এত ‘হৃৎপিণ্ড’ দিয়ে ওরা করেটা কী?

একটা-দুটো নয় বরং তিন তিনটে হৃৎপিণ্ড আছে অক্টোপাসের! ব্যাপারটা অদ্ভুত, তাই না? 

এত হৃৎপিণ্ড দিয়ে ওরা করেটা কী? তিনটা হৃৎপিন্ডের একটা অক্টোপাসের পুরো শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে এবং বাকি দু’টো হৃৎপিণ্ড ফুলকাগুলোতে রক্ত সরবরাহ করে। আসল ব্যাপার হলো, অক্টোপাসের রক্ত মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্তের চেয়ে একদম আলাদা।

মেরুদন্ডী প্রাণীদের রক্তের প্রধান বৈশিষ্ট্য লোহিত রক্তকণিকায় আয়রন বা লোহাযুক্ত হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতি। এই হিমোগ্লোবিনের জন্যই রক্তের রং লাল হয়। অন্যদিকে, অক্টোপাসের রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকে না বরং কপার বা তামাযুক্ত হিমোসায়ানিন নামক রঞ্জক পদার্থ রক্তরসে সরাসরি দ্রবীভূত থাকে। হিমোসায়ানিনের বর্ণ কিন্তু নীল। তার মানে অক্টোপাসের রক্ত লাল নয়, নীল!

হিমোসায়ানিনও হিমোগ্লোবিনের মত অক্সিজেন পরিবহনের কাজ করে। তবে হিমোসায়ানিন হিমোগ্লোবিনের মতো এতটা দক্ষ নয়। তাই একটা হৃৎপিণ্ড হলে পুরো শরীরের প্রয়োজন অনুসারে অক্সিজেনের সরবরাহ হতো না। সেজন্য তিনটি হৃৎপিণ্ড লাগে এদের।

তিনটে অনেক বেশি রক্তচাপ তৈরি করতে পারে। ফলে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে দেহে অক্সিজেনের সঠিক সরবরাহ বজায় রাখে। মনে হতে পারে হিমোসায়ানিনের বদলে হিমোগ্লোবিন থাকলেই তো হতো। এত ঝামেলার দরকার ছিল না তখন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো, অক্টোপাস সমুদ্রের অনেক গভীরে থাকে। গভীর সমুদ্রের ঠাণ্ডা পরিবেশে অক্সিজেনের ঘনত্ব অনেক কম। হিমোগ্লোবিনের চেয়ে হিমোসায়ানিন অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে অক্সিজেন পরিবহনের কাজ করতে পারে।

তাই হিমোসায়ানিন যুক্ত রক্তই হয়ে ওঠে অক্টোপাসের অক্সিজেন পরিবহনের প্রধান বাহক। তবে হিমোসায়ানিনের কার্যকারিতা আবার পানির অম্লতার ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। পানির অম্লত্বা বেশি হলে অক্টোপাস সহজে শরীরে অক্সিজেন সংবহন করতে পারে না। তাই পরিবেশবিদরা সমুদ্রের পানি দূষণ ও সামুদ্রিক জীবন নিয়ে বেশ চিন্তিত। 

যাই হোক অক্টোপাসের তিনটি হৃৎপিণ্ড থাকলেও সব সময় এগুলো কাজে লাগেনা। অক্টোপাস যখন সাঁতার কাটে তখন যে হৃৎপিণ্ড পুরো শরীরে রক্ত সরবরাহ করে সেটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। হয়তো সে কারণেই অক্টোপাস সাঁতার কাটার চেয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতে বেশি পছন্দ করে। আচ্ছা ভাবুন তো, একটা অক্টোপাস যদি আরেকটা অক্টোপাসকে গুলি করে মারতে চায় তাহলে কোন হৃৎপিন্ডে গুলি করবে!

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ