ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

তাদের পাশে কেউ নেই! ক্ষমা চেয়ে এবার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি...

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন (ডানে) ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী (বামে)       -ফাইল ফটো

ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন (ডানে) ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী (বামে)       -ফাইল ফটো

সাম্প্রতিক ঘনাপ্রবাহ ও নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পর সভাপতি সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ক্ষমা প্রাথণা করে এক দীর্ঘ পত্র লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী বরাবরে। প্রসঙ্গত, কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার রাতে গণভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় বোর্ডের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। কষ্ঠভরা কণ্ঠে এসময় তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের এমন নেতা চাই না, যাদের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ পর্যন্ত ওঠে!’ ওই যৌথসভার পর পরই শোভন ও রাব্বানীর গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস বাতিল করা হয়। এরপর এই দুই ছাত্রনেতা কয়েক দফা গণভবনে প্রবেশের প্রাণান্ত চেষ্টা করেও সফল হননি। এছাড়া ছাত্রলীগের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোয় যারপরনাই ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে গত সোয়অ এক বছরে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েনি ছাত্রলীগ শীর্ষ নেতৃত্ব। বলা যায় প্রধানমন্ত্রী রুষ্ঠ হওয়ায় তাদের পায়ের নিচে এখন মাটি নেই অবস্থা। এমন বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে সংগঠনের প্যাডে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গকরণসহ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার একজনের কাছে দেওয়া হয়েছে। এই চিঠিতে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর যৌথ কৈফিয়ত প্রকাশ পেয়েছে।  
ওই চিঠির শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে ‘মমতাময়ী নেত্রী’ বলে সম্বোধন করা হয়। এরপর বলা হয়েছে-
‘আপনি বিশ্বাস করে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির যে পবিত্র পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলাম। দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই চতুর্মুখী চাপ, সদ্য সাবেকদের অসহযোগিতা, নানা ষড়যন্ত্র, প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা আর আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত কিছু ভুল ইতিবাচক পরিবর্তনের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণের ব্যর্থতা ও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির বাইরেও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, প্রিয় নেত্রী দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙে আপনি নিজে পছন্দ করে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে আমরা একটি বিশেষ মহলের চক্ষুশূল। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে ও প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সুকৌশলে আপনার এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কান ভারী করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

আপনার সন্তানরা এতটা খারাপ না। আমরা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি বারবার। অনেক অব্যক্ত কথা রয়েছে, যা আপনাকে বলার কখনও সুযোগ পাইনি। বিভিন্ন মাধ্যমে শ্রুত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রকৃত সত্যটুকু উপস্থাপনের সুযোগ চাই।

অভিযোগ-১ :২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর নতুন পার্টি অফিসে আপনার আবেগের ঠিকানায় আমাদের ঠাঁই দিয়েছেন। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আপনার আমানতকে সযত্নে রেখেছি। অফিস অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা করা নিয়ে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দায়িত্বপ্রাপ্ত শাহজাহান ভাই চায় না ছাত্রলীগ এখানে থাকুক। লোক দিয়ে বাইরে থেকে ময়লা ফেলে, বাথরুম ও দেয়াল অপরিচ্ছন্ন করে সেগুলোর ছবি তুলে আপনাকে দেখানো হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মিন্টু ভাই, লোকমান ভাই এবং ক্লিনার জাবেদ ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত সত্য জানতে পারবেন।

অভিযোগ-২ :২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনের দেরি প্রসঙ্গে- ১৮ জুলাই আপনি দেশের বাইরে যাবার আগে অনুমতি নিয়ে ১৯ তারিখ আম্মুর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এবং সভাপতি মাদারীপুর গিয়েছিলাম। ওই দিন সারারাত নির্ঘুম জার্নি আর বেশ কয়েকটি পথসভা (সর্বশেষ সকাল ৮টায় সাভারে) করে সকাল ৯টায় ঢাকা ফিরি। রেস্ট নিয়ে পূর্বনির্ধারিত ১২টার সম্মেলনে পৌঁছাতে আমাদের ৪০ মিনিট দেরি হয়, যা অনিচ্ছাকৃত এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্বেই অবগত। সকালে ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার বিষয়টিও অতিরঞ্জিত। গত ১ বছরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সকল কর্মসূচিতে (সকাল ৭টা-৯টা পর্যন্ত) আমরা উপস্থিত থেকেছি এবং যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। ডাকসুর জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মধুর ক্যান্টিনে কম উপস্থিতি নিয়ে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা অতিরঞ্জিত।

অভিযোগ-৩ :জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ আপনার কাছে ভিন্নভাবে উত্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য ম্যামের স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ম্যাম আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। নেত্রী, ওই পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি, যা সমীচীন হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

সবকিছুর পরেও আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুলগুলোর জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, মানবতার মা। নিজ বদান্যতায় আমাদের ক্ষমা করে ভুলগুলো শুধরে আপনার আস্থার প্রতিদান দেওয়ার সুযোগটুকু দিন। আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে যাবার কোনো জায়গা নেই।’ চিঠির শেষে লেখা আছে ‘আপনার স্নেহের রাব্বানী’

এদিকে, জানা গেছে, এমন বাস্তবতার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা চেষ্টা করছেন আমাদের নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে।’ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সরকারি দলের একজন নেতা এ প্রসঙ্গে কিছুটা আক্ষেপ করে বলেন, আপফসোস! এ উপলদ্ধি যদি তাদের আগে হতো... ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের কনসার্টে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে মাফ পেয়েছিলেন তারা। তবে এবার ফের সেরকম হচ্ছে বলে মনে করছেন না অনেকে। কারণ, ছাত্রলীগ নিয়ে বিশেষ আবেগ লালন করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার নিজেই এই কমিটি দিয়েছিলেন।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরএস

আরও পড়ুন