একটি অসমাপ্ত দিনলিপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ছবি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ– মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। এতো গণহত্যা, ধর্ষণ ও নিষ্ঠুরতা পৃথিবী এর আগে আর দেখেনি।হিটলারের নাৎসি বাহিনী পৃথিবী থেকে ইহুদি জাতির চিহ্ন মুছে দেয়ার সংকল্প গ্রহণ করে। এজন্য পুরো ইউরোপ জুড়ে শুরু হয় ইহুদিদের উপর নির্যাতন।
যা পরবর্তীতে শ্রমিক ক্যাম্পে বন্দী ও গ্যাস চেম্বারে গণহত্যার রূপ নেয়। ইহুদিদের উপর এই অমানুষিক অত্যাচার ও হত্যাই ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। এই হলোকাস্ট সময়ের বিভৎস সব বর্ণনা হলিউডের অনেক সিনেমায়, ডকুমেন্টরি ও উপন্যাসে পাওয়া যায়। এর মধ্যকার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো একটি ১৫ বছরের মেয়ের দিনলিপি। যা “দ্য ডায়েরি অফ এ ইয়াং গার্ল” নামে পরিচিত।
অ্যানি ফ্রাঙ্ক পুরো নাম “অ্যানেলিস ম্যারি ফ্রাঙ্ক”। তার জন্ম ১৯২৯ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট শহরে এক ইহুদি পরিবারে। ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে ইহুদিদের উপর অত্যাচার চরমে পৌছালে এই ইহুদি পরিবারটি পাড়ি জমায় নেদারল্যান্ডসে। একারণেই জন্ম জার্মানিতে হলেও শৈশবের বেশিরভাগ সময়ই তার কাটাতে হয়েছিল নেদারল্যান্ডস এর আর্মস্টারডম শহরে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৪০ সালে নাৎসি বাহিনী নেদারল্যান্ড দখল করে নেয়। তারা জার্মানি এর মত নেদারল্যান্ডসেও ইহুদিদের উপর নৃশংসতা শুরু করে। অ্যানি ফ্রাঙ্কের পরিবার নেদারল্যান্ডস ত্যাগ করার চেস্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। এরপর আর্মস্টারডমের একটি ফ্যাক্টরির চিলেকোঠার অ্যানির পরিবার লুকিয়ে বসবাস শুরু করে। অ্যানির বাবা অটো ফ্রাঙ্ক এই ফ্যাক্টরিতেই কাজ করতেন। সেখানে অবস্থানরতকালেই ১২ জুন ১৯৪২ সালে অ্যানির ১৩ তম জন্মদিনে তার বাবা অ্যানিকে একটি ডায়েরি গিফট করেন। এই ডায়েরিই পরবর্তীতে পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। কিন্তু কি ছিলো অ্যানির ডায়েরিতে যা পৃথিবীর অন্যতম সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ে রুপান্তরিত হয় এটি?
অ্যানি তার ডায়েরির নাম দেয় কিটি। ১৩ বছরের অ্যানি তার চমৎকার লিখনীর মাধ্যমে ডায়েরিতে তুলে ধরেন তার দৈনন্দিন জীবন। তার এই ডায়েরিতেই ফুটে উঠেছিল একটি ১৩ বছরের কিশোরির ইচ্ছা, আশা, ভরসা, ভালোলাগা ও মন্দলাগা। অ্যানি হয়তো তখনো কল্পনা করেনি তিনি কি ভয়ানক বিভীষিকাময় দিন কাটাতে চলেছেন। তার লেখা ছিল সহজ সরল ও সাবলীল। যা এই ডায়েরির আলোড়ন সৃষ্টির অন্যতম কারণ। যত দিন অতিবাহিত হতে থাকে অ্যানির পরিবারের দুঃখ-দূর্দশা ও ভয় ততোই বাড়তে থাকে। কিন্তু কিসের ভয়? ভয় ছিল ধরা পরে যাওয়ার। জার্মান বাহিনীর কাছে ধরা পরলে তাদের পরিণাম হয়তো মৃত্যুর চেয়েও খারাপ হবে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। প্রথমদিকে অ্যানি পরিবার লুকিয়ে ঘরের বাইরে যেতে পারত। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে তারা ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রায় দু’বছর এই পরিবারটি গৃহবন্দী থাকে। এসময় খাবার ও অন্যান্য সামগ্রীর জন্য তাদের বন্ধু ও দয়াবান স্থানীয়দের উপর নির্ভর করতে হত। এই বন্দী দু’বছরের সকল খুটিনাটিই কিশোরি অ্যানির ডায়েরিতে ফুটে উঠেছে। অ্যানির ডায়েরিতে ১২ জুন ১৯৪২ থেকে ১ আগস্ট ১৯৪৪ পর্যন্ত লেখা পাওয়া যায়। কিন্তু কি হয়েছিল ১লা আগস্ট ১৯৪৪ এরপর?
৪ আগস্ট ১৯৪৪ সালে অ্যানির পরিবারকে পুরস্কারের আশায় তাদের এক প্রতিবেশী জার্মান গুস্তাপোর কাছে ধরিয়ে দেয়। অ্যানি ও তার পরিবার বন্দী হয়। পরবর্তীতে, এই পরিবারটিকে কুখ্যাত শ্রমিক ক্যাম্প “অসউইক” প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে অ্যানি ও তার বোনকে “বার্গেই রেলসন” ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়। এই ক্যাম্পেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে অ্যানি মৃত্যুবরণ করেন। যুদ্ধশেষে ফ্রাঙ্ক পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য ছিলেন অ্যানির বাবা। তিনি আমস্টারডমে ফিরে আসেন। মাইপ গিয়াস নামে এক মহিলা বন্দীদশায় ফ্রাঙ্ক পরিবারকে খাবার যোগান দিয়ে সাহায্য করতেন। তিনিই অ্যানির ডায়েরি খুজে বের করেছিলেন এবং অ্যানির বাবার হাতে তুলে দেন। অনেক চেস্টায় তার বাবা কনটাক্ট পাবলিসিং দ্বারা ডাচ ভাষায় “হেট একটেরহাইস” নামে ডায়রিটি প্রথম বই আকারে বের করেন। প্রকাশের পর থেকেই বইটি বিশ্বব্যাপী সারা ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে ইংরেজি ভাষায় ডাবলডে ও কম্পানি দ্বারা বইটির ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয় “অ্যানি ফ্রাঙ্ক-দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল” শিরোনামে।
প্রকাশের পর থেকে দ্য ডায়েরি অফ এ ইয়াং গার্ল পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত বই। এই বই থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে ১৯৫৯ সালে প্রথম ‘দ্য ডায়েরি অব অ্যানি ফ্রাঙ্ক’ সিনেমা নির্মিত হয়। পরবর্তীতে অনেক সিনেমা ও নাটক তৈরি হয়েছে। এতে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের সহানুভূতি অর্জন করেছে ফ্রাঙ্ক পরিবারসহ তৎকালীন যুদ্ধে নিহত পরিবারগুলো। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে অ্যানির পরিবার এবং হাজার হাজার এমন পরিবার কি এর সিকিভাগ সহানুভূতি পেয়েছিল?
- বাঙালির বংশ পদবীর ইতিহাস
- গন্ধভাদালি লতার উপকারিতা
- মিশরীয় সভ্যতা এবং নীল নদ
- ‘ময়ূর সিংহাসন’
- ব্যবহারের আগে জানুন প্লাস্টিক বোতলে চিহ্নের মানে কী
- মধ্যযুগের ইতিহাস
- পবিত্র কাবা শরীফের অজানা যত তথ্য
- হ্যালুসিনেশন আসলে কী, রোগ না অন্য কিছু?
- পিরামিডের অজানা তথ্য…
- বিকাশ নগদ এবং রকেট’র ভুল নম্বরে টাকা চলে গেলে ফেরত পাবেন যেভাবে
- চুম্বকের আদ্যোপান্ত...
- ‘চুম্বন’ আদর ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
- ‘রক্ত’ রঙের রহস্য...
- ‘ধানমন্ডি’ নামকরণের ইতিহাস
- মানুষের পর বুদ্ধিমান প্রাণী...