ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

তাস নিয়ে ‘কেরামতি’

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২৬ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

‘নাও ইউ সি মি’ সিনেমার সঙ্গে মোটামুটি সবাই পরিচিত। এই সিনেমার শুরুতেই ড্যানিয়াল এটলাসকে তাস নিয়ে খুব সুন্দর কেরামতি করতে দেখা যায়। বিভিন্ন ধরণের জাগল দিয়ে প্রথমেই সিনেমার প্রতি দর্শককে আগ্রহ বাড়িয়ে তোলেন তিনি। 

জাদুকর হোক কিংবা তাসের খেলা দেখানো কিংবা বড় বড় ক্যাসিনোর ডিলার, তাস নিয়ে প্রতিনিয়ত কেরামতি হচ্ছে পৃথিবীতে। তাসের এইসব কারিগরি বা কেরামতির নামই কার্ডিস্ট্রি।

কার্ডিস্ট্রি যদি কার্ড ট্রিকেরই অংশই হয়, তাহলে কেন আলাদা করে নাম দেয়া হলো এবার সেই প্রসঙ্গে আসি। এক যুগ আগেও কার্ডিস্ট্রি নামে কিছু ছিলো না। জাদু হোক বা হাত সাফাই, তাস নিয়ে কেরামতি দেখানো মানুষের অভাব তো কোনো কালেই ছিল না। ২০০৭ সালে বিশ্বখ্যাত ম্যগিাজিন ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ এই বিষয়টি নিয়ে একটি ফিচার করে। সেই ফিচারে সাংবাদিক কেভিন প্যাং প্রথম ‘কার্ডিস্ট্রি’ শব্দটা উল্লেখ করেন। কার্ড এবং আর্টিস্ট্রি, দুই মিলে কার্ডিস্ট্রি।

এরপর জন্ম হলো দুই ভাই ড্যান আর ডেভের। তারা ছোটবেলাতেই ঢুকে যান কার্ডের জাদুর জগতে। ক্রমশ তারা আবিষ্কার করেন কার্ডের বিভিন্ন ধরণের কেরামতি। এই দুই ভাই মিলে কতো যে খেলা তৈরি করেন তার কোনো শেষ নেই। বের করতে থাকেন একের পর এক ডিভিডি। কিশোর বয়সী ছেলে মেয়েদের কাছে এটি হয়ে উঠে খুবই জনপ্রিয়। 

ম্যাজিশিয়ানরাও তাদের জাদুতে আনেন নতুনত্ব। একে কেন্দ্র করেই আবার গড়ে ওঠে নতুন নতুন ব্যবসা। বাজারে আসে স্পেশাল কার্ড শুধু কার্ডিস্ট্রির জন্য। কেউ কেউ আবার কার্ডিস্ট্রিকে ভিত্তি করেই নতুন নতুন ট্রিক আবিষ্কার করেন। ভিজ্যুয়াল ম্যাজিকের জন্য অসাধারণ এক মাধ্যম এই কার্ডিস্ট্রি। দেখা যাচ্ছে, ম্যাজিশিয়ান একটা কার্ড নিয়ে বিভিন্ন খেলা দেখাচ্ছেন, হুট করে সেটা চেঞ্জ হয়ে গেলো যেটা খুবই শক্তিশালী ইফেক্ট।

ড্যান আর ডেভের পর আরো অনেক মানুষকেই এই কার্ডিস্ট্রির প্রতি ঝুঁকতে দেখা যায়। বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ানদেরও দেখা যায় কার্ডিস্ট্রি ব্যবহার করতে। কিছুদিন আগে আমেরিকা গট ট্যালেন্ট চ্যাম্পিয়ন শিন লিম, ক্রিস রামসিসহ অনেক ম্যাজিশিয়ানকেই বিভিন্ন ম্যাজিক ট্রিকে কার্ডিস্ট্রি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। প্রতি বছর কার্ডিস্ট্রি কন আর বিশ্ব কার্ডিস্ট্রি চ্যাম্পিয়নশিপও হচ্ছে।

কার্ডিস্ট্রি কিশোর-কিশোরিদের মধ্যে সাড়া ফেলার মূল কারণ হচ্ছে বিষয়টি দেখতে অসাধারণ। বিভিন্ন অ্যাক্ট এর কম্বিনেশন করলে তো কোনো কথাই নেই। বর্তমান কিশোর-কিশোরিদের কাছে বিষয়টি ‘কুল’। এজন্যই মূলত জিনিসটা দ্রুত ছড়িয়ে পরেছে। ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম আর ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কার্ডিস্ট্রির অনেক ভিডিও দেখা যায়।

কার্ডিস্ট্রি কয়েক ধরণের হয়ে থাকে। কার্ড ফ্লোরিশিং হলো কার্ড শাফলের একধরনের উপায়। এর মাধ্যমে নরমাল শাফল সেইসঙ্গে ফেইক শাফলও দেয়া যায়। নরমাল শাফল হলো কার্ড ওলোট পালট করা। আর ফেইক শাফল হলো দেখানো যে কার্ড ওলট পালট হচ্ছে কিন্তু আসলে প্রত্যেকটা কার্ডই নিজ জায়গায় থেকে যায়। 

এরপর আলোচনা করতে হয় মোশনের। কার্ডগুলোকে বিভিন্ন ফর্মে নিয়ে এমন কিছু মোশন দেয়া হয় বা এমনভাবে মুভ করা হয় যা দেখতে খুবই সুন্দর এবং অসাধারণ। এরপরের পার্ট হলো বিল্ডিং। কার্ডগুলোকে বিভিন্ন পার্ট করে কেটে এমনভাবে ফর্ম করা হয় যে একটা স্ট্রাকচার দাঁড়িয়ে যায়। এর মাধ্যমে একে বিভিন্ন ফর্ম দেয়া যায়। এরপর হলো কার্ড থ্রোয়িং। কার্ডগুলোকে ছুড়ে দিয়ে সেটা লুফে নেয়া। একটা মাত্র কার্ড বা কয়েকটা কার্ড দিয়ে আবার পুরো ডেককেও ফ্লিপ করানো যায়।

পুরো বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই কার্ডিস্ট্রি বর্তমানে এদেশেও প্রবেশ করেছে। কিন্তু কার্ডিস্ট্রি জিনিসটার সঙ্গে এদেশ এখনো তেমনভাবে পরিচিত নয়। ফেসবুকে বা ইউটিউবে প্রায়শ কার্ডিস্ট্রি পারফর্ম করতে দেখা যায়। আশা করা যাচ্ছে কয়েক বছরের মধ্যে এই আর্ট এদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলবে।

নিউজওয়ান২৪/এএস