NewsOne24

জলাবদ্ধতায় নগরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও ‘তলিয়ে গেছে’

নিউজ ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১০:০৮ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশে কয়েক ঘণ্টার থেমে থেমে বৃষ্টিতে রাজধানীতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর একটি বড় অংশ।

এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কোনো কোনো এলাকায় বসতবাড়িতেও ঢুকেছে পানি।

জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে গাড়ি, পানিতে রিকশা অর্ধেক ডুবে আছে। কোনো এলাকায় সড়কে পানির ওপর দিয়েই নৌকার মতো গাড়ি চলছে। বোঝার উপায় নেই এটা রাস্তা না নদী!

রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ হচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ। কয়েক বছর ধরে এই সংশ্লিষ্টরা বলে আসছে আগামী বছর ঢাকায় আর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। তবে এই আগামী বছর আর আসে না। শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরের কিছু আগ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট-অলিগলি পানির নিচে তলিয়ে যায়। মূলত রাজধানী নয়, তলিয়ে গেছে সংশ্লিষ্টরা! কেউই তাদের কথা রাখতে পারেনি।

গত বছরের ২ এপ্রিল ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেছিলেন, টানা ১০ দিন বৃষ্টি হলেও রাজধানীর কোথাও পানি জমবে না। কোথাও যেন ৩ ঘণ্টার বেশি পানি জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখা হবে। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা কাজ করছি। আমরা সেচ দিয়ে যতদ্রুত সম্ভব পানি অপসারণ করছি।

তাকসিম বলেন, ঢাকা শহরে একসময় ৬৫টি খাল ছিল, ইতিহাস তাই বলে। আমরা এখন ২৬টি খাল দেখছি। খালের তো অস্তিত্বই নেই। যদি ৬৫টি খাল আর ৫টি নদী থাকতে তাহলে তো জলজট নিয়ে কথাই বলতে হতো না।

তিনি আরো বলেন, আমরা খাল দখলের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেই না, দেবও না; তিনি যত বড় মাস্তানই হোক আর যাই হোক। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে খালে পাড় বেঁধে ওয়ার্কওয়ে নির্মাণ করতে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত ১৩টি খালের পাড় বাঁধানো হয়ে গেছে।

২০১৭ সালের ২৮ জুলাই তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন অঙ্গীকার করে বলেছিলেন, এ বছরের (২০১৭) মতো আগামী বছর রাজধানীতে আর পানি জমবে না। আমরা সার্ভে করে দেখেছি, ঢাকা শহরের প্রায় ৪৬টি খালের মধ্যে ১৮টি খালের উন্নয়ন করতে হবে। আমি ওয়াসাকে বলেছি, বেশি বৃষ্টি হলেও যাতে পানি চলে যায়।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, এখন তো সাতদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এটা কিন্তু একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। তবে পরিস্থিতিটা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি কোন জায়গাটায় আমরা আটকা পড়ছি। সে জায়গাটায় আমরা ত্বরিত ব্যবস্থা নেব। আমি প্রমিজ করছি যে, সামনের বছর আপনারা এ ধরনের পরিস্থিতি দেখতে পাবেন না।

একইভাবেই বছর বছর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনসহ সংশ্লিষ্টরা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকও, অবশ্য তিনি কিছু কাজ শুরুও করেছিলেন। তবে সেগুলোর কোনোটি আর এগোচ্ছে না, কোনোটি এগোলেও পেয়েছে কচ্ছপ গতি। মেয়ের হওয়ার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চেয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। কিন্তু আজো তলিয়ে গেল ঢাকা, সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসীর কাছে তলিয়ে গেছে সংশ্লিষ্টরাও।

শুক্রবারের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে- মিরপুর-১০ নম্বর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়ার মূল সড়ক রোকেয়া সরণী, মহাখালীর আজরতপাড়া, নাখালপাড়া, গ্রিন রোড, মালিবাগ, চৌধুরিপাড়া, ডিআইটি রোড, বাড্ডার কিছু অংশ, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, পান্থপথ, বঙ্গভবন এলাকা, ধানমন্ডি-২৭, শুক্রাবাদ, জিগাতলা, মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা।

জলাবদ্ধতার কারণে ছুটির দিনে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির কারণে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরতে হয়েছে জলে ডুবে থাকা এলাকার ব্যবসায়ীদের একটি অংশকে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি