ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

মেসি-ম্যারাডোনার দেশের অজানা কিছু তথ্য

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২৮ মার্চ ২০১৯  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আর্জেন্টিনা- দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশের সকলেই দেশটিকে চেনেন মেসি ম্যারাডোনার দেশ হিসেবে। কিন্তু জানেন কী, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের দেশ হলো আর্জেন্টিনা! 

২৩টি রাজ্য নিয়ে গঠিত দেশটি চলে ফেডারেল সরকার ব্যবস্থায়। আর্জেন্টিনার ভৌগলিক বৈচিত্র্য যে কারো চোখ কপালে তুলতে বাধ্য। তীব্র হিমবাহপূর্ণ এলাকা থেকে শুরু করে গভীর অরণ্য, সুবিস্তৃত পাম্পাস সমভূমি থেকে রহস্যময় আন্দিজ পর্বতমালা- কী নেই আর্জেন্টিনায়! চলুন জেনে আসা যাক দেশটি নিয়ে আরো অজানা কিছু তথ্য -

১। আর্জেন্টিনায় প্রাচীণ প্যালিওলিথিক যুগ থেকে মানুষ বসবাস করে আসছে! এমন তথ্যের পক্ষে প্রমাণও মিলেছে ঢের। বিখ্যাত 'কেভ অফ হ্যান্ডস" গুহায় আজ থেকে ৯ হাজার ৩৭০ বছর আগে আঁকা মানুষের কিছু চিত্রকর্ম পাওয়া গিয়েছে, যা থেকে আর্জেন্টিনার এই আদিম অধিবাসীদের সম্পর্কে জানা যায়।

২। আধুনিক আর্জেন্টিনার ইতিহাস গড়ে দিয়েছে ইউরোপিয়ানরা। ইতিহাসখ্যাত নাবিক আমেরিগো ভেসপুচির আগমনের মধ্য দিয়ে ১৫০২ সালে আর্জেন্টিনায় ইউরোপীয়দের অভ্যুত্থান শুরু হয়। পরবর্তীতে হুয়ান ডিয়াজ দ্য সলিস, সেবাস্তিয়ান ক্যাবো এর মত পরিব্রাজকদের হাত ধরে ইউরোপের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সংযোগ আরো বেড়ে যায়। 

৩। ১৫৮০ সালে বুয়েন্স এইরেসে স্থায়ী উপনিবেশ স্থাপন করে স্পেন। তখন থেকে বর্তমান আর্জেন্টিনা নামে পরিচিত অঞ্চলটি মূলত পেরুর ভাইসরয়ালটি বা সুবাহদারির অধীনে চলছিলো, কারণ ১৭৭৬ সালে রিও দে লা প্লাতায় সুবাহদারি স্থাপনের আগে পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় কোনো একক ভাইসরয়ালটি ছিলোনা। আর এ সব সুবাহদারি ছিলো স্পেনের রাজার অধীনে।

৪। ১৮১৬ সালের ৯ জুলাই আর্জেন্টিনার স্বাধীনতা ঘোষিত হয়। দুর্ভাগ্যবশত এর মাধ্যমেই দেশটিতে শুরু হয় সুদীর্ঘকালব্যাপী গৃহযুদ্ধের। এ গৃহযুদ্ধ স্থায়ী হয়েছিলো ১৮৬১ সাল পর্যন্ত। 

৫। আনুষ্ঠানিকভাবে 'আর্জেন্টিনা' নামটি গ্রহণ করা হয় ১৮৬০ সালে, নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ 'আরজেন্টামস' থেকে; যার অর্থ হলো সিলভার বা রূপা। জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, প্রাচীণকালে আর্জেন্টিনাকে বলা হতো রূপার পাহাড়ের দেশ। আর্জেন্টিনার স্প্যানিশ নাম হলো 'প্লাতা'। বুয়েন্স এইরেসকে আর্জেন্টিনার রাজধানী করা হয় ১৮৬২ সালে।

৬। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরেই ইউরোপ থেকে অভিবাসীদের ঢল নামে আর্জেন্টিনায়। এর ফলে আর্জেন্টিনার অর্থনীতি ও জনমিতি পায় দারুণ এক গতি। ১৯১৩ সালে মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে সারা বিশ্বে আর্জেন্টিনার অবস্থান ছিলো দশম। ১৮৮০ থেকে ১৯১০ -এই ৩০ বছরে আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় পাঁচ গুণেরও বেশি! তবে চমৎকার এ উন্নতি বেশিদিন টিকে থাকেনি। মিলিটারি ক্যু এর শিকার হয়ে উৎখাত হতে হয় দেশটির স্থিতিশীল সরকারকে, যে কারণে অর্থনীতিও ভেঙে পরে, ১৯৩০ সালের পরপরই প্রায় দেউলিয়া হওয়ার জোগাড় হয় আর্জেন্টিনার। 

৭। যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের মতো আর্জেন্টিনাকেও অভিবাসীদের দেশ বলা হয়ে থাকে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ আর্জেন্টিনায় অভিবাসী হয়ে আসেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন স্প্যানিশ এবং ইতালীয়।

৮। সন্দেহাতীতভাবেই আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রভাষা হলো স্প্যানিশ। এছাড়াও সে দেশে ইংরেজি, জার্মান, ইতালীয় ভাষী মানুষদের বাস রয়েছে।

৯। আর্জেন্টিনা একটি শহরপ্রধান দেশ, দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯২ শতাংশই শহরে বসবাস করে। সমগ্র পৃথিবীর অনুপাতেই আর্জেন্টিনা শহুরে অধিবাসীদের সংখ্যায় অনেক এগিয়ে।

১০। আর্জেন্টিনায় সাক্ষরতার হার ৯৮ শতাংশ।

১১। আর্জেন্টিনা তার সিয়েস্তা সংস্কৃতির জন্য বেশ আলোচিত, সেদেশের মানুষজন দুপুরের আহারের পর বাড়িতে চলে যায় মধ্যাহ্ন ঘুমের ছুটিতে। এ ব্যাপারটি সিয়েস্তা নামে পরিচিত। এমনকি স্কুল কলেজগুলোতেও সিয়েস্তা ব্রেক দেয়া হয়!

১২। পরিবার ছোট রাখার ব্যাপারেও আর্জেন্টাইনরা বেশ সচেতন। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি পরিবারে গড়ে দু’টি সন্তান নেয়া হয় আর্জেন্টিনায়। বেশ কিছু বছর আগ পর্যন্তও আর্জেন্টিনায় বিবাহ বিচ্ছেদ নিষিদ্ধ ছিলো। আইন করে বিবাহ বিচ্ছেদ বৈধ করার পর ইদানীং সেদেশে সিঙ্গেল প্যারেন্টস পরিবার দেখতে পাওয়া যায়। ২০১০ সালে আর্জেন্টিনায় সমকামী পুরুষদের বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়।

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি