ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

এস কে সিনহাসহ ১১ জনের নামে চার্জশিট দাখিল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

এসকে সিনহা                         -ফাইল ফটো

এসকে সিনহা -ফাইল ফটো

দুদকের দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আজ (সোমবার) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক বেনজীর আহমেদ অভিযোগপত্র জমা দেন। তবে মৃত হিসেবে প্রমাণ মেলায় চার্জশিট থেকে এক আসামির নাম বাদ দেয়া হয়েছে এবং নতুন করে একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এস কে সিনহা ও অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। নতুন করে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতি ওরফে বাবুল চিশতিকে।

ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এস কে সিনহা ও বাবুল চিশতি ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) সাবেক এমডি একেএম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা ও তাঁর স্ত্রী সান্ত্রী রায়। এজাহার নামীয় আসামি জিয়াউদ্দিন আহমেদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। 

গত ৪ ডিসেম্বর দুদক কমিশনের সভায় অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ১০ জুলাই সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ৪ কোটি টাকা ভূয়া ঋণ নিয়ে একই দিনে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করেন। পরে ওই টাকা ব্যক্তিগত হিসাব থেকে অস্বাভাবিক নগদে এবং চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অন্য হিসাবে হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন, পাশাপাশি ওই টাকার উৎস ও অবস্থান গোপনের মাধ্যমে পাচার বা পাচারের চেষ্টায় সম্পৃক্ত।

চার্জশিটে বলা হয়, জনৈক মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা (জানা গেছে শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র পরস্পর ঘনিষ্ঠ বন্ধু)  ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি চলতি হিসাব খোলেন। এর পরদিনই তাঁরা ২ কোটি করে ৪ কোটি টাকা ঋণের আবেদন জন্য করেন ব্যাংকে। হিসাব খোলা এবং ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই নিজ নিজ ঠিকানা বাড়ি নম্বর ৫১, সড়ক নম্বর ১২, সেক্টর ১০, উত্তরা আবাসিক এলাকা উল্লেখ করেছেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, উত্তরা সেক্টর ১০ এর ১২ নম্বর সড়কের ওই ভবনটি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যক্তিগত বাড়ি।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, ঋণসংক্রান্ত আবেদন দুটি কোনোরকম যাচাই বাছাই ও রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ না করেই এবং ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতি না মেনেই শুধু গ্রাহকের আবেদনের ওপর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণপ্রস্তাব তৈরি করে হাতে হাতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে ক্রেডিট কমিটির কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই অফিস নোট তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর দিয়ে সাবেক এমডি এ কে এম শামীমের কাছে নিয়ে যান আবেদনপত্র। ব্যাংকের ঋণ নীতি অনুযায়ী ঋণদুটির প্রস্তাব অনুমোদন করার ক্ষমতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও তিনি এ-সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই বা নির্দেশনা না দিয়ে ওই ঋণপ্রস্তাব দুটির অনুমোদন দেন।

ওই ঋণ দুটি অনুমোদন হওয়ার পরের দিনই অনুমোদিত ৪ কোটি টাকার পৃথক ২টি পে-অর্ডার সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে ইস–্য করা হয়। পরে ওই পে-অর্ডার সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার হিসাবে জমা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, এস কে সিনহা বিভিন্ন সময়ে অস্বাভাবিক ক্যাশ ও চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং এ সংক্রান্ত কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে বিতর্কিত হয়ে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে তিনি বিদেশ থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। 
নিউজওয়ান২৪.কম/এসএমএস

আরও পড়ুন
আইন আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত