ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

চাঁদের অবদান...

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ছোটবেলার ঘুম পাড়ানি গান থেকে শুরু করে ভৌতিক কোনো গল্প কিংবা প্রেয়সীর জন্য লেখা রোমান্টিক কোনো গান সকল স্থানেই রয়েছে চাঁদের প্রভাব। 

চাঁদ নিয়ে সাহিত্য চর্চাও কম হয়নি বটে। সকল ভাষায়ই কোনো না কোনো কবি চাঁদ নিয়ে লিখেছেন গল্প ও কবিতা। শুধু সাহিত্য নয় পৃথিবীর আবহাওয়া জীবন সহিষ্ণু হওয়ার পিছনেও রয়েছে চাঁদের অবদান। কিন্তু কোনোদিন চিন্তা করে দেখেছেন যদি চাঁদ না থাকত তবে কী হত? শুধু কি মানুষের তৈরি সুন্দর সাহিত্য ভেস্তে যেত নাকি মানুষ থেকে শুরু করে পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেত?

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র স্থায়ী প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ। পৃথিবী থেকে প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪ শত ২ কিলোমিটার দূরে চাঁদের অবস্থান। চাঁদ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এ নিয়ে অনেক মতবাদ আছে। প্রায় ৪ দশমিক দুই বিলিয়ন বছর পূর্বে যখন পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের সংঘর্ষ হয়েছিল তখন সংঘর্ষের  ধ্বংসাবশেষ থেকে চাঁদের উৎপত্তি ঘটে। চাঁদের উৎপত্তি সম্পর্কে এই মতবাদই সবচেয়ে বেশি গৃহীত। 
চাঁদ প্রায় ২৮ দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিন করে। এজন্যই পৃথিবীর প্রায় সকল প্রান্তেই ১৪ দিন জোছনা থাকে বাকি দিনগুলো থাকে অমাবস্যা। চাঁদের এই মহিমান্তিত্ব আলো যদিও চাঁদের নয় বরং চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফলন করে। তো যদি চাঁদ না থাকত তবে আমাদের পৃথিবী রাতের বেলায় পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যেত। এ কারণে ঘুমের অভ্যাসেও কিছুটা পরিবর্তন আসত। এমনকি অনেক ছোট নিশাচর প্রাণী পথ হারাতো। অভিযোজনে অক্ষম হয়ে এসকল নিশাচর ছোট প্রাণীদের অস্তিত্বই বিলীন হত।

সামুদ্রিক বড় ঢেউ সৃষ্টির পিছনে পৃথিবীর ওপর চাঁদের অভিকর্ষ কাজ করে। এই অভিকর্ষের কারণে সমুদ্রের কিছু অংশের পানি ফুলে উঠে যা পরবর্তীতে বাতাসের প্রভাবে বড় ঢেউ এ রূপান্তরিত হয়। এই ঢেউ থেকেই সাগরের পানি প্রবাহিত হয়। সৃষ্টি হয় জোয়ার ভাঁটার। চাঁদ না থাকলে বাতাসের প্রভাবে ঢেউ এর সৃষ্টি হলেও তা বর্তমানের ঢেউয়ের আকৃতির থেকে অনেক ছোট হত। ফলে সমুদ্রের পানির প্রবাহ কমে যেত। যে কারণে সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্যের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেত। ফলে অস্ত্বিত্ব থাকত না অনেক সামুদ্রিক প্রাণীরই। সমুদ্রের ইকোসিস্টেম পুরোপুরি ভিন্ন হত। যে কারণে আমাদের ভুগতে হত খাদ্য সমস্যায়। তাছাড়াও জাহাজ চেপে সমুদ্র ভ্রমন কিংবা সমুদ্রের সাহায্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহন প্রায় অসম্ভব হত।

সম্ভব হলেও তা হত অনেক ধীর গতিতে। ঢেউ না থাকলে তার প্রভাব সামুদ্রিক আবহাওয়াই পরিবর্তন দেখা যেত। মেরু অঞ্চলের পানি পুরোপুরি বরফ হয়ে যেত। ফলে মেরু তীরবর্তী অঞ্চলগুলোর তাপমাত্রা আরো কম হত। যা কোনো প্রাণীর টিকে থাকার জন্য প্রায় অসম্ভব হত। ফলে পরিবর্তন হত পৃথিবীর আবহাওয়া। মেরু তীরবর্তী অঞ্চলে অতিরিক্ত শীত ও পৃথিবীর অক্ষরেখার মধ্যভাগের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়ে প্রচন্ড উষ্ণতে রূপান্তরিত হত। এ কারণে চাঁদ না থাকলে ঋতু পরিবর্তন বন্ধ হত এবং অবস্থান অনুযায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ঋতুই সারা বছর ধরে চলত। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে প্রায় ৩৬৫ দিনে এক বার প্রদক্ষিন করে। এই সময়কেই আমরা বছর হিসেবে ধরে থাকি।

পৃথিবীর এই ঘূর্ণন বা অবস্থান পরিবর্তনের সময় পৃথিবীতে চাঁদের অভিকর্ষও কাজ করে। ফলে পৃথিবীকে নিজের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের অভিকর্ষও বহন করে প্রদক্ষিন করতে হয়। যে কারণে পৃথিবীর প্রদক্ষিনের সময়ও বেড়ে যায়। যদি চাঁদ না থাকত তবে পৃথিবীর ঘূর্ননের হার তথা প্রদক্ষিনের সময় কমে আসত। ফলে পরিবর্তিত হত পৃথিবীর সময়। দিনের স্থায়ীত্ব হত ৬ থেকে ৭ ঘন্টা এবং রাতগুলো দীর্ঘ হত। এ কারণে মানুষের কাজ করার সময় ও কমে আসত। তাছাড়াও কমে আসত এক বছরের স্থায়ীত্ব। 

একই সঙ্গে পৃথিবীর ঘূর্ণন বেড়ে গেলে পৃথিবীতে বাতাস এর গতিও বেড়ে প্রায় সব সময়ই টর্নেডোর গতির সমান হত। বাতাসের ঐ গতিতেবিলুপ্ত হত সকল পাখি। মানুষ থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবজন্তুর টিকে থাকাও প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত। শুধুমাত্র বড় গাছপালাই টিকে থাকতে পারত। এভাবেই চাঁদ না থাকলে পৃথিবীতে প্রানের অস্তিত্বই প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ