ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

মুন সিনেমা হলের মালিককে ৯৯ কোটি টাকা দেবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ৮ অক্টোবর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

রাজধানীর মুন সিনেমা হলের মালিককে দ্রুত ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘মুন সিনেমা হলের মামলা শুনতে শুনতে আমরা (বিচারপতিরা) ক্লান্ত।’ তবে শুনানিতে এ সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়, সংশোধিত বাজেট থেকে ওই অর্থ (৯৯ কোটি টাকা) বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে।

আদালতের নির্দেশনা অনুসারে মুন সিনেমা হল মালিককে ওই টাকা পরিশোধে রাষ্ট্রপক্ষ পুনরায় সময়ের আবেদন করলে সোমবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে, মুন সিনেমা হলের মালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।

শুনানিতে এ সংক্রান্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়, সংশোধিত বাজেট থেকে ওই অর্থ বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে। তাই নির্দেশিত অর্থ পরিশোধে আদালতের কাছে তিন মাস সময় চায় রাষ্ট্রপক্ষ। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এ মামলা শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। আর কত দিন এভাবে ঘুরাবেন?’

এরপর আপিল বিভাগ মুন সিনেমা হল মালিককে অর্থ পরিশোধে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন এবং আগামী ৯ ডিসেম্বর মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রাখার নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের মালিককে তিন কিস্তিতে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যে আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

কিস্তির ওই অর্থ প্রথম দুই মাসের মধ্যে ২৫ কোটি, দ্বিতীয় দুই মাসের মধ্যে বাকি ২৫ কোটি ও এ বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বাকি অর্থ পরিশোধ করতে বলেছিলেন আদালত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল আদালত দ্রুত ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেন।

পরে আরেক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই মুন সিনেমা হলের মালিককে দ্রুত ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্ক লিমিটেডকে ওই অর্থ পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু সেই অর্থ পরিশোধ না করে সোমবার (৮ অক্টোবর) পুনরায় সময় চান রাষ্ট্রপক্ষ।

পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে একসময়কার মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন।

২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলক কোম্পানিকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই প্রতিবেদন অনুসারে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।

নিউজওয়ানি২৪/এমএস

আরও পড়ুন
আইন আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত