কাউকে বিয়ে করতে পারবেন না।

সুলতান খলিফা আবদুল মজিদ:

9.রাজা-রানী বিচিত্রতা

এত ধনসম্পদের মাঝে থেকেও কিছু রাজারানী মাঝেমধ্যে তাদের কিপটে মনের পরিচয় দিয়ে ফেলেন। আয়ারল্যান্ডের দুর্ভিক্ষের সময়, অটোমান সামাজ্র্যের সুলতান খলিফা আবদুল মজিদ ১০ হাজার পাউণ্ড ত্রাণ দেবার ঘোষণা দেন। রানী ভিক্টোরিয়া সেখানে দেন মাত্র দুই হাজার পাউন্ড। ফলে তার পক্ষ থেকে সুলতানের কাছে অনুরোধ আসে, তার চেয়েও কম অর্থাৎ সুলতান যেন মাত্র এক হাজার পাউন্ড প্রদান করেন। নইলে প্রজাদের কাছে মহামতি রানীর নাক কাটা যাবে!

এলিজাবেথ:

10.রাজা-রানী বিচিত্রতা

এত রাজা রানীর ভিড়ে রানী এলিজাবেথকে তো বাদ দেয়া অন্যায়। হোক না হোক, জন্ম থেকে তার কথাই গণমাধ্যমে জেনে আসছে সকলে। ব্রিটিশ ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে দীর্ঘায়ু সম্রাজ্ঞী। রানীর জন্মদিন কিন্তু দুইটা। একটা ২১ এপ্রিল, তার সত্যিকার জন্মদিন, আরেকটা তার ‘অফিশিয়াল’ বা দাপ্তরিক জন্মদিন। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে দ্বিতীয় জন্মদিনটির তারিখ নির্ধারিত হয়। কারণ সেদিন খোলা আকাশের নিচে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী সামরিক প্যারেড ‘ট্রুপিং দ্য কালার’। ১৯৪৮ সালে রাজা দ্বিতীয় জর্জের মাধ্যমে এ ধারার সূচনা হয়। ভাল কথা, রানী কিন্তু ভূতে বিশ্বাস করেন! তার ধারণা, প্রথম এলিজাবেথের অতৃপ্ত আত্মা উইন্ডসর ক্যাসেলে ঘুরে বেড়ায়।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ