NewsOne24

এত জিঘাংসা কিশোর মনে কোথা থেকে আসছে!

ফিদানূর সুদর্শন

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১২:৫১ এএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ বুধবার

অপরিণত বয়সে এইভাবে লাশ হওয়া কেন? এই প্রশ্ন আজ সবার মনে

অপরিণত বয়সে এইভাবে লাশ হওয়া কেন? এই প্রশ্ন আজ সবার মনে

গাজীপুরে দিনদুপুরে সবার সামনে এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে অপর কয়েকজন। এসময় তাদের টার্গেটে থাকা আরেক শিকার পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পয়। মঙ্গলবার বিকেলে শহরের রাজদীঘির উত্তরপাড়ে এ ঘটনাটি ঘটে। 

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাজন (১৬) নামের এক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। সাজনের বড় ভাই রাজন জানান, গতকাল (সোমবার) দীঘিরপাড়ে ধূমপান করছিল জুনিয়র এক কিশোর। এসময় রানা নামের ওই কিশোরকে শাসন করে কিছু ধমক দেয় সাজন। তখন নূরুলও ছিল সাজনের সঙ্গে। জুনিয়র রানা বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। এরপর তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। রানা দেখে সাজনদের নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। 

নিহতের স্বজনরা জানায়, মঙ্গলবার দুপুরের খাবার শেষে সাজনদের বাড়ির সামনের রাজদিঘীর পাড়ে  সাজন ও নূরুল বসে গল্প করছিল। এসময় কয়েকজন কিশোর চাপাতি হাতে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তারা বিপদ টের পায়- বুঝে ফেলে যে হামলা হতে যাচ্ছে তাদের ওপর। নিরস্ত্র দুই কিশোর জীবন নাশের আশঙ্কায় দৌড় দেয়। সাজন দ্রুত দৌড়ে পাশের বাড়ির একটি ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু নূরুল ততটা সুবিধা করতে পারেনি। তবে পালাতে না পেরে দিঘীর পানিতে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু বেপরোয়া চাপাতিধারী কিশোরদল পানি থেকে পাড়ে তুলে নূরুলকে চাপাতি দিয়ে কোপায়। পিঠে মারাত্মক একটি কোপের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে অচেতন হয়ে পড়ে। 

এরপর হামলাকারী কিশোর মাস্তান দল সাজনের ‘ব্যবস্থা করতে’ পাশের বাড়িতে যায় যেখানে সে লুকিয়েছিল। সাজনকে পাকড়াও করতে যে ঘরে সে দরজা বন্ধ করে লুকিয়েছিল সেই ঘরের দরজা-জানালায় কোপাতে থাকে তারা, দরজায় লাথিও মারতে থাকে। সবই ঘটছিল দিনে-দুপুরে আশপাশের লোকজনের জ্ঞাতসারে। একপর্যায়ে একে একে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ঘাতক কিশোর দল স্থান ত্যাগ করে। এপর্যায়ে রক্তাক্ত-নিস্তেজ নূরুলকে উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় লোকজন। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘাষণা করেন। খবর পেয়ে নিহতের স্বজনরা হাসপাতাল মর্গে ছুটে আসে। এসময় তাদের আহাজারিতে সেখানেএক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। 
    
নিহত কিশোর নূরুল ইসলাম (১৪) শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার ভায়াডাঙ্গা (ভাগাতা) গ্রামের ফকির আলীর ছেলে। গাজীপুর শহরের টাংকিরপাড় এলাকার ফরিদ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটে ফকির আলী পাখি ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। 
 
ফকির আলী জানান, তিনি পরিবার নিয়ে আগে শহরের সাহাপাড়ায় থাকতেন। মাত্র দুইদিন আগে ফরিদ মিয়ার বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে উঠেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে নূরুল ইসলাম বড় ছিল। সে ফেরি করে চা বিক্রি করতো এবং মাঝে মধ্যে টেম্পু বা বাসে হেলপারিও করতো।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার এসআই লিয়াকত আলী জানান, জুনিয়র-সিনিয়র দ্বন্দ্বের জের ধরে এ খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো- ১২/১৪ বছরের শিশুরা কী করে চাপাতি নিয়ে দিনে-দুপুরে তাদের কাছাকাছি বয়সের সিনিয়রদের ওপরে হামলে পড়তে পারে! কীভাবে তারা একজনকে খুন করে আরেকজনকে খুনের জন্য দরজা জানালায় কোপাতে পারে। অন্যের প্রতি, বয়সে বড়র প্রতি তাদের শ্রদ্ধা-ভক্তি কোথায় হারালো? সবসময় আমাদের আশপাশের মানুষগুলোর কী হয়ে যায়? বরগুনার রিফাত হত্যা বা রাজধানীর বাড্ডায়য় ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা বেগম রেনু হত্যারর মতো এরকম আরো অনেক হৃদয় বিদারক ঘটনায় দেখা যাচ্ছে- পাশের মানুষগুলো পলাশি প্রান্তরে সিরাজের সৈনিকদের মতো পুতুল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে? অথবা একটি কাজ করতে থাকে- সেলফোনে ঘটনা রেকর্ড করতে থাকে। কারণ, এমন হটকেক টাইপ থ্রিলিং ভিডিও ক্লিপ দ্রুতই ফেসবুকে-ইউটিউবে পোস্ট করতে হবে। মানুষ বাহবা দেবে এমন দুর্লভ ভিডিওর জন্য। পড়বে লাইক-কমেন্ট, হবে শেয়ার। এগুলেই কি আমাদের চরিত্রধর্ম! মিয়ানমারের ইয়াবা কি এভাবেই শেষ করে দিচ্ছে আমাদের কিশোর-তরুণদের হৃদয়-মন-বিবেককে?

একসময় কি সৌজন্যবোধ, ভদ্রতা, নম্রতা, সহনশীলতা, বড়’র প্রতি শ্রদ্ধা ছোট’র প্রতি স্নেহ কি ছিল না আমাদের মাঝে, কিশোর তরুণ-বয়সে? সহজলভ্য বহুমাত্রিক বিনোদন, নেশাদ্রব্য কি সুকুমারবৃত্তির প্রস্ফূটণকাল কৈশোরকে উচ্ছ্বন্নে নিয়ে যাচ্ছে এভাবে? কেউ কি নড়েচড়ে বসবে না! মহাবিপর্যয় তো ঘটে চলেছে অলক্ষ্যে, অগোচরে। যখন সচেতন হবো, তৎপর হবো তখন হয়তো সময় থাকবে না আর। 

[এই বিভাগে প্রকাশিত লেখার বক্তব্য, তথ্য, যুক্তি- সবকিছুর দায় লেখকের একার
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে