NewsOne24

নব্য-জেএমবি’র পাঁচ ‘উলফ-প্যাক’ গ্রেপ্তার 

স্টাফ রিপোর্টার

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১০:২১ পিএম, ৯ আগস্ট ২০১৯ শুক্রবার

গত দুই দিনে রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা ও বারিধারা আবাসিক এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির ‘উলফ প্যাক’ গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ (সিটিটিসি)। তারা হচ্ছেন শিবলী শাহাজাদ ওরফে সাদী, শাহ এম আসাদুল্লাহ মর্তুজা কবীর ওরফে আবাবিল, মাসরিক আহমেদ, আশরাফুল আল আমীন ওরফে তারেক ও  এস এম তাসনিম রিফাত। এদের মধ্যে শাহ এম আসাদুল্লাহ মর্তুজা কবীর ওরফে আবাবিল ও মাসরিক আহমেদ বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। 

সিটিটিসি সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত দুই দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তুলা দিয়ে পেঁচানো ১০টি ডেটোনেটর, চারটি গ্যাসের বোতল ও পাঁচটি সেল ফোন জব্দ করা হয়েছে। শুক্রবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা নব্য জেএমবি’র একটি ‘উলফ প্যাকের’ সদস্য। তারা দেশ-বিদেশের কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের অনলাইন প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশকে টার্গেট করে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে শলা-পরামর্শ করার জন্য বারিধারার একটি বাসায় একত্রিত হয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই ‘এনক্রিপটেড অ্যাপ সিক্রেট চ্যাট’এর মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ করতেন। তাদেরকে আসামি করে রাজধানীর ভাটারা থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে। মামলা সূত্রে তাদেরকে পাঁচ দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’ 

গ্রেপ্তারদের গ্রুপের পরবর্তী মিশন কী হতে পারে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত ও নিরাপত্তার স্বার্থে উলফ-প্যাকের হামলা পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে এমন কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) এর সঙ্গে মিল রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

সিটিটিসি সূত্র জানায়, অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে ঢুকে সেলফ মোটিভেটেড হয়ে যারা জঙ্গি হন, তাদের লোন-উলফ বলা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এই লোন-উলফ সদস্যরা বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে জোটবদ্ধ হয়। যাদের কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন বা নেতা নেই। এই কৌশলে অনেক আগে থেকেই জঙ্গিরা বিভিন্ন দেশে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। সিটিটিসি প্রধান মনির বলেন, ‘সাধারণত সেনাবাহিনীতে এই কৌশলের ওপর প্রশিণ দেওয়া হয়ে থাকে।’ 

অপর এক  পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শিবলী একটি ইস্তেহাদি হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আবাবীল তাদের আধ্যাত্মিক নেতা। বিশেষ পরিকল্পনা করে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ করতো। হামলা চালাতে যে অর্থ লাগতো ইন্টারনেটের গোপন জগৎ ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে তা সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। আমাদের কাছে তাদের এ ধরনের অর্থ সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য প্রমাণও রয়েছে।’

সিটিটিসি সূত্র আরো জানায়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে যশোরের বাসিন্দা মাসরিক আহমেদের দায়িত্ব ছিল সীমান্ত পথ দিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করা। এছাড়া তারেক ও তাসনিম রিফাত মূলত সদস্য সংগ্রহের কাজ করতো। এই পাঁচ জনের সঙ্গে আরো কিছু ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে পারলে পুরো গ্রুপটি সম্পর্কে জানা যাবে।

এদিকে, গ্রেপ্তার পাঁচজনের একজনের পরিবার দাবি করেছে, আসাদুল্লাহ মর্তুজাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে গত ২৯ জুলাই গ্রিন রোড এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আর গত ৩১ জুলাই মাশরিককে যশোর থেকে তুলে নিয়ে আসা হয় বলে জানায় পরিবার। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার এই পাঁচজনকে আজ (শুক্রবার) আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চায় সিটিটিসি। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সিটিটিসির প্রধান মনিরুল আরো জানান, জঙ্গিবাদে কেউ একাকী উদ্বুদ্ধ হলে তাকে ‘লোন উলফ’ বলে। আর এই সংখ্যাটি যখন এক থেকে পাঁচজন বা তার অধিক হয় তখন চক্রটিকে ‘উলফ প্যাক’ বা প্যাক অব উলফ (নেকড়ের দল) বলা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।

মনিরুল বলেন, গ্রেপ্তার এই পাঁচজনই বয়সে তরুণ। এর মধ্যে শিবলী শাহাজাদ ইস্তিহাদি (আত্মঘাতী) হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি আইইডি (হাতে তৈরি বোমা) তৈরির কিছু সরঞ্জাম জোগাড় করেছিলেন। সম্প্রতি (২৩ জুলাই) খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া আইইডিতে গ্যাসের এক ধরনের ক্যান ব্যবহৃত হয়েছিল। সে ধরনের চারটি কনটেইনার শিবলী শাহাজাদ সংগ্রহ করেছিলেন। ওই ঘটনার সঙ্গেও এই পাঁচজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন।

মনিরুল জানান, রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলার পর থেকে পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার বা নিহত হয়েছে। সে জন্য তারা পুলিশকে টার্গেট করছে। হামলার জন্য এই গ্রুপটি সুনির্দিষ্ট যে জায়গাটি নির্ধারণ করেছিল, তা কৌশলগত কারণে প্রকাশ করছেন না। হামলাটি পরিচালনা করার কথা ছিল শিবলী শাহাজাদের। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করার কথা ছিল মর্তুজার। মর্তুজা একদিকে আধ্যাত্মিক নেতা, আরেক দিকে সে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে টেররিস্ট ফাইনান্স সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল। হামলা পরিচালনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয়, সেটা তিনি ডার্ক ওয়েবে সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। 

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, গ্রুপের পাঁচ সদস্যের মধ্যে শিবলী ২০১৪ সাল থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ। কলাবাগান এলাকার আল আমিন মসজিদে সে সময়ে জড়ো কিছু জঙ্গি। এমন কিছু জঙ্গির মাধ্যমে শিবলী উদ্বুদ্ধ হন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, মর্তুজা কবিরের সঙ্গে প্রায় আড়াই মাস আগে বসুন্ধরা ডি ব্লকের একটি মসজিদে পরিচয় হয়। মাশরিক আর মর্তুজা কবির দীর্ঘদিনের বন্ধু। আর তাসনিম রিফাতকে এক সময় পড়াতেন মাশরিক।

তবে গ্রেপ্তার মর্তুজা কবীরের মা হোসনে আরা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গত ২৯ জুলাই তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে যশোরের বাড়িতে আসার জন্য বাসের টিকিট কিনতে যায়। সেখান থেকে কলাবাগানে তার চাচার বাসায় ফেরার পথে গ্রিনরোড এলাকা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় তারা কলাবাগান থানায় নিখোঁজের একটি জিডি করেছেন। মর্তুজাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এক দিন পর গত ৩১ জুলাই মাশরিককে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। হোসনে আরার দাবি, তার ছেলে পড়ুয়া এবং নিয়মিত ধর্মকর্ম করে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে