ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

নাসার চাকরি ছেড়ে এলেন! কারণ, বাংলাদেশ এখন...

অর্থ-কড়ি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২৪ এপ্রিল ২০১৯  

একান্ত পারিবারিক আবহে প্রকৌশলী আজাদুল

একান্ত পারিবারিক আবহে প্রকৌশলী আজাদুল

এক সেমিনারে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আর ব্রেইন ড্রেইন নয়, ব্রেইন রিচ (মেধা পাচার নয়, মেধা সমৃদ্ধ) করতে চাই।

বাংলাদেশকে স্বপ্নময় দেশ হিসেবে গড়ার স্বপ্নে বিভোর প্রধানমন্ত্রীকে এমন উদ্দীপ্ত আর সাহসী কথা বলার পর থেকে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নজরে আসেন প্রকৌশলী আজাদুল হক। এরই ধারাবাহিকতায় প্রস্তাব আসে বাংলাদেশের অন্যতম নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও, পাওয়ার) পদে যোগ দেওয়ার জন্য। শেষতক চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ জ্বালানি প্রতিষ্ঠান কিন্ডার মর্গ্যান ছেড়ে ম্যাক্স গ্রুপে যোগ দেন তিনি। এর আগে তিনি চাকরি করেছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায়। 

অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীকে বলা কথাগুলো স্রেফ ফাঁকা বুলি ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের আপাত বৈভবময় শানশৌকত ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে এসে নিজের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ দিলেন আজাদ।

দেশে ফিরে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে যোগদানের বিষয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমেরিকায় থাকতাম বটে। তবে হৃদয় তো বাংলাদেশেই পড়ে থাকত। এর আগেও বহুবার এসেছি। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। মূলত দেশকে কিছু দেয়ার জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়াস ছিল। এখন কিছু দিতে পারা দায়িত্ব বলে মনে করছি।

তিনি আরো বলেন, সত্যি কথা বলতে কী, বাংলাদেশ এখন প্রস্তুত। দিনবদলের সারথি হতে পারাটাও সৌভাগ্যের বটে।

আজাদের বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকাতেই। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে ঢাকা কলেজ, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা। ১৯৮২ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন সেখানে। 

মার্কিন নাগরিকত্ব (গ্রিন কার্ড) পাওয়ার পর ১৯৯২ সালে দেশে ফিরে বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। আজাদ জানালেন, মূলত তিনি-ই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের মূল অবকাঠামো দাঁড় করান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ কিসলুর সঙ্গে বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্ট মিডিয়া কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম আধুনিক ব্যানার-ফেস্টুন তৈরির যাত্রা বলে জানান তিনি।

এরপর ১৯৯৮ সালে ফের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। যোগ দেন বিশ্বখ্যাত মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান- নাসায়, নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে। 

উত্তর আমেরিকায় প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন ‘ফোবানা’র সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার আগে একই সংগঠনে টানা চার বছর সেক্রেটারি ছিলেন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে আয়োজিত বিশ্ব প্রযুক্তি মেলায় অংশ নিয়ে সাইবার সিকিউরিটির ওপর বক্তব্য দেন। একই সময়ে বাংলাদেশে আয়োজিত অন্যান্য সেমিনারেও প্রযুক্তিবিদ হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ‘বিজ টু বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেন। 

এবার বাংলাদেশে ম্যাক্স গ্রুপে যোগদানের আগে আজাদুল হক তার ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেন, ‘সব বিত্ত, সব প্রাচুর্য, সব আরাম, আয়েস ছেড়ে আবার চলে এলাম তোমার কাছে। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আমি ম্যাক্স গ্রুপের (পাওয়ার) সিইও হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করতে আসছি এই এপ্রিল মাস থেকে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই অল্প কিছুদিন আগে ‘কোন’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, ‘আমরা ব্রেইন ড্রেইনকে করব ব্রেইন গেইন, কারণ আমরা বাংলাদেশকে করতে চাই ব্রেইন রিচ’। তারই ফলশ্রুতিতে আমি নিজেই নিলাম প্রথম সাহসী পদক্ষেপ।

তার নীতি হচ্ছে- কোনো কাজ অন্যকে করতে বলার আগে নিজে করে দেখানোটাই শ্রেয়।

আজকের বাংলাদেশ সম্পর্কে তার মূল্যায়ন হচ্ছে- এ বাংলাদেশ আর আগের বাংলাদেশ নয়। এ এক নতুন বাংলাদেশ, এক দৃঢ়, প্রত্যয়ী, সাহসী বাংলাদেশ।

আজাদুল হক আরও বলেন, আমি বাংলাদেশে এক ঝড় দেখতে পাচ্ছি। উন্নয়নের ঝড়। এই ঝড়ে শামিল হওয়া আমার মতো মানুষের কাছে ঈর্ষাও বটে। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এখন বাংলাদেশে আসা যায়। বাংলাদেশ বিশ্বখ্যাত প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদদের এখন ধারণ করতে পারে। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের মহাসড়কে হেঁটে নিজেদের সমৃদ্ধ করারও সময় এসেছে এখন। সূত্র: জাগোনিউজ২৪
নিউজওয়ান২৪.কম/এসএম

অর্থ-কড়ি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত