NewsOne24

মিন্নি ফেঁসে গেলেন যে কারণে !  

নিউজ ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১২:০৮ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল নির্দেশদাতা ছিলেন স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। 

তবে স্বামীকে হত্যার নয় শায়স্তা করার নির্দেশ ছিল মিন্নির এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু তার এই নির্দেশ যে স্বামীর হত্যা পর্যন্ত গড়াবে এমনটা বুঝে উঠতে পারেননি। আর এতেই ফেঁসে গেছেন মিন্নি।     

এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় প্রধান স্বাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বুধবার বিকেলে আদালতের বিচারক মিন্নির কাছে জানতে চান, ‘আপনার পক্ষে যেহেতু কোনো আইনজীবী নেই, তাই এ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য আছে?’ 

এই প্রশ্নের জবাবে মিন্নি আদালতকে বলেন, ‘আমি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নই। আমি সেদিন আমার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমি নির্দোষ। আমি আমার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

আদালত মিন্নিকে প্রশ্ন করেন, এ হত্যাকাণ্ডের আগে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে আপনার অসংখ্য মেসেজ ও ফোনকল রয়েছে। আদালতের এই প্রশ্নে মিন্নি চুপ হয়ে যান এবং কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।  

এরপর পুলিশ আদালতে মিন্নির ৭ দিনের রিমান্ড দাবি করলে তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির জড়িত থাকার বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত একজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মিন্নি এই হত্যা পরিকল্পনায় ছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। 

হুমায়ুন কবির রিমান্ড আবেদনে আরো জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির ফোনালাপের তথ্যও পাওয়া গেছে। এসব বিষয় নিশ্চিত হতে এবং মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার আবেদন জানান তিনি। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

এর আগে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মিন্নিকে থানায় নেওয়া হয়। পরে দীর্ঘ প্রায় ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। 

পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানান, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ব্যক্তিগত কারণ ও আক্রোশ থেকে এ রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঘনিষ্ঠজন ও গোয়েন্দা সূত্রে জানায়, মিন্নি তার স্বামী রিফাতকে ‘শিক্ষা’ দিতে চেয়েছিলেন। কারণ নয়ন বন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ান রিফাত। তাই রিফাতকে একটু ‘টাইট’ (শাস্তি) দিতে নয়ন বন্ডকে দায়িত্ব দেন মিন্নি। মিন্নি নিজেই ছক এঁকে দিয়েছিলেন, কিন্তু নয়ন যে এভাবে ‘টাইট’ দেবে তা ভাবেননি মিন্নি।

সূত্র জানায়, ঘটনার দিন স্বামী রিফাত শরীফের সঙ্গে কলেজে যান মিন্নি। পূর্ব পরিকল্পনা মতো কলেজ গেটে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। কিন্তু রিফাতকে ‘টাইট’ দেয়ার পরিকল্পনা যে হত্যা পর্যন্ত গড়াবে সেটি মিন্নির ধারণাতেও ছিল না। এজন্যই ঘটনার দিন রিফাতকে নয়ন বন্ডের গ্যাংরা টেনে হেচড়ে নেয়ার সময় মিন্নি নির্লিপ্তভাবে হেঁটে যাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন নয়নরা তাকে সামান্য ‘টাইট’ দিয়ে ছেড়ে দেবে। কিন্তু মারধরের এক পর্যায়ে হঠাৎ নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী যখন চাপাতি দিয়ে অতর্কিতভাবে রিফাতকে কোপাতে থাকে, তখনই মিন্নি ঝাপটে ধরে রিফাতকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালান। কিন্তু সে চেষ্টা বিফলে যায়।

গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, ঘটনার আগের দিন রাতে নয়নের সঙ্গে মিন্নির প্রায় ১৫ মিনিট কথা হয়। সেই সূত্র ধরেই মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মিন্নিকে নিজ বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইনে নেয়া হয়। পরে প্রায় ১৪ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

পুত্রবধূকে মামলার প্রধান স্বাক্ষী করেছিলেন শ্বশুর  

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী তার বাবা আবদুল হালিম দুলাল। তিনি প্রথমে মামলায় মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন। পরে তার অভিযোগ আমলে নিয়ে মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকেল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। পরে দ্বিতীয় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হত্যায় মিন্নির সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

২৭ জুন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনের নামে এবং চার-পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।

পুলিশ সুপারের বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার জানানো হয়, এ পর্যন্ত এ মামলায় এজাহারনামীয় সাতজন ও সন্দিগ্ধ সাতজনসহ ১৪ জনকে (মিন্নিসহ ১৫ জন) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১০ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, ৩ জন রিমান্ডে আছে।

দ্বিতীয় ভিডিওতে ফাঁস খলনায়িকা মিন্নি 

এই হত্যাকাণ্ডের প্রথম ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে 'স্বামীকে বাঁচানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিল স্ত্রী মিন্নি' এমন আলোচনায় অনেকটা সিনেমার ঘটনার মতো নায়িকা বনে যান তিনি। 

প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ থেকে একে একে আসামিদের নাম প্রকাশ পেতে থাকে। হত্যার নেপথ্যে উঠে আসে বরগুনার অন্যতম সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর নাম। প্রকাশ পায় এই দুই সন্ত্রাসীর নেতৃত্বাধীন জিরো জিরো সেভেন নামক গ্রুপের নাম। শুধু তাই নয়ন ও রিফাত ফরাজীকে বরগুনায় শেল্টার দেয়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের নামও প্রকাশ পায় এই এক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। এসব আলোচনার মধ্যেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রসফায়ারে নিহত হন হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড। গ্রেফতার করা হয় রিফাত ফরাজীকেও। হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরো আসামিরাও একে একে গ্রেফতার হন। 

তবে এসবের মধ্যেও যেন থলের বিড়াল তখনো আড়াল! তবে ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয় প্রকাশিত আরেক ভিডিও। সেই ভিডিওতে নায়িকা বনে যাওয়া নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নির আচরণে সন্দেহের সমালোচনা উঠে। শুধু তাই নয় এর আগে প্রকাশ পায় নয়নের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্কেরও। কিন্তু সব অভিযোগই ভেস্তে দেন মিন্নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে কান্নার আহাজারি আর স্বামী হারানো বেদনার আবেগাপ্লুত চিত্রই ফুটে উঠে। 

তারপরও যেন মিন্নির অপরাধ ঢাকা পরছিল না কোনোভাবেই। আর সেই আগুনে ঘি ঢালেন ক্রসফায়ারে নিহত নয়ন বন্ডের মা হালিমা বেগম। মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এসে ফাঁস করেন হত্যাকাণ্ডের খল নায়িকা মিন্নির আসল চরিত্র! 

তিনি বলেন, মিন্নি কোনোভাবেই দোষ এড়াতে পারে না। নয়ন বন্ড হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে মিন্নির পরোক্ষ মদদেই। রিফাতের স্ত্রী হলেও মিন্নি অধিকাংশ সময় নয়নকেই দিয়েছে, সেটা সশরীরে সাক্ষাতে কিংবা মুঠোফোনে।

নয়নের মা বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বুধবার (২৬ জুন)। কিন্তু আগের দিন মঙ্গলবারও মিন্নি আমাদের বাড়িতে এসেছিল। সে আমার ছেলে নয়নের সঙ্গে দেখা করেছে। ছেলে তো মারাই গেল, এখন আর মিথ্যা কথা বলে কী লাভ? মিন্নি যে ঘটনার আগের দিনও আমাদের বাড়িতে এসেছিল; সেটি আমাদের প্রতিবেশীরাও দেখেছে। আমার ছেলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।            

এরপর গতকাল ১৩ জুলাই রাত ৮টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। সংবাদ সম্মেলনে ১০টি কারণ দেখিয়ে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। পরে রবিবার সকালে বরগুনার সর্বসাধারণ জনতা প্রেসক্লাবের সামনে আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে বরগুনার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ, চাচা আবদুল আজীজ শরীফ, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অ্যাভোকেট সুনাম দেবনাথ, সদর উপজেল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মারুফ মৃধা প্রমুখ। এতে নিহত রিফাতের বন্ধুরাও উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে বক্তারা মিন্নিকে রিফাত হত্যার ‘নেপথ্যের খল নায়িকা’ উল্লেখ করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। 

পুত্রবধূ মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি শ্বশুরের  

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে আমার ছেলে রিফাতকে বিয়ে করেছে। মিন্নি ও তার পরিবার এটি গোপন করেছে। আমার ছেলেকে হত্যার পেছনে মিন্নির মদত আছে। তাকে গ্রেফতার করলে সব বিষয় পরিষ্কার হবে।

হালিম দুলাল শরীফ বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা নিয়ে কিছু বিষয় জানাতে আপনাদের সামনে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও সাংবাদিক ভাইদের সহযোগিতায় রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত এ পর্যন্ত ১৪ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে খুবই দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে; এই হত্যার ঘটনার নেপথ্যে থাকা মূল হোতাদের কেউ কেউ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কীভাবে তারা বাইরে তা বলার জন্যই আমি আজ এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি বলেন, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয়টি মিন্নি ও তার পরিবার সুকৌশলে গোপন করে। নয়নের স্ত্রী থাকা অবস্থায় আমার ছেলেকে বিয়ে করে মিন্নি। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় যাওয়া-আসা করত। নিয়মিতভাবে নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করত সে।

দুলাল শরীফ বলেন, এরই মধ্যে নয়নের মা একাধিক গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে আরো অনেক তথ্য দিয়েছেন। নয়নের মা মিন্নির আগের বিয়ের কথা পরিষ্কারভাবে বলেছেন।

রিফাতের বাবা বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডের আগের দিন সকালে নয়ন বন্ডের সঙ্গে দেখা করতে যায় মিন্নি। ওই দিন সন্ধ্যায়ও নয়নের বাসায় যায় সে। রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের বাসায় মিন্নির নিয়মিত যাতায়াত ছিল।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন রিফাতকে ছাড়া কলেজে গেলেও ঘটনার কিছু সময় আগে রিফাতকে বাসা থেকে কলেজে ডেকে নিয়ে যায় মিন্নি। কারণ হত্যাকারীদের সঙ্গে মিন্নির আগে থেকে যোগাযোগ ছিল। মোটরসাইকেলে কলেজ থেকে মিন্নিকে নিয়ে আসার জন্য রিফাত গেলে হত্যাকারীদের না দেখে আবার কলেজে ঢুকে যায় মিন্নি। সেই সঙ্গে সময় কাটাতে থাকে। পরে হত্যাকারীদের উপস্থিতি দেখে মিন্নি কলেজ থেকে বের হয়। ওই সময় মিন্নিকে নিয়ে আসতে গেলে আমার ছেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যাকারীরা।

তিনি আরো বলেন, মিডিয়ায় প্রকাশিত নতুন ভিডিওতে বিষয়টি পরিষ্কার দেখা যায়। আমার ছেলেকে রিফাত ফরাজী ও অন্যরা যখন মারধর করতে করতে নিয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবে পেছনে পেছনে হাঁটছিল মিন্নি। যা কোনোভাবেই আমি মেনে নিতে পারিনি। এটি দেখে পরিষ্কার বুঝা যায় আমার ছেলে হত্যার পেছনে মিন্নির হাত রয়েছে। মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় রিফাতকে কোপানোর সময় মিন্নি খুনিদের জাপটে ধরেছে। কিন্তু খুনিরা কেউ মিন্নির ওপর চড়াও হয়নি এমনকি মিন্নিকে একটা টোকাও দেয়নি। যখন রিফাত আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় একা একা রিকশাযোগে হাসপাতাল যাচ্ছিল তখন মিন্নি তার ব্যাগ ও স্যান্ডেল গোছানোর কাজে বেশি ব্যস্ত ছিল। খুনিদের একজন রাস্তা থেকে ব্যাগ তুলে মিন্নির হাতে দিয়েছে। মিন্নি ওই ব্যাগ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল। এছাড়া আমার ছেলে রিফাত শরীফকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সময়ও যায়নি মিন্নি। আসলে সবই ছিল মিন্নির অভিনয়।

এ সময় রিফাতের বাবা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে এসব নিয়ে একাধিক সংবাদ ও ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। আপনারা সবাই অবগত আছেন। তাহলে কেন এখন পর্যন্ত মিন্নিকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। তাকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না কেন পুলিশ? আমার বিশ্বাস মিন্নিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার ছেলে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। এ হত্যার পেছনে মিন্নির হাত আছে।

গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটে স্ত্রী মিন্নির সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ওই দিনই ফেসবুকে ভাইরাল হয়। রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতার কেউ কেউ বর্তমানেও রিমান্ডে।

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএসকে