ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘এরিকের অশ্রুতে পাথরও গলে, গলে না রাজনীতিবিদদের মন’

নিউজওয়ান স্পেশাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:২৫, ১৫ জুলাই ২০১৯  

বিদিশা এবার ছেলে উদ্ধারের যুদ্ধ শুরু করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। আজ সোমবার সকালে নিজের দুটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের একটিতে  তিনি এ ঘোষণা দেন। এর আগে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তিনি রাজধানীর বারিধারায় এরশাদের ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ নামের বাসভবনে ঢুকে ছেলে এরকিকে দেখার চেষ্টা করে বিফল হয়েছেন। দ্য প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী  বিদিশার অভিযোগ, তাঁকে ওই ভবনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে বিদিশা  বলেন, ‘আমার ছেলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। ওর সঙ্গে আমার দেখা হওয়া দরকার। কিন্তু ওই বাসভবনে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’ 

কারা কিংবা কে আপনাকে সেখানে প্রবেশে বাধা দিয়েছে- এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘গেটে অনেক লোক ছিল। নিরাপত্তাকর্মী এবং দলের লোকজনও ছিল। আমি আবারও ওই ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করবো। এরিকের কাছে আমাকে যেতেই হবে।’ 

গতকাল অনলাইনে এমনও সংবাদ প্রকাশ হয় যে, বিদিশা বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই তথ্য সঠিক নয়। আমি সংবাদ সম্মেলন করবো স্যারের (এরশাদ) দাফন শেষ হওয়ার পর।’ 

সাবেক স্বৈরাচার এবং মৃত্যুকালে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এরশাদের সাবেক এই স্ত্রী জানান, এরশাদের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে গতকাল রবিবার রাতেই ভারতের আজমীর শরীফ থেকে ঢাকায় চলে আসেন। পরদিন সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢোকার ব্যর্থ চেষ্টার পর কাকরাইলে গিয়েছিলেন। ইচ্ছা ছিল শেষবারের মতো এরশাদের মরদেহ দেখা। কিন্তু সেখানেও উপযুক্ত পরিবেশ পাননি বলে জানান তিনি। 

বিদিশা সোমবার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাবার মৃত্যুতে আমার ছেলে এরিক-এর কান্নায় দেশবাসীও কেঁদেছে। আমি পাগলের মতো ছুটে চলে এসেছি দেশে। কিন্তু দেশে এসেও বাধার শিকার আমি। কোথায় স্বামীর লাশ, কোথায় ছেলে? আমার সাথে এরিককে কথাও বলতে দিচ্ছে না। দেখা করাতো দূরের কথা। এমনিতেই আমার ছেলে প্রতিবন্ধী। এই সময় যেখানে মাকে বেশি প্রয়োজন, তখন আমার ছেলেকে নিয়েও  রাজনীতি। শেষ পর্যন্ত মা হিসেবে ছেলের জন্য যদি জীবন দিতে হয় আমি তাই করবো।’

বিদিশা সাবেক স্বামী এরশাদের দাফন রংপুরে করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। দলের অন্য নেতাকর্মী, যারা রংপুরেই এরশাদের দাফনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তাদের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে বিদিশা নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘আমিও তাই চাই। লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীর মতো আমিও চাই রংপুরের মাটি যেন হয় এরশাদের শেষ ঠিকানা। সহধর্মীনি থাকতে বহুবার পল্লীনিবাসে বারান্দায় ছেলে এরিককে কোলে বসিয়ে উনি আমাকে বলেছিলেন, তুমি আমার ছোট। দেখো আমার মৃত্যুও যেন আমাকে আমার ছেলের কাছে থেকে দূরে না রাখে। আমার কবর আমি এই পল্লীনিবাসে চাই। রংপুরের মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান আমি দিতে পারিনি আজও। রংপুরের মানুষ আমার কবরে এসে দোয়া করবে এটাই আমার চাওয়া। প্রতিবার এই কথাটি বলতেন তিনি এরিকের দিকে তাকিয়ে, ভিজে চোখে। আজ সদ্য বাবাহারা ছেলে আমার মায়ের আশ্রয়েও নেই। এরিকের চোখের পানিতে পাথরও গলে যায়। কিন্তু গলে না রাজনীতিবিদদের মন। আমার ছেলে এরিককে আটকিয়ে রাজনীতির কোন ফায়দা লুটবেন এনারা?’

এরশাদ-বিদিশার প্রথম দেখা 
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গে বিদিশা ইসলাম সিদ্দিকের প্রথম দেখা হয় ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই, ঢাকায় ফরাসি রাষ।ট্রদূতের বাসায়। ১৪ জুলাই ফ্রান্সের জাতীয় দিবস। ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসায় ডিনার পার্টিতে গিয়েছিলেন বিদিশা। এরশাদের সাথে সে সময় ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত র‌্যানে পরিচয় করিয়ে দেন বিদিশাকে। সেই পরিচয়ের সূত্রে পরে বিদিশাকে ঘরনী করেন এরশাদ।

এদিকে, এরশাদ মারাও গেলেন ১৪ জুলাই। এই বিষয়টিতে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। রোববার (১৪ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে বিদিশা তার ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এ জন্মে আর দেখা হলো না। আমিও আজমীর শরিফ আসলাম আর তুমিও চলে গেলে। এত কষ্ট পাওয়ার থেকে মনে হয় এই ভালো ছিল। আবার দেখা হবে হয়তো অন্য এক দুনিয়াতে যেখানে থাকবে না কোনও রাজনীতি।’

এছাড়া বিদিশা নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে কালো ব্যাজের ছবি দিয়েছেন। ১৪ জুলাই এর আগে সকাল পৌনে ৮টার দিকে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি মারা যান।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে


 

আরও পড়ুন