ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

মৃত্যুর রকম ও পরবর্তী অভিজ্ঞতা!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১০, ১২ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

মৃত্যু যতটা না করুণ তার চেয়েও বেশি অনিবার্য। সকলেই একদিন না একদিন পরলোকে গমন করবে। 

অনেক মিথ এবং অনেক যৌক্তিক ও অযৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে মৃত্যুকে ঘিরে, তারপরও মনে অনেক প্রশ্ন জাগে, কি হয় মৃত্যুর পরে? কেমন হয় মৃত্যুর ঠিক পরবর্তী অভিজ্ঞতা? এই সৃষ্টি জগতের মৃত্যু হলো সবচেয়ে বড় রহস্য!

মৃত্যু প্রধানত দু’ধরনের হয়- স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক মৃত্যু। জীনগতভাবে একজন মানুষের জীবনকাল নির্দিষ্ট। জীবনযাপনের ধরন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাভেদে এই সময়সীমা বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে, কিন্তু স্থায়ী হতে পারেনা। 

চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, মৃত্যুর তিনটি স্থর রয়েছে- ১) ক্লিনিক্যাল ডেথ (২) বায়োলজিক্যাল ডেথ এবং (৩) অরগানিক ডেথ।

(১) ক্লিনিক্যাল ডেথ হচ্ছে যখন হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তাররা তখন ইমারজেন্সি রুম বা আই সি ইউ-তে থাকা অবস্থায় কোড-ব্লু (রোগীর প্রায় শেষ সময়ে ডাকা জরুরী অবস্থা) ঘোষণা করেন এবং রোগীর আত্মীয় স্বজনদের অনুমতি নিয়ে রোগীকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করেন। এই পর্যায়ে সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রোগীকে বাঁচানোর সম্ভাবনাও থাকে।' রিভারসিবল (ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা থাকে) এই অবস্থায় ডাক্তাররা রোগীকে ‘সিপিআর’ প্রয়োগ করেন, তার হৃদযন্ত্র এবং শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করার জন্য, যদিও তখন রোগী ক্লিনিক্যালি ডেড! এই সময়টাকে নেয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্সও বলা হয়।

(২) বায়োলজিকাল ডেথ পর্যায়ে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কার্যক্রম থামিয়ে দেয়া শুরু করে। এই ধরনের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে রয়েছে কিডনি, লিভার, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি। মৃত্যুর এই পর্যায়টি ‘ইরিভারসিবল’ অর্থ্যাৎ মৃত্যুর এই গভীর পর্যায় থেকে সাধারনত রোগীকে আর ফেরত আনা সম্ভব হয়না।

(৩) অরগানিক ডেথ পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্ক মরে যেতে শুরু করে তখন হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুসকে কর্মক্ষম করলেও তা আর কাজে লাগে না। আমাদের হৃৎপিণ্ড যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের সকল প্রক্রিয়া বন্ধ হতে থাকে আর যে হরমোনগুলো মস্তিষ্ককে সাপোর্ট করতো অঙ্গ পরিচালনা করার জন্য সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।

মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড পরে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ অনেক বেড়ে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট কমে গিয়ে কক্ষ তাপমাত্রার সমান হয়ে যায় যাকে 'অ্যালগর মরসিট' (অর্থাৎ মৃতদেহের তাপমাত্রা)বলে। মৃত্যুর কয়েক মিনিট পরে শরীরের কোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যায় আর তারা ভেঙে যেতে থাকে। এভাবেই পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টার মাথায় শরীরের পেশীগুলোতে ক্যালসিয়াম বাড়তে থাকে এর ফলে পেশীগুলোতে চাপ পড়ে এবং শরীর একটা অবস্থায় শক্ত হয়ে যায়। এই অবস্থাকে বলে 'রিগর মর্টিস'। এটা ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। শরীরে রিগর মরটিস থাকলে, বেশ কিছুক্ষণের জন্য মৃতের চোখ খোলা থাকে।

পরবর্তীতে একে একে শরীরে অবশিষ্ট থাকা বর্জ্য পদার্থ সব বের হয়ে যায়, মৃত চামড়া শুকিয়ে যায়, নখ ও চুল বড় হয়ে যায় এবং চেহারা ও ত্বক ক্রমশ ফ্যাকাশে হতে থাকে। কয়েকদিন পর শরীরের এনজাইম, ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা নিজেদের ভক্ষণ করা শুরু করে। অনেকসময় লাশের সমাধিকার্য সম্পন্ন না হলে মৃত শরীর থেকে পঁচা দুর্গন্ধ বের হয়। কারণ পিউট্রেসিন এবং ক্যাডাভেরিনের মতো জৈবিক যৌগ শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়লে, দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। এই গন্ধই মৃতদেহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নেক্রোসিস পদ্ধতিতে এরপর শরীর কালোবর্ণ ধারণ করে। ধীরে ধীরে প্রাণহীন মানবদেহ ক্রমেই মাংস-চামড়ার খোলস ত্যাগ করে। পচন প্রক্রিয়ায় প্রায় চার মাসে মানবদেহ পরিণত হয় হাড় সর্বস্ব কঙ্কালে।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ