NewsOne24

ওড়িষায় ২৪৫ কি.মি বেগে তাণ্ডব, প্রস্তুত বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ০১:০৩ পিএম, ৩ মে ২০১৯ শুক্রবার

ওড়িশার

ওড়িশার

এ মুহূর্তে ভারতের ওড়িশা উপকূলে তাণ্ডবরত ‘সুপার সাইক্লোন’ ফণী ঘণ্টায় ২৪৫ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়েছে। তবে এখনো মূল আঘাত হানেনি ভারতীয় উপকূল অঞ্চলে। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি। এ খবর দিয়েছে ভারতের সর্বাধিক পঠিত দৈনিক জাগরণের অনলাইন সংস্করণ জাগরণ.কম। তবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার সময় ফণীর তেজ দুর্বল হয়ে পড়বে, বাতাসের গতিবেগ থাকতে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত- এ খবর দিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ। প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রস্তুতি, মোকাবেলা এবং উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দক্ষতার সুনাম রয়েছে বিশ্বজুড়ে। সেই হিসেবে এবারও প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন দপ্তরের দুর্যোগ মোকাবেলা ইউনিটগুলো।    

এই মহাঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারতের ওড়িশা, অন্ধ্র ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে চলছে প্রবল বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডব। সেই সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে উপকূল। প্রায় ১১ লাখ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেরও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার তৎপরতা শুরু হয়েছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে, আজ (শুক্রবার) বিকেলে ওড়িশা উপকূলে আসল আঘাত হানতে পারে ফণী। এ সূত্রে বাংলাদেশে শুক্রবার সন্ধ্যার কথা বলা হলেও পরে জানা যায় মধ্যরাতে ফণী বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে। তবে সর্বশেষ তথ্যে ভারতীয় আবহাওয়া অফিসগুলোর সূত্রে জানা গেছে, আজ রাত বাংলাদেশ সময় সাড়ে আটটায় পশ্চিমবঙ্গ উপকূলীয় অঞ্চল তথা বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে ফণী। 

ওড়িশার হায়দারাবাদ আবহাওয়া অফিস জানয়েছে, রাজ্যের পুরি জেলায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাতাসের গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ২৪৫ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। প্রবল ঝড় আর বিরামহীন বৃষ্টিতে জনজীবন তচনচ, বিপর্যস্ত। সড়ক, রেল ও আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে ওই অঞ্চলে। পুরি উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় পাড় ভেঙে পড়ছে, ভূমিধস দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ৪৩ বছরে ফণীর মতো এত ভয়াবহরূপের ঘূর্ণিঝড় আর দেখা দেয়নি বঙ্গোপসাগরের এ অঞ্চলে। বিশাখাপত্তনম বন্দরে নৌবাহিনীর ১৩টি এয়ারক্রাফ্ট প্রস্তত রাখা হয়েছে জরুরি উদ্ধার কাজে। 

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ জানায়, স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে মহাঘূর্ণিঝড় ফণী তীর্থনগরী পুরীর ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে গোপালপুর আর চাঁদবালির মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে।

এদিকে, বাংলাদেশে উপকলীয় অঞ্চলের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে দুর্যোগ মোকবেলার প্রস্তুতি হিসেবে। 
শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী সামান্য উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি শুক্রবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকেলে দিকে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে মধ্যরাত নাগাদ খুলনা ও কাছাকাছি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে। খুলনা ও কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার দুপুর নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কি.মি. যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলো এই ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর সংকেতের আওতায়।  

বেপরোয়া পর্যটকদের সামলাতে হিমশিম কর্তৃপক্ষ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন্সসহ অন্যান্য দ্বীপসমূহের আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে বেশ কিছু সাইক্লোন শেল্টার স্থানীয় প্রভাবশালী ও জেলেদের দখলে ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো দখলমুক্ত করে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে কক্সবাজারের চেয়ে সাগরতীরবর্তী অপর পর্যটন কেন্দ্র পটুয়াখালীর কূয়াকাটায় ফণীর আঘাত তুলনামূলক প্রবল হবে। সেখানেও প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট মহল। তবে উভয় এলাকাতেই পর্যটকদের হোটেলবন্দি বা নিরপাদ আশ্রয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। কারণ, বিক্ষুব্ধ আবহাওয়ার মধ্যেও অনেকেই সাগর পড়ে চলে যাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাত ভারতের ওড়িশা, অন্ধ্র ও পশ্চিমবঙ্গে হলেও বাংলাদেশে এর পরবর্তী ধাক্কা এসে পরবে।  
 
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে