NewsOne24

ঈদ, স্বাধীনতা দিবস এবং মোদির দুশ্চিন্তা!

নিউজ ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১১:২৬ এএম, ৮ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার

জম্মু-কাশ্মীর। ছবি: সংগৃহীত

জম্মু-কাশ্মীর। ছবি: সংগৃহীত

নীরব গোটা এলাকা, বন্ধ দোকানপাট, নিস্তব্ধ নগরী। চারদিকে সেনা বুটের গম গম শব্দের মধ্যেই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের মধ্যে চলছে কথোপকথন। ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে একজনকে ঘিরেই কথা হতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এই মুহূর্তে কাশ্মীরের পরিস্থিতি বুঝতে সেখানে অবস্থান করছেন আর তাকে ঘিরেই সেই জটলা। 

অজিত ডোভাল ও কয়েকজন কাশ্মীরি। ছবি : সংগৃহীত 

তবে, অন্যত্র ছবিটা এমনও না, উপত্যকাটি বিস্ফোরণের পূর্বে একটু স্তব্দ হয়ে আছে, বিস্ফোরণের সময় আগামী সপ্তাহ, ভারতের একমাত্র মুসলিম অঞ্চল কাশ্মীরের কোরবানি ঈদ ও পরে ভারতের স্বাধীনতা দিবস। 

ভারত শাসিত গোটা কাশ্মীর উপত্যকাকে বিপুল সংখ্যক আধাসেনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ইন্টারনেট, মোবাইল, এমনকি ল্যান্ডলাইনও কার্যত বন্ধ থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে কাশ্মীরের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় নেই। দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের ওপরে কড়া নজর রাখছে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী। 

আধাসেনা দিয়ে গোটা কাশ্মীর মুড়ে দিয়ে আপাত শান্তির ছবি তুলে ধরলেও, এই মুহূর্তে মোদির মূল দুশ্চিন্তা দুটি। প্রথমত, সোমবার ঈদ আর দ্বিতীয়ত, বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাধীনতা দিবস। ঈদের সময়ে টানা কারফিউ চললে মানুষের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা। বিষয়টির সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত।

এখনো কাশ্মীর-সিদ্ধান্তে দেশটির বৃহত্তর মুসলিম সমাজ নীরব। তাই মেপে পা ফেলার পক্ষপাতী মোদি, ঈদ উদযাপনে কাশ্মীরি জনগণকে কতটা ছাড় দেয়া হবে, তা নিয়ে দ্বিধায় দিল্লী। কারণ, ছাড় দিলে পরে তা বিক্ষোভে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না দেশটির গোয়েন্দারা। আর, স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরে যে বিক্ষোভ হবে, তা এক প্রকার ধরেই নিয়েছেন অমিত শাহের মন্ত্রণালয় এবং তা রোখার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যেই শ্রীনগর থেকে আজ দফায়-দফায় বিক্ষোভ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে বুধবারেই (৭ আগস্ট)। বিজেপি সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সড়কে নামতে শুরু করেছেন বিক্ষোভকারীরা। গ্রেফতার হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। বিক্ষোভকারীদের হটাতে ছররা বন্দুকের ব্যবহার করেছে ভারতের আধাসেনা। ছররার আঘাতে শ্রীনগরের হরি সিংহ হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ডজনখানেক বিক্ষোভকারী। যাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন দৃষ্টিশক্তি হারানোর মুখে বলে জানা গিয়েছে। 

কাশ্মীরি সাংবাদিক আদনান বাট বুধবার টুইটে দাবি করেছেন, ছররা গুলির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি একাদশ শ্রেণির ছাত্র আজরার খান। হাসপাতালে জখম ছাত্রের ছবিও টুইট করেছেন তিনি। আদনানের দাবি, প্রাণে বাঁচলেও আজরারের দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

পর্যবেক্ষকদের মতে, বড় মাপের না হলেও ছোট ছোট বিক্ষোভ শুরু হয়েছে কাশ্মীর জুড়েই। এর মধ্যে সোমবার ঝিলম নদীতে ডুবে ওসেইফ আলতাফ নামে এক কিশোরের মৃত্যুর খবরও সামনে এসেছে। পালপোরার বাসিন্দা আলতাফের পরিবারের অভিযোগ, সে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল। ফেরার পথে ধাওয়া করে আধাসেনা। ভয়ে তারা ঝিলমের জলে ঝাঁপ দেয়। বাকিদের উদ্ধার করা গেলেও, সাঁতার না জানায় ডুবে যায় ওসেইফ। আন্তর্জাতিক মহলের সামনে কাশ্মীর যে স্বাভাবিক, সেই বার্তা পৌঁছে দেয়ার দায় রয়েছে মোদী সরকারের।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড