‘পিংক প্যান্থার’ এক দূর্ধর্ষ ডাকতগোষ্ঠী
নিউজ ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
হলিউড বলিউডের থ্রিলিং সব সিনেমায় আমরা প্রায়সই দূর্ধর্ষ সব ডাকাত দেখে থাকি। এসব ডাকাতদল মূহর্তের মধ্যে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে করে ফেলে প্রায় অসম্ভব সব ডাকাতি। এসকল রুদ্ধশ্বাস সিনেমা দেখে মনে হয়ত স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে এমন ঘটনা কি বাস্তবেও ঘটে? সত্যিই কী এমন ডাকাত দল রয়েছে? হ্যাঁ, এমনই এক ডাকাত দল পিংক প্যান্থার। এদের সংজ্ঞায়িত করতে হলে ডাকাত দল না বলে ডাকাতগোষ্ঠী ব্যবহার করতে হবে।
পুরো ইউরোপ ও আফ্রিকার কিছু অংশ জুড়ে এদের ডাকাতি কার্যক্রম চলে। ইন্টারপোল থেকে শুরু করে ইউরোপের বড় বড় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ঘুম কেড়ে নিয়েছে এরা। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৫ টি দেশে ৩৭০টি জুয়েলারির দোকান লুট করেছে এই ডাকাত গোষ্ঠী। লুটকৃত অলংকারের বাজারমূল্য প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন ইউরো। এই ডাকাতগোষ্ঠীর কর্মকান্ড এতটাই বিস্তৃত যে শুধুমাত্র এদের গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোল আলাদা একটি টাস্ক ফোর্স রয়েছে এবং প্রতি বছর একটি বার্ষিক মিটিং আয়োজন করে। তো কারা এই পিংক প্যান্থার? কিভাবেই বা এত সফলভাবে করে আসছে ডাকাতি? আর কেনই বা এরা এত সময় ধরে পুলিশের ধরা ছোয়ার বাইরে?

পিংক প্যান্থার কিভাবে সংগঠিত হয় বা এর সদস্যরা কারা তা বিভিন্ন দেশের পুলিশসহ ইন্টারপোলের কাছে এখনো অস্পস্ট। তবে এর উৎপত্তি নিয়ে অনেক ধারণা প্রচলিত। এসকল ধারণা আসে পিংক প্যান্থারের অল্পসংখ্যক আটকৃত সদস্যদের মাধ্যমে। এদের কাছ থেকে জানা যায় এই সংঘের বেশিরভাগই সার্বিয়া এবং মন্টিনিগ্রোর নাগরিক। ধারণা করা হয় ৯০ এর দশকে সংগঠিত যুগোস্লোভাকিয়ার যুদ্ধে সার্বিয়ার মিলিট্যান্ট দল থেকেই এই ডাকাত নেটওয়ার্কের উৎপত্তি। আবার অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, পিংক প্যান্থারের প্রতিষ্ঠা হয় একজন “আরকান টাইগার” মিলিশিয়া সদস্যের মাধ্যমে। আরকান টাইগাররা মূলত একটি সার্বিয়ান অপরাধী সংস্থা।যারা বসনিয়ার যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল এবং বসনিয়ার কুখ্যাত গণহত্যার জন্য দায়ী। যুদ্ধ শেষে এই মিলিশিয়া গ্রুপের কিছু সদস্য মিলে তৈরি করে এই দূর্ধর্ষ ডাকাতদল এবং লুটকৃত পণ্যের বেশিরভাগ অর্থই এই মিলিশিয়াদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহৃত হয়।কিন্তু সার্বিয়ান পুলিশের মতে, এই ডাকাতগোষ্ঠী মূলত বছর বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে সৃষ্টি হয়েছিল।যা যুগোস্লোভাকিয়ার অন্তর্গত দেশগুলোকে ঠেলে দিয়েছিল শেষ না হওয়া দারিদ্রের দিকে।সেখান থেকেই উৎপত্তি পিংক প্যান্থারের।কিন্তু কেন এই নাম? আর কীভাবেই বা তারা করে আসছে এত সফল সব ডাকাতি?

পিংক প্যান্থার নামটি মূলত ইন্টারপোলের দেয়া।৬০ এর দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত বিখ্যাত হলিউড সিনেমা থেকে এই নাম দেয়া হয়। এর পিছনে অবশ্য কারণ রয়েছে।পিংক প্যান্থারের সদস্যরাও ঠিক সিনেমার পিংক প্যান্থারদের দূর্ধর্ষ সব উপায়ে চুরি করে। অন্যান্য সকল অপরাধী সংস্থাদের থেকে পিংক প্যান্থার অনেক বেশি অর্গানাইজড এবং এর সদস্যরা অনেক বেশি প্রফোশনাল বলে ধারণা করা হয়।একটি ডাকাতি সম্পন্ন করতে পিংক প্যান্থার সদস্যদের মাত্র ৬০ থেকে ৯০ সেকেন্ড সময় লাগে।এদের ডাকাতির পদ্ধতিও অন্যান্য সকলদের থেকে ভিন্ন।এই সংস্থার সদস্যরা ডাকাতিতে কোন ভয়ঙ্কর অস্ত্র ব্যবহার করে না এবং এখন পর্যন্ত এদের ডাকাতিতে কোনো মানুষ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায় নি।ডাকাতি করতে এরা র্যাম রাইডিং পদ্ধতি ব্যবহার করে।

অর্থাৎ গাড়ি বা অন্য কোনো বড় যানবাহনের মাধ্যমে দোকান ভেঙে প্রবেশ করে এবং দ্রুততার সঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য লুট করে পালিয়ে যান।পালিয়ে যাওয়ার জন্য এরা রেসিং মটরবাইক ব্যবহার করে যা তাদের ডাকাতির স্থানের আশেপাশেই আগে থেকে পার্ক করা থাকে। এরা সাধারণত দুই থেকে চার জনের ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য পদ্ধতিতেও এরা ডাকাতি করে থাকে। এর জন্য এরা প্রথমে ডাকাতির স্থান ভালভাবে পর্যবেক্ষণে রাখে। কাস্টমার হয়ে স্বর্ণালংকারের দোকান ভালভাবে পরিদর্শন করে।যে কারণে কোথায় কী রাখা আছে এ সম্পর্কে তাদের আগে থেকেই ধারণা থাকে।এছাড়া প্রতি সদস্যই ডাকাতি করার পূর্বে কিছু দিন সকল নেশাজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকে এবং প্রচুর ঘুমিয়ে থাকে। মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য।একারণেই পিংক প্যান্থারের সদস্যরা সফলতার সঙ্গে এত ডাকাতি করতে পারে।কিন্তু কীভাবে এত বছর ধরে এরা পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে?
পিংক প্যান্থাররের সদস্যরা এত দ্রুততার সঙ্গে এদের কার্যক্রম সম্পন্ন করে পালিয়ে যায় যে, এদের পুলিশের পক্ষে ধরা সম্ভব হয় না।তাছাড়াও এই সংস্থার সদস্যরা খুব সাধারণ জীবন যাপন করে।যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে থাকে বেনামী মোবাইল এবং প্রতি সদস্যেরই অনেকগুলো পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট রয়েছে।যে কারণে পুলিশের পক্ষে এদের ধরা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়ায়।আরেকটি কারণ হল এই সংস্থায় অন্যান্য অপরাধ সংস্থার মত কোনো লিডার বা গড ফাদার নেই। এরা খুব ছোট মোবিলাইজড দল হিসেবে ইউরোপব্যাপী অপারেট করে।মূল দল কোথায় বা কী অবস্থানে আছে তা সম্পর্কে সদস্যদেরও ধারণা নেই।

এছাড়া পিংক প্যান্থারের সদস্য হতে হলেও যেতে হয় কঠোর ট্রেনিং এর মধ্য দিয়ে।এই ট্রেনিং এ নিজেকে প্রমান করতে পারলেই একমাত্র পিংক প্যান্থারের সদস্য হওয়া সম্ভব।এরপর নতুন রিক্রুটদের নিজেদের বুদ্ধির পরীক্ষা দিতে হয় ছোটখাট ডাকাতি করে।এরপরই একজন পূর্ণ পিংক প্যান্থারের সদস্য হওয়া যায়। এদের নিজেদের আলাদা সংবিধান রয়েছে যেখানে এদের জন্য সকল করণীয় বর্ণীত রয়েছে।ধরা পড়া সদস্যরাও অন্যান্যদের প্রতি কর্তব্যনিষ্ঠ। এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি পিংক প্যান্থার দলের সদস্য গ্রেফতার হয়েছে এবং তারা এই সংস্থা ও এর সদস্যদের কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি।একারণেই পিংক প্যান্থার এবং এর সদস্যরা এখনো টিকে রয়েছে এবং প্রতিনিয়তই ইন্টারপোলের ঘাম ঝড়াচ্ছে।
- বাঙালির বংশ পদবীর ইতিহাস
- গন্ধভাদালি লতার উপকারিতা
- ‘ময়ূর সিংহাসন’
- মিশরীয় সভ্যতা এবং নীল নদ
- মধ্যযুগের ইতিহাস
- ব্যবহারের আগে জানুন প্লাস্টিক বোতলে চিহ্নের মানে কী
- পবিত্র কাবা শরীফের অজানা যত তথ্য
- বিকাশ নগদ এবং রকেট’র ভুল নম্বরে টাকা চলে গেলে ফেরত পাবেন যেভাবে
- হ্যালুসিনেশন আসলে কী, রোগ না অন্য কিছু?
- পিরামিডের অজানা তথ্য…
- চুম্বকের আদ্যোপান্ত...
- ‘রক্ত’ রঙের রহস্য...
- ‘চুম্বন’ আদর ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
- ‘ধানমন্ডি’ নামকরণের ইতিহাস
- প্রথম মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস

জমঈয়ত শুব্বানে আহলে হাদীস এর উদ্যোগে তাফসিরুল কুরআন মাহফিল
মুশফিকের শততম টেস্টে হামজার বিশেষ বার্তা
‘ফাঁদে পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অনেক বাংলাদেশি’
ভারতকে হারিয়ে ফিফা থেকে সুখবর পেল বাংলাদেশ