ঢাকা, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে অসন্তোষ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবিতে  ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের ভবিষ্যত নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি। 

২০ দলীয় শরিকদের অভিযোগ, বিএনপিতে জোটের তুলনায় ঐক্যফ্রন্টের প্রাধান্য বাড়ছে। ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে জোটের অসন্তোষের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দলটি। অন্যদিকে ২০ দল শরীক জামায়াত বিরোধীতায় সরব হয়ে উঠেছে গণফোরামসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনীতি এখনো দুটি ধারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নির্বাচনী সংস্কৃতিও তেমনি। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়।

নির্বাচনে বড় বিজয় নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করছে। অথচ ঠিক তখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করে পুনঃনির্বাচনের দাবি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ভোট বর্জন করায় এবারো সংসদে দলটির কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। আর আগামীতে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে কতটুকু সফলতা আসবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন।

পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে অভিযোগ করে ২০ দলের শরীক একাধিক সিনিয়র ও দায়িত্বশীল নেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির কাছে ২০ দলীয় জোটের চেয়ে ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্ব বেশি বলে মনে হচ্ছে।

তারা বলেন, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেভাবে সামনের দিকে এগোচ্ছে, তা দেখে মনে হচ্ছে শুধুমাত্র কয়েকজন নেতা ব্যক্তিগত ফায়দা লুটতে এ জোট করেছে। তারা দলীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সামনে এমন কাজ করবে, যাতে করে বিএনপি তাদের বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়। সেসব ব্যক্তি তখন দলকে দোষী করে ভিন্নপথে হাঁটবে। এছাড়া এখনই বিএনপির ভেতরে চলছে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বের সমাপ্তি কী তা সময়ই বলে দেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা সংবাদমাধ্যমকে প্রশ্ন রেখে বলেন, বিএনপির কতটুকু লাভ হয়েছে ঐক্যফ্রন্ট করে?

তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট বিএনপিকে কী দিলো? ২০ দলীয় জোট যদি ঐক্যফ্রন্ট ছাড়াও নির্বাচন করতো তাহলে ফলাফল হয় তো আরো ভালো হতো।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির সমন্বয়ে বিএনপির ৩ দফা কর্মসূচি ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি। কিন্তু কেনো জানানো হয়নি সেটিও আমাদের বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে থেকে সমানভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি বা এখনো হচ্ছি। কিন্তু আমাদের পাশ কাটিয়ে কেনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো সেটি আমাদের বুঝে আসে না। তাহলে কি বুঝবো বিএনপিতে ২০ দলের প্রয়োজন নেই?

তিনি আরো বলেন, আগামীতে জোটগত বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আমরা তখন এসব নিয়ে কথা বলবো।

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান বলেন, জোটকে পাশ কাটিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ৩ দফা কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। তিনি বলেন, বিএনপির কাছে ২০ দল যদি গুরুত্বহীন মনে হয়, তাহলে জোট বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেই হয়। শুধু নামমাত্র জোট রেখে লাভ কি?

জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিএনপিকে জোটের ইমাম মেনেছি। ঐক্যফ্রন্টের সভায় বিএনপি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের সভায় বিএনপির উচিত সেসব সিদ্ধান্ত জানানো।

৮ জানুয়ারি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়। এরপর জাতীয় সংলাপসহ ৩ দিনের কর্মসূচি দেয় ঐক্যফ্রন্ট।

অপরদিকে, গত ৩১ ডিসেম্বর ২০ দলের সবশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে জোটের নেতারা অভিযোগ তোলেন সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে বিএনপি।

বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, প্রার্থী মনোনয়নে ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির কাছে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে। কিন্তু ২০ দল সে তুলনায় অগ্রাধিকার পায়নি। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিএনপির কাছে ঐক্যফ্রন্টের প্রাধান্য বাড়ছে। আর ২০ দলীয় জোটের প্রাধান্য কমে যাচ্ছে।

এদিকে ২০ দলের অন্যতম শরীক জামায়াতকে নিয়ে বেঁকে বসেছে গণফোরাম। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। নির্বাচনে হারের জন্য জামায়াত সঙ্গকে দুষছেন ফ্রন্ট নেতারা। গেলো শনিবার ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০ দলীয় জোট শরীক জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া ছিল ভুল সিদ্ধান্ত।

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি আরো বলেন, আমি যখন ঐক্যে সম্মতি দিয়েছি, তখন জামায়াতের কথা স্মরণে ছিল না। জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করার কোনো ধরনের ইচ্ছা নেই বলেও জানান তিনি।

ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, দ্রুত ঐক্যফ্রন্ট গঠন করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত যেসব ভুল-ক্রটি হয়েছে, তা সংশোধন করে ভবিষ্যতের জন্য সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা হবে।

অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি বলতে কী বুঝানো হয়েছে এবং জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যকেই বুঝানো হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, একটা ভালো উদাহরণ আপনি দিয়েছেন। এটাকেও আমি মনে করবো, ইয়েস।

‘আমি অলরেডি পাবলিকলি বলেছি, এটা তো আমার জানাই ছিল না। আমি যখন সম্মতি দিয়েছি তখন এটা আমাকে জানানো হয়নি। অন্তত আমার মতে সেটা ভুল ছিল।

জামায়াত ছেড়ে বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্টে আসতে চাপ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, জামায়াতকে ছেড়ে আসতে বিএনপিকে চাপ দেয়া হতে পারে।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াত থাকলে ভবিষ্যতে ঐক্যফ্রন্টে আপনারা থাকবেন কি-না প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, জামায়াতকে নিয়ে কোনো রাজনীতি করবো না। অবিলম্বে এ বিষয় বিএনপির কাছে সুরাহা চাইবো।

নিউজওয়ান২৪/এনআর

আরও পড়ুন