ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:
টানা পাঁচদিন বৃষ্টির আভাস মুসলিম বিশ্বকে ‘ন্যাটো-ধাঁচের’ নিরাপত্তা কাঠামো গঠনের প্রস্তাব তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল পাঠাচ্ছে চীন

ইহুদি অধ্যুষিত ইসরায়েলের জন্ম যেভাবে

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৬, ২৫ জুলাই ২০১৯  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

রসায়ন বিষয়টি বরাবরই রসকসহীন। তো এই নিরস বিষয় নিয়ে যারা পড়াশোনা ও গবেষণা করেন তাদেরই একজনের অবদানে আজকের ইসরায়েল রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা অমূলক শোনাবে না বৈকি!

এই একটি রাষ্ট্রকে নিয়েই তো পৃথিবীবাসীর মধ্যে কত বিভেদ! ইহুদি অধ্যুষিত দেশটি হয়ে দাঁড়িয়েছে মুসলিমদের গলার কাঁটা।

আরো পড়ুন>>> বাঙালির বংশ পদবীর ইতিহাস

বাংলাদেশের সঙ্গেও কিন্তু ইসরাইলের সম্পর্ক তেমন সুবিধার নয়। বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে আপনি পৃথিবীর যেকোনো দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন, শুধু ওই একটি দেশ বাদে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ওআইসিভুক্ত প্রায় প্রতিটি দেশই ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। 

যাই হোক, ভূ-রাজনীতির কথা ছেড়ে এবার মূল গল্পে আসি। তার নাম শেইম ভাইজম্যান। রাশিয়ায় জন্ম নেয়া এই বিজ্ঞানী জৈব রসায়নে পড়াশোনার পাঠটা সেরেছিলেন জার্মানিতে। তাকে বলা হয়ে থাকে ‘দ্য ফাদার অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মেন্টেশন’। যারা জৈব রসায়ন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখেন, তারা ‘ফার্মেন্টেশন’ শব্দটার মানে বুঝবেন নিশ্চয়। আর না বুঝলেও আমাদের গল্পে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। 

বিশ্বজুড়ে তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে। যুদ্ধে অন্যান্য বিশ্ব মোড়লদের মতো অংশ নিয়েছে ব্রিটেনও। তবে নিজেদের ‘রাজকীয়তা’ আরো একবার প্রমাণ করতে এত বড় যুদ্ধে নেমে ব্রিটিশরা পড়ল বিপদে। তখনকার দিনে যুদ্ধটা শুধু যুদ্ধের ময়দানে দুই পক্ষের সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল ছিল না। আসল যুদ্ধটা হতো বিজ্ঞানীদের মধ্যে। যে পক্ষের বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে প্রতিপক্ষের বিজ্ঞানীদের পেছনে ফেলতে পারতেন, সেই পক্ষই শেষ পর্যন্ত জয়ী হতো। 

বিজ্ঞানী শেইম ভাইজম্যানবিজ্ঞানী শেইম ভাইজম্যান

ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে, সবচেয়ে প্রচলিত ও শক্তিশালী বিস্ফোরক ছিল ডিনামাইট। যাদের কাছে যত পরিমাণ ডিনামাইটের মজুদ আছে,তারা তত বেশি শক্তিশালী। তবে এই ডিনামাইট তৈরিতে প্রয়োজন হতো ‘অ্যাসিটোন’ নামক এক ধরণের জৈব যৌগের। সেই সময়ের প্রচলিত রাসায়নিক পদ্ধতিতে অ্যাসিটোন তৈরি করা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। উৎপাদনের হারও ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু পর্যাপ্ত অ্যাসিটোন না থাকলে তো ডিনামাইট বানানো সম্ভব নয়! এ কারণে ব্রিটিশরা যুদ্ধের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছিল।

এমন সংকটময় সময়ে শেইম ভাইজম্যান করলেন এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। সেই সঙ্গে ইংলিশদের এনে দিলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। ‘ক্লোস্ট্রিডিয়াম এসেটোবুটিলিসাম’নামক এক ধরণের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান বের করলেন তিনি। যারা অ্যাসিটোন উৎপাদন করতে সক্ষম। ব্যাকটেরিয়ার মতো ক্ষুদ্র অনুজীবরা খুব তাড়াতাড়ি বংশবৃদ্ধি করতে পারে। তাই এ পদ্ধতিতে অনেক দ্রুত অ্যাসিটোন উৎপন্ন করা সম্ভব হলো। ব্রিটেনও তাই বিষ্ফোরক উদ্ভাবনে সবাইকে ছাড়িয়ে যায় ও যুদ্ধে জয় লাভ করে। 

যুদ্ধ জয়ের পর তখনকার ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া ভাইজম্যানকে ডাকলেন তার উপকারের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার প্রদানের জন্য। তবে তিনি কোনো প্রকার অর্থ বা বৈষয়িক পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানালেন। ব্যক্তিগত জীবনে শেইম ভাইজম্যান ছিলেন একজন জায়োনিস্ট। জায়োনিস্ট হলো এমন একটা গ্রুপ, যারা ইহুদিদের জন্য একটি পবিত্র স্থানের দাবি করে আসছিল। সুযোগ বুঝে ফায়দা লুটলেন ভাইজম্যান। ইহুদিদের জন্য একটা আলাদা রাষ্ট্র চেয়ে বসলেন রানির কাছে। সেই রাষ্ট্রটিই ছিল আজকের ইসরায়েল। আর শেইম ভাইজম্যান হয়েছিলেন ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান। 

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড