ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

ভারতীয় চোখে শি’র সফর: বাংলাদেশকে ভারতের ১২ গুণ ঋণ দিচ্ছে চীন

অর্থ-কড়ি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:০৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ২৩:৫৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট শি        -ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট শি -ফাইল ফটো

নিজ প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের আর্থ-রাজনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন বৃহৎ প্রতিবেশী চীনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। আর তাই চীন ভারতের পদক্ষেপ অনুসরণ করে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বিশালাকারের অর্থ ঋণ দিতে যাচ্ছে। চীন তার এই ঋণ কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে টানতে চাইছে। দেশটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎসেবার উন্নয়র, সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দিতে যাচ্ছে। এই ঋণ বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ২ বিলিয়ন ডলারের ১২ গুণ।

এই কথাগুলো ভারতীয় হিন্দি পত্রিকা নবভারত টাইমসের একটি প্রতিবেদনের।

চীনা রাষ্ট্রপতি শি চিনপিংয়ের বাংলাদশে সফরকে সামনে রেখে গত শুক্রবার ওই প্রতিবদেনটি অনলাইনে প্রকাশ করে তারা। ‘এবার ভারতের প্রতিবেশীদের ভোলাতে চাইছে চীন, বাংলাদেশকে দেবে বিশাল আর্থিক সহায়তা’ শিরোনামটা এমনি ছিল ওই প্রতিবদেনের।

পত্রিকাটি আরও লিখেছে- গত ৩০ বছরে কোনো চীনা রাষ্ট্রপতির এটা প্রথম বাংলাদেশ সফর। প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের বরাতে পত্রিকাটি লিখেছে- ১৩২০ মেগাবাইটের বিদ্যুৎ প্লান্ট ছাড়াও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণসহ ২৫টি প্রকল্পে বাংলাদশকে সহায়তা করতে চাইছে চীন।

পত্রিকাটি আরও লিখেছে, উল্লেখযোগ্য যে বাংলাদেশে ভারতেরও বড় রকমের বিনিয়োগ আছে এবং দুই দেশের মাঝে খুবই সরল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারতীয় সহযোগিতায় জাপানও বাংলাদেশে ভাল রকমের বিনিয়োগ করেছে। বিদ্যুৎ ও সমুদ্রবন্দর নির্মাণে কম সুদে বাংলাদশকে ঋণ দিচ্ছে জাপান।

পত্রিকাটি আরও উল্লেখ করেছে- প্রসঙ্গত, চীনা রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরটি হচ্ছে ভারতে অনুষ্ঠেয় ব্রিক্স সম্মেলনের আগে দিয়ে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কে্ান্নয়নে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৎপরতার নিরিখে বিষয়টিকে দেখা হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে চীন ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতির অনুসরণে সমগ্র এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা ও পরিবহন যোগাযোগ বাড়াতে সচেষ্ট। কিন্তু ভারত বিষয়টিকে সন্দেহের নজরে দেখছে। ভারত মনে করে- এর ফলে এশীয় প্রভাব প্রতিপত্তির ভারসাম্য চীনের দিকে ঝুঁকে যাবে।

শাংহাই ইনস্টটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এর দক্ষিণ এশিয়া স্টাডিজের পরিচালক ঝাও গনচেংগ-এর মতে, বাংলাদেশে চীন-ভারতের মাঝে এমন কোনো প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে না। চীন আর ভারত দুই দেশেরই বিনিয়াগকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ, মায়ানমার, চীন ও উত্তর ভারতের মাঝে অর্থনৈতিক করিডোরের প্রস্তাবক চীন- কিন্তু এই উদ্যোগে ভারতের কোনো আগ্রহ নেই।

ব্রিকস সম্মেলনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রসঙ্গত, দুই দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং শনিবার সকালে ভঅরতের গোয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সেখানে ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও চীনকে নিয়ে গঠিত অর্থনৈতিক জোট ব্রিক্স-এর সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। একই সম্মেলনে পর্যবেক্ষক হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে যোগ দিতে রোববার সকালে ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ-চীন চুক্তি স্বাক্ষর
এর আগে শুক্রবার বিকালে চীনা প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। পরে দুই নেতার উপস্থিতিতে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হয়, ছয়টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন তারা।

এর মধ্যশ দিয়ে সহযোগিতার ‘একটি উচ্চতর ভিত্তি’ তৈরি হল বলে মন্তব্যা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চিনপিং বলেন, বাণিজ্যক ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো, শিল্প, বিদ্যুনৎ ও জ্বালানি, তথ্যছ ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সহযোগিতা জোরদারে আমরা ঐকমত্যের পৌঁছেছি।

শি জিনপিং বলেন, “আমরা চীন, বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ সর্বাত্মক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতায় উন্নীত করতে একমত হয়েছি। এছাড়া উচ্চ পর্যায়ে মত বিনিময় এবং কৌশলগত যোগাযোগে সম্মত হয়েছি, যাতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি উচ্চতর পর্যায়ের দিকে অগ্রসর হয়।”

তিনি আরও বলেন, পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল এবং একে অন্যকে সমর্থন করে এমন বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। এবং কৌশলগত সহযোগিতায় নতুনত্ব আনতেও চীন প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিবৃতিতে বলেন, “ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে একে অন্য্কে সমর্থনের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।”

বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, “আজ আমাদের লক্ষ্যর ২০২১ সাল নাগাদ জ্ঞানভিত্তিক মধ্যট আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া।”

দুই দিনের সফরে বেলা শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা পৌঁছান প্রেসিডেন্ট শি।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

অর্থ-কড়ি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত