ঢাকা, ০৯ জুলাই, ২০২৫
সর্বশেষ:

মেয়েটির সোনা জয়ের খবরে একটু খারাপ তো লাগছেই!

খেলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২২ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ২৩:৪৯, ২৩ আগস্ট ২০১৬

বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোটবেলার রিতা             -ফাইল ফটো

বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোটবেলার রিতা -ফাইল ফটো

জিমন্যাস্টিকসের অল-অ্যারাউন্ড রিদমিক পারফর্মেন্সে হুপ (ধাতব বলয়), বল, ক্লাব (ধাতব দণ্ড) আর রিবন (ফিতা) হাতে অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে তিন তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারই স্বদেশি ইয়ানা কুদ্রাভতসেভা।

শনিবার রাতে রিও ডি জেনিরোর অলিম্পিক মঞ্চে অল-অ্যারাউন্ড রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে মার্গারিতা মামুনের ক্রীড়ানৈপুণ্যের কাছে ফিকে হয়ে গেলেন তিন তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কুদ্রাভতসেভা। দুজনই রুশ। তবে মার্গারিতার আরেকটি দেশ আছে- পৈত্রিক সূত্রে তিনি বাংলাদেশের মেয়ে। রিও অলিম্পিকের অল-অ্যারাউন্ড রিদমিক ইভেন্টে স্বর্ণপদকটি নিজের করে নিতে মার্গারিতা স্কোর করেছেন ৭৬.৪৮৩। হিটে প্রথম হয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন। তাতে সবাইকে মুগ্ধ করে ছাড়িয়ে গেলেন হিটের স্কোরও।

বাবা বাংলাদেশের রাজশাহীর সন্তান আর মা রুশ।

মার্গারিতার মার্গা অংশটুকু বাদ দিয়ে জিমন্যাস্ট মা আর প্রকৌশলী বাবা আদর করে ডাকেন রিতা নামে, যা রুশ এবং বাঙালি- উভয় সমাজেই পরিচিত একটি নাম।

২০১৩ সালে কিয়েভে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ও কাজানে গ্রীষ্মকালীন ইউনিভার্সিয়াদেও অল-অ্যারাউন্ড চ্যাম্পিয়ন হন। ওই বছরই প্রথম সবার নজরে আসেন মার্গারিতা। রাশিয়ার ক্রীড়াঙ্গনে তার ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা, স্বপ্ন দেখা। রুশ ম্যাগাজিন ইউরো স্পোর্ত তাকে নিয়ে আসে প্রচ্ছদে। মায়ের দেশের গণমাধ্যমে নাম ছড়ায় পিতার দেশের গৌরবের উপমায় ‘বেঙ্গল টাইগার’ অর্থাৎ ‘বাংলার বাঘিনী’ হিসেবে। রিওতে যখন স্বর্ণপদক নিশ্চিত করলেন তখন টেলিভিশন ধারাভাষ্যকারও মার্গারিতার নামের সঙ্গে ‘বেঙ্গল টাইগার’ শব্দ দুটি উচ্চারণ করছিলেন বারবার। এই উচ্চারণ শুনে রিও ডি জেনিরোয় বা দুনিয়া জুড়ে লাখো কোটি বাঙালি দর্শক মাত্রই হয়েছেন পুলকিত- আবেগ অনুপ্রাণিত।

বাংলার বাঘিনী ২০১৫ সালে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হুপ ইভেন্টে ফের সোনার মেডেল গলায় ঝোলান। একই আসরে অল-অ্যারাউন্ডে পান রুপা। এছাড়া জার্মানির বার্লিনে, অস্ট্রিয়ার ইনসব্রাকে এবং চেক প্রজাতন্ত্রের ব্রনোতেও অল-অ্যারাউন্ডে স্বর্ণপদক নিজের করে নিয়েছিলেন রিতা।

রিতার বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন রাজশাহীর দুর্গাপুরের সন্তান। মা আনা ছিলেন জিমন্যাস্ট। গত শতাব্দীর আশির দশকে আবদুল্লাহ আল মামুন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়াশোনা করতে যান। পরে সেখানেই বিয়ে করে স্থায়ী হয়ে যান। রিতার জন্ম মস্কোতেই। জন্মভূমি রাশিয়া হলেও রিতা সোনা জেতার পর সাফল্যটা উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ-রাশিয়া দুই দেশকেই- একেই বলে রক্তের টান। স্বগর্বে বলেন, আমার এই জয় দুই দেশের জন্যই।

তবে বাংলাদেশের হয়ে একবার অবশ্য জার্মানিতে জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন রিতা। বাংলাদেশ ও রাশিয়া দুই দেশেরই পাসপোর্ট আছে তার। অনেকেই আক্ষেপ করেন- বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ তৎপর হলে হয়তো মার্গারিতা বাংলাদেশের পক্ষ হয়েই পারফর্ম করতে পারতেন এবারের রিওতে আর সোনার মেডেলটাও বাংলাদেশের জন্যই নিয়ে আসতেন, হয়তো।

এখন আফসোস!
জানা গেছে, ২০০৯ সালে ১৩ বছর বয়সী কিশোরী কন্যা রিতাকে নিয়ে ঢাকায় জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনে ধর্ণা দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। তার স্বপ্ন ছিল মেয়ে বাংলাদেশের ঘরোয়া এবং দেশের হয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মেডেল জয় করবে। কিন্তু ফেডারেশনের সেই সময়কার কমিটি রিতার ভেতরকার আগুনের আঁচ বা তার বাবার বাস্তবমুখী স্বপ্নের পরশ- কিছুই অনুধাবন করেননি বা করলেও কোনো কারণে অসমর্থ হয়েছিলেন তাতে সাড়া দিতে।

তবে সাত বছর পর রিতার বিশ্বজয়ের খবরটা শোনার পর আফসোসই প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের হালের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুর রহমানের। তিনি জানান, রিতা হয়তো বাংলাদেশের পতাকা গায়ে খেলতে পারতো। কিন্তু ওই সময় ফেডারেশন থেকে সেভাবে সহযোগিতা না পাওয়ায় ফিরে যায় রাশিয়ায়। এখন মেয়েটির সোনা জয়ের খবরে একটু খারাপ তো লাগছেই।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আহমেদুর রহমান বলেন, আমি মেয়েটিকে কখনো দেখিনি। তবে শুনেছি, বাংলাদেশের পক্ষে জিমন্যাস্টিকসে অংশ নেওয়ার জন্য দিপু ভাইয়ের (সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান) কাছে এসেছিলেন মেয়েটি ও তার বাবা। এটা বছর সাতেক আগের ঘটনা। ওই সময় এই মেয়েকে জিমন্যাস্টিকস করাতে আর্থিক সহযোগিতা, অনুশীলনের ভালো সুযোগ-সুবিধাসহ ওই লেভেলের একজন কোচ দরকার ছিল আমাদের। কিন্তু এসব আমরা কখনোই দিতে পারতাম না। এ জন্যই এ দেশে তাকে দিয়ে জিমন্যাস্টিকস করানো যায়নি।

তবে তৎকালীন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান ওই ঘটনা (রিতাকে নিয়ে তার বাবা মামুনের জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনে আসা) মনে করতে পারছেন না বলে জানান। তিনি বলেন, এই মেয়ের ব্যাপারে এ মুহূর্তে কিছু মনে করতে পারছি না।

তবে পেছনের ঘটনা একটু অন্যরকমই যা জেনে সাধারণ বাংলাদেশি মাত্রেই বুকে কষ্ট অনুভব হবে। জানা গেছে, কিশোরী রিতার যোগ্যতা আর সম্ভাবনাকে মাপতেই অক্ষম ছিলেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের কর্তারা। তবে এই ফেডারেশনই ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জিমন্যাস্ট কাজী সাইক সিজারকে। তাকে ফেডারেশন সব রকমের সহযোগিতা দিয়েছিল। অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার আগে মাস তিনেক সিজারের অনুশীলনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করেছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ হয়নি।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

খেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত