ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:

গাজীপুরে প্রচারণায় ব্যস্ত আওয়ামী লীগ, গা ঢাকা দিয়েছে বিএনপি

জিহাদ

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২২ অক্টোবর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। নেতাকর্মীরা গণসংযোগ ও শোডাউনসহ নানা ধরনের প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। নির্বাচনী সভা, কেন্দ্র কমিটি গঠন ও উঠান বৈঠক ও নৌকা নিয়ে নদী পথে প্রচারণাসহ নানাভাবে নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে এর ঠিক উল্টো অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মামলার ভয়ে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

গাজীপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবারো মনোনয়ন প্রত্যাশী। নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। প্রায়ই তিনি এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন। এলাকায় নির্বাচনী পোস্টারও দেখা যাচ্ছে।

এ আসনে আরো কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন শিকদার, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল,ব্যবসায়ী নূরে আলম সিদ্দিকী,মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল।

মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা গনতন্ত্রে বিশ্বাসী আগামি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। আশা করি আমিই নৌকার মনোনয়ন পাব। অপরদিকে এ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুলের নামে বিভিন্ন থানায় মামলা আছে কমপক্ষে ৭টি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শ্রমিক নেতা হুমায়ূন কবির খান গুলশানসহ চার থানায় ৩১টি মামলার আসামি। সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহম্মেদ ১৫টি মামলার আসামি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য কালিয়াকৈর পৌর মেয়র মজিবুর রহমান ২ থানায় ৩টি মামলার আসামি।

বিএনপি নেতা সুরুজ আহমেদ বলেন, আমরা গত ১০ বছরে মামলায় জর্জরিত। দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে আমরা বিপুল ভোটের জয়লাভ করব। এপর্যন্ত আমি পনেরটি মামলার আসামি, তাই অন্য কোন মামলায় আসামি থেকে রক্ষার জন্য এড়িয়ে চলছি এলাকায়।

গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন অনেকটাই চূড়ান্ত। তিনি হলেন শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. জাহিদ আহসান রাসেল। অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান হাই কমান্ডের অপেক্ষায় আছেন।

অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা বলেন, এবারও নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে নিয়েই আমরা নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমাদের সরকারের উন্নয়ন জনগনের কাছে তুলে ধরছি। অপরদিকে এ আসনের বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান ৩০টি মামলা মাথায় নিয়ে ঢাকায় রয়েছেন। মহানগর বিএনপির আহবায়ক মো. হাসান উদ্দিন সরকারের নামে মামলা আছে তিনটি। শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকারের নামে টঙ্গী ও জয়দেবপুর থানায় ৭টি রয়েছে। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো. সোহরাব উদ্দীন তিনটি এবং ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জেলা যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলম ৯টি মামলার আসামি। মামলায় জর্জড়িত হয়ে, আরো মামলায় আসামি ও গ্রেফতারের ভয়ে তৃণমূলে নিজেদের তেমন একটা সম্পৃক্ত করতে পারছেন না তারা।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন বলেন, মহানগর ও জেলার সব উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা, এমনকি দলের সমর্থকরা পর্যন্ত সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাজানো মামলার আসামি হয়েছেন। পুলিশি হয়রানি, মামলা-হামলার কারণে এলাকায় থাকতে পারছে না নেতাকর্মীরা। আমরা রাস্তায় কোন সভা সমাবেশ করতে পারছি না। অবাধ নির্বাচন হলে জনগণ আওয়ামী দু:শাষনের জবাব দেবেন।

গাজীপুর-৩ আসনের বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলী। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় অনেকেই এগিয়ে রাখছেন তার ছেলে কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জামিল হাসান দুর্জয়। পিছিয়ে নেই জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজও। এই দুজন নেতাকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগে দুটি বলয় গড়ে উঠেছে গাজীপুর ৩ আসনের নির্বাচনী এলাকায়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন,এ আসনে একাধিক প্রার্থী নৌকার মনোনয়ন দৌড়ে আছি। যিনি নৌকার টিকেট পাবেন তার পক্ষেই কাজ করব। তবে আশা করি এবার আমাকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেবেন। সেলক্ষেই নৌকার জয়ের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে আছি। বিএনপির ব্যাপারে সবুজ বলেন,তারা জালাও পোড়াই রাজনীতি করে এলাকায় মানুষের কাছে যেতে পারছে না। তাই তারা নির্বাচনে ভয় পাচ্ছে। অন্যদিকে এই আসনের বিএনপির প্রার্থীরা নেই নির্বাচনী মাঠে। বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সবুজ ৯টি, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পীরজাদা এসএম রুহুল আমীন ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোতালেবদেও ১টি করে মামলা, উপজেলা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান ফকির ৩টি মামলার আসামি। এছাড়া নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইজাদুর রহমান মিলনও মামলার আসামি।

ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন,এ সরকার এবারো বিএনপিকে বাইরে রেখে এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা ধওে রাখতে চায়। তা হতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রাখতে হবে। গাজীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি তাজ উদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি ও তার ফুফাতো ভাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ব্যবসায়ী আলম আহমেদ।কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আলম আহমেদ। তিনি নিজে ছাড়াও কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে মাঝে মাঝেই শোডাউন করছেন।

কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ব্যবসায়ী আলম আহমেদ জানান,আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবারও সরকার গঠন করতে পারব। এ আসন আওয়ামী লীগের ঘাটি। এখানে বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের জন্ম ভূমি। আমি মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবো। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,তারা হলো জনবিচ্ছিন্ন একটি দল। তারা জনগনের ভয়ে এলাকায় আসতে পারে না।

এ আসনে এখন বিএনপির মূল প্রার্থী প্রয়াত হান্নান শাহ’র ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান। রিয়াজুল হান্নান আগে মামলায় না পড়লেও সম্প্রতি জেলা শহরের দলীয় একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জয়দেবপুর থানায় পুলিশের দেয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় আসামি হয়েছেন এবং জেলও খেটেছেন। জামিনে আছেন তিনি।

রিয়াজুল হান্নান জানান, সরকার ও প্রশাসনের নিপীড়নমূল ভূমিকায়, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে শুধু মাত্র বিয়ে-সাদি কিংবা জানাজার নামাজের মতো কিছু সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এলাকায় যেতে পারেন। পুলিশি বাধা কিংবা গ্রেফতার আতঙ্কে তাদের দলীয় ২০ জন লোকও একসঙ্গে জড়ো হতে পারেন না। তবে দল নির্বাচনে গেলে তাদেরও সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে এবং জনগণ তাদের ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছেন বলেও তিনি জানান।

গাজীপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতার উজ্জামান। এলাকায় নেই এই আসনের বিএনপির প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন।

মিলন বলেন -গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় এই সরকারের আমলে ৩৩টি রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়েছেন। শুধু তিনি নন, জেলার সব উপজেলায় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা, এমনকি দলের সমর্থকরা পর্যন্ত সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে সাজানো মামলার আসামি হয়েছেন। গণতন্ত্রে অবিশ্বাসী সরকার আবারো বিনা ভোটে সরকারে থাকার উদ্দেশ্যে তাদের কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। পুলিশি হয়রানি, মামলা-হামলার কারণে তিনি এলাকায় যেতে পারছেন না। গত ১০ বছর ধরে স্বাধীনভাবে দলীয় কোনো কর্মসূচি করতে পারছেন না।

নিউজওয়ান২৪/জেডএস

আরও পড়ুন
রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত