ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘বিষমাখা মিষ্টি আনেন প্রেমিক, ২ সন্তানকে খাওয়ান মা’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদাতা

প্রকাশিত: ২১:২২, ১৭ মার্চ ২০২২  

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান


নাপা সিরাপ খেয়ে নয়, পরকীয়া প্রেমের জেরেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সেই ২ শিশুকে বিষ মেশানো মিষ্টি খাইয়ে হত্যা করেন মা লিমা বেগম। পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ শর্ত দিয়েছিল ২ সন্তানকে ছেড়ে আসলেই কেবল লিমাকে সে বিয়ে করবে। সেজন্য প্রেমিকের আনা বিষমাখা মিষ্টি সন্তানদের খাইয়ে হত্যা করেন লিমা।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুর ২টায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ সব তথ্য জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

এদিন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন লিমা। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আফরিন আহমেদ হ্যাপী তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এর আগে বুধবার (১৬ মার্চ) রাতে লিমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, চালকলে কাজ করা সুবাদে শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে লিমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। লিমাকে আর্থিকভাবেও সহায়তা করত সফিউল্লাহ। লিমার স্বামী ইসমাঈল হোসেন চোখে কম দেখেন এবং শারীরিকভাবেও কিছুটা অক্ষম ছিল। সেজন্য লিমা তাকে ছেড়ে সফিউল্লাহকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সফিউল্লার শর্ত ছিল ২ সন্তান ইয়াছিন (৭) ও মোরসালিনকে (৫) ছেড়ে আসতে হবে।

পুলিশ সুপার জানান, নিজেকে সন্তানদের থেকে মুক্ত করতে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে মিলে দুই ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন লিমা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঘটনার দিন (১০ মার্চ) বাড়িতে এসে বিষ মাখানো মিষ্টি দিয়ে যান সফিউল্লাহ। পাঁচটি মিষ্টি দুইজনকে খাওয়ান লিমা। এরপরই ২ শিশু অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। পরে হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়।

আনিসুর রহমান আরো বলেন, ঘটনার দিন সফিউল্লাহর সঙ্গে ১৫ বার ফোনে কথা বলেন লিমা। ফোনকলের সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কথা। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেয় লিমা। এ ঘটনায় ওই ২ শিশুর বাবা ইসমাঈল হোসেন গতকাল বুধবার বাদী হয়ে সফিউল্লাহ ও লিমার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে সফিউল্লাহ পলাতক আছেন। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন ও বিশেষ শাখার ডিআইও-১ ইমতিয়াজ আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের ২ ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিনের মৃত্যু হয়। তারা দুজনেই জ্বরে আক্রান্ত ছিল। সেজন্য তাদরেকে নাপা সিরাপ খাওয়ানো হয়েছিল। পরে ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ তাদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।

আরও পড়ুন
স্বদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত