জ্বলে উঠলেন মেসি হারলো কলম্বিয়া: প্রাণ ফিরে পেয়েছে আর্জেন্টিনা!
খেলা ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ১১:৩৩ এএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৬ বুধবার | আপডেট: ১২:১৫ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৬ শুক্রবার

লিওনেল মেসি -ফাইল ফটো
১৯৭০ এর বিশ্বকাপ হয়েছিল আর্জেন্টিনাবিহীন। সেবার তারা বাছাই পর্বেই ঠেকে যায়। চার যুগ পরে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য রাশিয়া বিশ্বকাপেও সেই ভাগ্য আর্জেন্টিনার সামনে উপস্থিতপ্রায় অবস্থায় ছিল (বলা যায় এখনো কিছুটা আছ)।
এমন অবস্থায় জয়ে ফেরা ছাড়া বিকল্প ছিল না মেসিদের। সেই বহুল প্রত্যাশিত জয়টা তারা পেয়েছে নিজ মাঠে শক্তিশালী কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয়ে। হতাশায় মুষড়ে পড়া আর্জেণ্টাইন সমর্থকদের ফের জাগিয়ে তুলেছে এই জয়।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে শীর্ষের চারটি দল সরাসরি খেলবে রাশিয়া বিশ্বকাপে। পঞ্চম দলটিকে প্লে-অফ খেলতে হবে ওশানিয়া অঞ্চলের সেরা দলের সঙ্গে। সেই দৌড়ে পিছিয়ে পড়া মেসিরা এবার উঠে এল পাঁচ নম্বরে।
বুধবার ভোরে (বাংলাদেশ সময়) শুরু হওয়া ম্যাচে বহুল প্রত্যাশিত ঝলক দেখাতে সক্ষম হন লিওনেল মেসি। এদিন তিনি নিজে গোল করেছেন এবং অন্যকে দিয়ে করিয়েছেনও। বুধবারের মেসি যাদুতে বলা যায়, রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে রইল আর্জেন্টিনা।
খেলার ষষ্ঠ মিনিটে মেসির ফ্রি-কিক থেকে নিকোলাস ওতামেন্দির করা দৃষ্টিনন্দন হেড ক্রসবারের অল্প উপর দিয়ে যায়। এরপর সম্ভবত নিজেই গোল করার সিদ্ধান্ত নেন ‘অ্যালিয়েন’ খ্যাত এই ফরোয়ার্ড।
দশম মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত ফ্রি-কিক নেন কলম্বিয়ার গোলপোস্ট লক্ষ্য করে। এতে মোক্ষ অর্জণ হয়। তার দমকা গতির বাঁকানো শট ঠেকানোর সুযোগ করে উঠতে পারেননি প্রতিপক্ষ গোলরক্ষী অসপিনা। ডান দিকের ক্রসবারের নিচের দিকে গোত্তা মেরে ভেতরে ঢুকে যায় বল।
এটি ছিল জাতীয় দলের হয়ে করা মেসির ৫৭তম গোল।
এর ১০ মিনিট পর কলম্বিয়ান তরুণ তারকা হামেস রদ্রিগেসের ক্রসে রাদামেল ফালকাও হেড নেন আর্জেন্টাইন গোলপোস্ট লক্ষ্য করে। কিন্তু ক্রসবার ঘেঁষে তা উপর দিয়ে চলে যায়।
এরপর ২৩তম মিনিটে আর্জেন্টিনার পক্ষে দ্বিতীয় গোল করেন লুকাস প্রাতো। বলা যায়, ফর্ম হারানো গনসালো হিগুয়াইনের বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া এই ফরোয়ার্ডকে দিয়ে গোলটি করান মেসি। তার মাপা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ডান কোণা দিয়ে বল জালে পাঠান প্রাতো।
৬৭তম মিনিটে এঙ্গেল ডি মারিয়ার তীব্র শট কলম্বিয়ার পোস্টে লেগে ফিরে যায়। এই বলটিও মারিয়াকে বানিয়ে দেন মেসি।
এরপর ৮৪তম মিনিটে মেসির বানিয়ে দেওয়া বলে গোল করেন মারিয়াও। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের পা থেকে বল কেড়ে ডান দিক থেকে ডি-বক্সে ঢুকে নিজে শট না নিয়ে পিএসজি তারকার পায়ে তুলে দেন অধিনায়ক। একে বলা যায়- মুখে রসগোল্লা তুলে দেওয়া। এরপরের কাজ শুধু চিবানো আর গিলে ফেলা। মারিয়াও তাই করলেন- বলটিকে নিয়ে সোজা গোলে পাঠিয়ে দিলেন।
এরপর ম্যাচে আর কোনো গোল হয়নি। ফলে মেসিরা ৩-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
এই জয়ের পর ১২ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে এখন পঞ্চম স্থানে আর্জেন্টিনা। ১৮ পয়েন্টের কলম্বিয়া ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেছে।
নিজেদের মাঠে ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে হারানো একুয়েডর ২০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে। সান্তিয়াগোতে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সমান পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে চিলি।
বিশ্বকাপ ফুটবলের ল্যাতিন আমেরিকা অঞ্চলের চলমান বাছাইয়ে এখন পর্যন্ত ২৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে ব্রাজিল। ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উরুগুয়ে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে একের পর এক হারে যখন সবাই তাদের সামনে ১৯৭০ এর বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতির সংকেত দেখা শুরু করেছে- তখনো আর্জেন্টাইন কোচ এদগার্দো বাউজা বলছিলেন, বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিয়ে আমি কখনো সন্দেহ করি না।
আর্জেন্টাইন কোচ হয়তো ঠিকই বলেছিলেন। তার কথার প্রমাণ দিতেই যেন অপর আর্জেন্টাইন কোচ হোসে পেকারমানের দল শক্তিশালী কলম্বিয়াকে হারালো তারা হেসে খেলে। টিকে গেছে বাউজাও। কারণ, তিনি কোচ হওয়ার পর থেকে একের পর এক হেরেই যাচ্ছিল তার দল। বলা যায়, ছাত্ররা বাচিয় দিলেন গুরুর চাকরিটা।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে