ঢাকা, ০১ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

ক্যাস্ত্রো কাহন: চমক জাগানো মজার সব তথ্য

সাতরং ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৪৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১৫:১৯, ১ ডিসেম্বর ২০১৬

১৯৭২ সালে বার্লিনে অটোগ্রাফশিকারি ভক্তদের কবলে কিংবদন্তী পুরুষ ক্যাস্ত্রো         -ফাইল ফটো

১৯৭২ সালে বার্লিনে অটোগ্রাফশিকারি ভক্তদের কবলে কিংবদন্তী পুরুষ ক্যাস্ত্রো -ফাইল ফটো

সাধারণ একজন মানুষের হিসেবে সুদীর্ঘ বর্ণবহুল এক জীবন কাটিয়ে শনিবার ৯০ বছর বয়সে দুনিয়াকে বিদায় জানালেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। কিউবা বিপ্লবের এ মহান নেতা তার সময়কে আলোড়িত আর প্রভাবিত করেছেন ব্যাপকভাবে।

ফিদেল এই সময়ের এবং আগামী সময়ের মানুষের মনে স্থান করে থাকবেন অনন্তকাল, এটা তার গুণমুগ্ধ শতকোটি ভক্ত বিশ্বাস করেন। তবে নিজস্ব বিরল সত্তা আর গুণসম্পন্ন এই মানুষটি আরও বেশ কিছু বিষয়ের জন্য আগামী দিনের মানুষের মনে চর্চিত হতে থাকবেন, থাকবেন রেকর্ড বুকে। এখানে ক্যাস্ত্রোকে ঘিরে এমনি কিছু অসাধারণ ঘটনা তুলে ধরা হলো নিউজওয়ান২৪.কমের পাঠকদের জন্য

দীর্ঘতম ভাষণের রেকর্ড
জাতিসংঘে দীর্ঘতম ভাষণের রেকর্ড রয়েছে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর। ১৯৬০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে টানা চার ঘণ্টা ২৯ মিনিটের ম্যারাথন ভাষণ দেন তিনি। এটি একটি গিনেস বুক রেকর্ড। তবে এতেই অবাক হবেন না। ১৯৮৬ সালে নিজদেশে সাত ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে ভাষণ দিয়ে আগের রেকর্ডকে রীতিমতো পানসে করে দেন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের এই কুতুব মিনার।

৬৩৮ বার হত্যাচেষ্টা

ক্যাস্ত্রোর ক্ষমতাকালে তার নীতি আদর্শ ও তার নিজের চরম শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ তাকে অসংখ্যবার হত্যা চেষ্টা করে- এটা কমবেশি সবাই জানেন। তবে চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দেসহ দুনিয়ার আরও কিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে সফল হলেও এক্ষেত্রে বারবার তারা ব্যর্থ হয়েছে।

এক তথ্যসূত্রে জানা যায়, এক্ষেত্রে সিআইএ মোটমাট ৬৩৮ বার হতাশার মুখ দেখে। ক্যাস্ত্রোকে হত্যায় গুলি-বোমা ছাড়াও অন্যান্য যেসব কায়দা-কৌশল নেওয়া হয় তার মধ্যে আছে বিষাক্ত ট্যাবলেট খাইয়ে, বিষাক্ত পোশাক পড়িয়ে মারার চেষ্টাও। এমনকি ক্যাস্ত্রো যে বিখ্যাত হাভানা চুরুট টানতেন- সেই চুরুটেও বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয় তাকে।

তবে শেষ পর্যন্ত সিআইএ’র বিষ চুরুটেই থেকে গেছে- ধোঁয়া হয়ে তা কিউবান নেতার ফুঁসফুঁস ছুঁতে পারেনি।

প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন ১১ জন মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে
নিজের প্রায় ৫০ বছরের শাসনকালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপানো অর্থনৈতিক অবরোধের মধ্যে কাটাতে হয়েছে ৪৫টি বছর। ওই সময়টায় আইজেনহাওয়ার থেকে নিয়ে বিল ক্লিনটন পর্যন্ত মোটমাট ১১জন মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন তিনি।তারা সবাই চেয়েছেন যে কোনো উপায়ে ক্যাস্ত্রোকে হটাতে- কিন্তু মেয়াদ শেষে একে একে ১১ জন রাষ্ট্রপতি একের পর এক বিদায় নিলেও ক্যাস্ত্রো ছিলেন তার জায়গায় স্থির-অবিচল।

এরমধ্যে তাকে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় জর্জ ডব্লিউ বুশের সময়টায়। এর বিপরীতে মার্কিনিদেরও চরম অস্বস্তিতে দীর্ঘকাল ভুগিয়েছেন এই মহান নেতা।

এক গাইয়ে ১১০ লিটার!
দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনীতিক পরিবেশে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার ও পরিবর্তন ঘটান ক্যাস্ত্রো। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সালে শুরু করেন গৃহপালিত পশু উন্নয়ন প্রকল্প। তার এই প্রকল্পের অধীন উব্রে-ব্ল্যাংকা নামের গাই দিনে ১১০ লিটার দুধ দেওয়ার বিশ্ব রেকর্ড করে।

বিশ্ববাসী থমকে গিয়েছিল যেদিন
সেটা ছিল স্নায়ুযুদ্ধের কাল। ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাক করে কিউবার মাটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের অনুমতি দেন ক্যাস্ত্রো। তার এই দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত বিশ্বকে পরমানু যুদ্ধের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ওই সময়টায়। মস্কো যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১৪৪ কিলোমিটার দূরের এক দ্বীপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের অনুমতি চেয়েছিল।
৩৪ হাজার নারীর সঙ্গে সম্পর্ক!

ক্যাস্ত্রোর বিরুদ্ধবাদীরা তাকে নিয়ে অপ্রচারও কম চালায়নি। তেমনি এক কাণ্ডে তার এক কর্মকর্তার বরাতে অভিযোগ আনা হয়- তিনি জীবনে প্রায় ৩৫ হাজার নারীর সঙ্গ নিয়েছেন। ২০০৮ সালে মার্কিন পত্রিকা দ্য নিউইয়র্ক পোস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়- কখনো কখনো সকালে নাশতার পরে এবং রাতে খাবার পর আলাদা আলাদা নারীর ব্যবস্থা করতে হতো তার জন্য।

হঠাৎই ছেড়ে দিলেন অতিপ্রিয় হাভানা চুরুট
যারা ধূমপান ছাড়তে চাইছেন কিন্তু পারছেন না, এক্ষেত্রে তাদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারেন ক্যাস্ত্রো।
একটা সময় ছিল যখন ক্যাস্ত্রো আর হাভানা চুরুট যেন একে অপরের পরিপূরক ছিল। তার ব্যক্তিত্বের অচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয় এই বিশেষ ব্রান্ডের ধূম্র শলাকাটি। কিন্তু নিজের অতিপ্রিয় এই সিগারও (চুরুট) একদিন হঠাৎই ছেড়ে দিলেন তিনি, স্রেফ মনের জোরে। সেটা ১৯৮৫ সালের ঘটনা। স্বাস্থ্যজনিত কারণে তাকে এই সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।

চুরুট বিষয়ে একবার মজার এক মন্তব্য করেন তিনি। নিজের চুরুটের বাক্সের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই বাক্সের বিষয়ে সবচেয়ে ভাল একটি দিক হলো যে এটা আপনি আপনার দুশমনকেও সাধতে পারেন।

আমাদের বেশ্যারাও স্নাতক!
অকপট আর লাজবাব বক্তব্যের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা। ২০০৩ সালে প্রামাণ্যচিত্র ‘কমান্ড্যান্ট’ এর নির্মাতা অলিবার স্টোনকে তিনি বলেন, বিপ্লবের সবচেয়ে বড় লাভগুলোর একটি হচ্ছে- আজ আমাদের বেশ্যারাও কমপক্ষে কলেজ গ্রাজুয়েট।

প্রসঙ্গত, একটা সময়ে কিউবা ছিল ক্যারিবীয় সাগরে এমন একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র যাতে প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের ধনীরা আসতো মৌজ-স্ফূর্তি করতে। সেই অবকাশ-বিনোদন ভূমির তকমা লাগানো কিউবাকে পুরোপুরি বদলে দিয়ে, দুনিয়াকে পরো না করা ওয়াশিংটনের ক্ষমতাবানদের রক্তচক্ষুকে পাত্তা না দিয়ে নিজভূমে লাল পতাকা উড়িয়ে রেখে ৫ দশকজুড়ে বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন মহামতি ক্যাস্ত্রো।

প্রতিপক্ষের চরম বিরোধীতা, টানা ৪৫ বছর ধরে চলা মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের সঙ্গে তাল রেখে তাকে বারবার হত্যার ষড়যন্ত্র- সবকিছু পায়ে দলে, সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটে উঠেছিলেন ক্যাস্ত্রো। তিনি এমন একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন যা টিকে আছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও।

কিউবা বিষয়ক আমেরিকান বোদ্ধা ড্যান এরিকসনের ক্যাস্ত্রো সম্পর্কিত একটি মন্তব্য এখানে স্মরণ করা যেতে পারে। ড্যান বলেন- ১৯৫৯ সালে যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন খুব কম লোকই ভাবছিল ফিদেল ক্যাস্ত্রো কিছু করতে পারবেন।

তবে বেশিরভাগ লোকের ধারণাকেই শেষপর্যন্ত ভুল প্রমাণ করেছিলেন ক্যাস্ত্রো। তিনি তার ক্ষেত্রে যা করেছেন তা আর প্রতিপক্ষের জন্যও উদাহরণ হতে পারে। এনবিটি, উইকিপিডিয়া

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

অর্থ-কড়ি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত