ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

মসজিদের বিশেষ কিছু আদব বা শিষ্টাচার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১১ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

মসজিদ মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার কাছে পৃথিবীর সর্বাধিক প্রিয় স্থান। মহান আল্লাহকে যারা ভালোবাসে তারা মসজিদকেও ভালোবাসে। মুমিনের সঙ্গে মসজিদের যেন আত্মার সম্পর্ক।

কিয়ামতের ভয়ানক দিন, যে দিন আর কোনো ছায়া থাকবে না মুমিন বান্দাকে আশ্রয় দেয়ার, সেদিন আল্লাহ তায়ালা মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টিকারী ব্যক্তিকে নিজের আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে থাকে সে আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।'

ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান বলে পরিগণিত মসজিদ মুসলমানদের ইবাদতের সর্বোত্তম জায়গা। এখানে আগতদের উদ্দেশ্য থাকে কেবল ইবাদত করা। এই লেখায় মসজিদের বিশেষ কিছু আদব বা শিষ্টাচার সম্বন্ধে আলোচনা করা হল:

(১) মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মসজিদের জিনিসপত্রের হেফাজত করা এবং ইবাদত চালু রাখা। এসব ঈমানের আলামত। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহর মসজিদসমূহকে তারাই চালু ও সেখানে ইবাদত অব্যাহত রাখে, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে।’

(২) ফরজ নামাজসমূহ সর্বদা মসজিদে জামাআতের সঙ্গে আদায় করা উচিত। মসজিদে জামাআত ও আজানের যথারীতি নিয়ম এবং মসজিদের শৃঙ্খলা দ্বারা নিজের জীবনকে আরো উত্তম উপায়ে পরিচালিত করতে হবে। মসজিদ এমন একটি জায়গা যে, মুমিনের সমগ্র জীবন আবর্তিত হয় মসজিদকে কেন্দ্র করেই! রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুসলমানদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা মসজিদে আবদ্ধ থাকে এবং মসজিদ থেকে নড়ে না, ফেরেশতাগণ এমন সব লোকের সাথী হয়ে যান। যদি এরা অনুপস্থিত থাকে তখন ফেরেশতাগণ তাদের খোঁজ করতে থাকেন, অসুস্থ হলে ফেরেশতাগণ দেখতে যান, কোনো কাজ করতে থাকলে ফেরেশতাগণ সাহায্য করেন, আসলে এসকল ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার রহমতের হকদার।’ (মুসনাদে আহমদ)

(৩) আনন্দ ও উৎসাহের সহিত মসজিদে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সকাল সন্ধ্যায় নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়া হলো জিহাদে যাওয়ার সমতুল্য। তিনি আরও বলেন, ‘যারা ভোরে আঁধারের ভেতরে মসজিদে যায় কিয়ামতের দিনের ঘোর অন্ধকারে তাদের সঙ্গে থাকবে উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাতায়াতকারী ব্যক্তির প্রতিটি কদমে একটি নেকী যোগ করে একটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়।’ (ইবনে হাব্বান)

(৪) মসজিদে প্রবেশের সুন্নত পাঁচটি:

১. বিসমিল্লাহ পড়া, ২. দরুদ শরিফ পড়া, ৩. অতঃপর এ দোয়া পড়া- আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক, ৪. মসজিদে ডান পা আগে রাখা ও ৫. মসজিদে প্রবেশ করে ইতিকাফের নিয়ত করা। (-ইবনে মাজাহ ও শামী)

মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নতগুলো:

১. বিসমিল্লাহ পড়া, ২. দরুদ শরিফ পড়া, ৩. অতঃপর এ দোয়া পড়া- আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিনফাদলিক, ৪. মসজিদের বাইরে বাম পা আগে রাখা ও ৫. অতঃপর প্রথমে ডান পায়ে জুতা পরা। তারপর বাম পায়ে পরা। (ইবনে মাজাহ ও তিরমিজি)

(৫) মসজিদে যেতে তাড়াহুড়ো করা মসজিদের মর্যাদার পরিপন্থী। মসজিদে জামাত ধরতে গিয়ে অনেকেই তাড়াহুড়ো করেন। এটা ঠিক নয়। ধীরস্থিরভাবে মসজিদে প্রবেশ করা সুন্নাত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু কাতাদা (রা.) বলেন, একদা আমরা হজরত নবী করিম (সা.) এর সঙ্গে নামাজ আদায় করছিলাম, এমন সময় শোরগোল শোনা গেল। নামাজ শেষে নবী (সা.) বললেন, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, নামাজের জন্য তাড়াহুড়ো করছিলাম। নবী (সা.) বলেন, এমন করো না; যখন নামাজে আসবে, তখন শান্তভাবে আসবে; যা অবশিষ্ট পাবে তা পড়ে নেবে, আর যা ছুটে যাবে তা পূরণ করে নেবে।’ (সহীহ বোখারী)

(৬) মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তা না বলা। সর্বাবস্থায় মনে রাখতে হবে, মসজিদ গল্পের জায়গা নয়, নিছক ইবাদতের জায়গা। মসজিদে উচ্চ আওয়াজে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং উচ্চ আওয়াজে জিকির করাও জায়েজ নয়। তবে মসজিদে যদি কোনো ব্যক্তি নামাজ অথবা তাসবীহে লিপ্ত না থাকে তাহলে কতেক ইসলামী বিশেষজ্ঞরা সেটাকে জায়েজ বলেছেন। আবার কিছু ইসলামী বিশেষজ্ঞ সর্বাবস্থায় উচ্চ আওয়াজে জিকির ও তেলাওয়াত করা নাজায়েজ বলেছেন। বর্তমানে মানুষ মসজিদের আদব পালনের ক্ষেত্রে অনেক অমনোযোগী, অধিকাংশ মানুষ মসজিদে প্রায়ই শোরগোল করে এতে মসজিদের সম্মান ও মর্যাদার বরখেলাপ হয়। নবী করিম (সা.) বলেন বাজারের হট্টগোল থেকে বেঁচে থাক এবং মসজিদকে দুনিয়াবী কথাবার্তা দ্বারা বাজারের সাদৃশ্য করো না।

(৭) মুখে অথবা অন্য কোনোভাবে শরীরে দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ না করা। এতে করে অন্যান্য মুসল্লিদের কষ্ট হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) কাঁচা পিয়াজ বা কাঁচা রসুন খেয়ে অথবা দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা বনী আদম যে বিষয়ে কষ্ট অনুভব করে ফেরেশতাগণ তা থেকে কষ্ট অনুভব করেন। হাদীসে বলা হয়েছে, মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী কাঁচা পেয়াজ ও কাঁচা রসুন খেয়ে তোমরা মসজিদে প্রবেশ করা থেকে সাবধান থেকো যদি খেতেই হয় তবে আগুনের সাহায্যে এগুলোর দুর্গন্ধ ধ্বংস করে নিবে। (ত্ববরানী)

(৮) যখন ইমাম খুতবা শুরু করবেন তখন মসজিদে উপস্থিত ব্যক্তির খুতবা শুনা ওয়াজিব। হোক সে ইমামের নিকটবর্তী বসে কিংবা দূরে, এমন কাজ যার দ্বারা খুতবা শুনার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় সে কাজ করা গুনাহের শামিল। যেমন- খাওয়া, পান করা, কথাবার্তা বলা, চলাফেরা করা, তাসবীহ পড়া, সালাম দেওয়া, সালামের উত্তর দেওয়া বা শরীয়তের কোনো মাসায়েল বলা এ সমস্ত কাজ যেমন নামাজরত অবস্থায় নিষেধ তেমনি খুতবার সময়ও নিষেধ।

(৯) মসজিদে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখন অসহনীয় ও অমার্জনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে নামাজের সময় মোবাইলের রিংটোনের কারণে ইবাদতের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। অনেক সময় তা চরম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে। তাই মসজিদে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোন বন্ধ করা উচিত। ভুলবশত যদি মোবাইল খোলা থাকে আর নামাজরত অবস্থায় রিংটোন বেজে উঠে, তাহলে এক হাত ব্যবহার করে বা নিজ নামাজ ছেড়ে দিয়ে হলেও অপর মুসল্লিদের কথা ভেবে হলেও মোবাইল বন্ধ করে দিতে হবে।

(১০) নামাজরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করা একদমই উচিত নয়। এই সম্পর্কে মহানবী (সা.) এর একটি হাদিস আছে যার সার মর্ম এই- তিনি সাহাবিদের উদ্দেশে বলেন, যদি তোমরা নামাজ আদায়কারির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার গোনাহ সম্পর্কে জানতে তাহলে ৭০ হাজার বছর অপেক্ষা করতে তারপরও নামাজের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে না।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ