ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

সালাতুয যোহার গুরুত্ব-ফজিলত 

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি


‘সালাতুয যোহা’ নফল ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি সালাত বা নামাজ। এ সালাত আদায়ের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রভূত নেকী হাসিল করা যায়।

বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সালাতকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সালাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ সালাতকে ইশরাকের সালাতও বলা হয়। সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে ‘সালাতুল ইশরাক’ এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে ‘সালাতুয যোহা’ বা চাশতের সালাত বলা হয়। (সালাতুর রাসূল (সা.), পৃ. ২৫৪)।

আসুন নিম্নের হাদিসগুলোর মাধ্যমে সালাতুয যোহার অপরিসীম গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অনুধাবন করার চেষ্টা করি-

(১) আবু যর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের শরীরের প্রতিটি অস্থি প্রতিদিন নিজের ওপর সদকা ওয়াজিব করে। কারো সাক্ষাতে তাকে সালাম দেওয়া একটি সদকা। সৎ কাজের আদেশ দেওয়া একটি সদকা, অন্যায় থেকে নিষেধ করা একটি সদকা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে ফেলা একটি সদকা। নিজ স্ত্রীর সঙ্গে সংগত হওয়াও একটি সদকা। তবে চাশতের ২ রাকআত সালাত এসব কিছুর পরিপূরক হয়ে যাবে। (মুসলিম হা/৭২০; আবুদাঊদ হা/১২৮৫, সনদ সহিহ)।

(২) আবু বুরায়দা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের শরীরে তিনশ’ ষাটটি জোড়া আছে। প্রত্যেক মানুষের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্য সদকা করা। সাহাবিগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা)! কার সাধ্য আছে এ কাজ করার? তিনি বললেন, মসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি সদকা। পথ থেকে কোনো কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেওয়াও একটি সদকা। কিন্তু তিনশ’ ষাট জোড়ার সদকা দেবার মতো কোনো কিছু না পেলে তোমরা যোহার দু’রাকআত সালাত আদায় করে নিও। সেটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে।’ (আবুদাঊদ হা/৫২৪২; মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১৫, ১৩১১)।

(৩) আবুদ্দারদা ও আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তারা বলেন, ‘আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। তা হলো, (১) প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম পালন করা (২) সালাতুয যোহা আদায় করা (৩) বিতর সালাত আদায় ব্যতীত না শোয়া। (বুখারি হা/১১৭৮, মুসলিম হা/৭২২)।

(৪) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের সালাত আদায়ের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকিরে মশগূল থাকল, অতঃপর (সূর্যোদয়ের পর) দুই রাকআত সালাত (সালাতুল ইশরাক) আদায় করল, তার জন্য একটি পূর্ণ হজ ও একটি পূর্ণ ওমরাহর নেকী রয়েছে। (তিরমিযী হা/৫৮৬; মিশকাত হা/৯৭১, সনদ হাসান)।

(৫) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সালাতুয যোহা এর প্রতি কেবল সেই যত্নবান হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। সুতরাং এটাই হলো ‘সালাতুল আওয়াবীন’ বা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সালাত।’। (ত্বাবারাণী, সহিহ ইবনু খুযায়মা, সিলসিলা সহিহাহ হা/৭০৩)।

(৬) একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি সারিয়া (ছোট যুদ্ধাভিযান) প্রেরণ করলেন। তারা দ্রুত বিজয় লাভ করে অনেক গনীমত নিয়ে ফিরে আসলেন। ফলে লোকজন নিকটবর্তী অভিযান, অধিক গনীমত লাভ ও দ্রুত প্রত্যাবর্তনের কথা বলতে লাগল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও সংক্ষিপ্ত অভিযান, অধিক গনীমত অর্জন ও দ্রুত ফিরে আসার কথা বলে দেবো? তা হলো, যে ব্যক্তি ওজু করে মসজিদে গিয়ে যোহার নফল সালাত আদায় করবে, সে এর চেয়েও অতি দ্রুত লাভবান হবে, অধিক গনীমত অর্জন করবে ও দ্রুত প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হবে। (আহমাদ, সহিহুত তারগীব হা/৬৬৮)।

(৭) আবুদ্দারদা ও আবু যর (রা.) হতে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাকআত সালাত আদায় কর, আমি দিনের শেষ পর্যন্ত (যে কোনো প্রয়োজনে) তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাব।’ (তিরমিযী হা/৪৭৫; মিশকাত হা/১৩১৩)।

(৮) সালাতুয যোহা আদায় করা সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) সালাতুয যোহা চার রাকআত বা কখনো তার চেয়ে বেশি আদায় করতেন। (মুসলিম হা/৭১৯)। এই সালাত বাড়ীতে পড়া ‘মুস্তাহাব’। চাশতের সালাতের সর্বনিম্ন রাকআত সংখ্যা দুই এবং সর্বোচ্চ আট পর্যন্ত পাওয়া যায়। (মুসলিম হা/৩৩৬)। এছাড়া এর উপর যত খুশি আদায় করা যায়। (উসায়মীন, আশ-শরহুল মুমতে‘ ৪/৮৫)। তবে নির্দিষ্টভাবে বার রাকআত যোহা আদায়ের ফজিলত মর্মে বর্ণিত হাদিসটি যঈফ)। (তিরমিযী; মিশকাত হা/১৩১৬, সনদ যঈফ)।

আসুন! আমরা উক্ত সালাত আদায়ের চেষ্টা করি। ফরজ সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু না কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি বা ঘাটতি আমাদের থেকেই যায়। নফল সালাতগুলো আমাদের সেসব ঘাটতি পূরণ করবে ইনশাআল্লাহ!

কেয়ামতের সেই ভয়াবহতম দিনে যখন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে সেদিন আল্লাহ তাআলা ফরজ সালাতের ঘাটতি পুরণার্থে ফেরেশতাদের বলবেন, দেখ তো আমার বান্দার কোনো নফল (সালাত) আছে কি-না’। যদি তার নফল সালাত থাকে তিনি বলবেন, ‘আমার বান্দার ফরজের ঘাটতিকে নফল দ্বারা পূর্ণ কর।’ (আবুদাঊদ হা/৮৬৪)।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে অল্প শ্রম কিন্তু অপরিসীম সওয়াব সমৃদ্ধ এসব ইবাদতগুলোয় অভ্যস্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরএডব্লিউ