নরসিংদীতে ২ ইউপি চেয়ারম্যানের রেষারেষির বলি ৪
জেলা সংবাদদাতা
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৩৪ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৬ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:০৪ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৬ শুক্রবার
সরসিংদী: সাবেক ও বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের সমর্থকদের সংঘর্ষে ঝরে গেছে চারটি প্রাণ। আহত হয়েছেন চার পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এ ঘটনা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নে।
নিহত চারজন হলেন, সাবেক চেরম্যান আবদুল হক সরকারের সমর্থক আমিরাবাদ গ্রামের আলতাব আলীর ছেলে মানিক মিয়া (৪০), আবদুস ছালামের ছেলে শাজাহান (৪০), সোনাকান্দি গ্রামের আরব আলীর ছেলে খোকন (৩৫) ও মঙ্গল মিয়ার ছেলে মামুন (২৩)।
সংঘর্ষে রায়পুরা থানার ওসি আজহারুল ইসলামসহ চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। হাতবোমা ও টেঁটার আঘাতে তারা আহত হন।
চারজনকেই জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ওসি আজহারুল ইসলাম জানান, সোমবার বিকালে নিলক্ষার নির্বাচিত চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থক এবং পরাজিত সাবেক চেয়াম্যান আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
আহত গ্রামবাসীর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ফরিদ মিয়া (৩৫), রাকিব (১৬), সিপন (১৮), টেঁটাবিদ্ধ শামিম (২০) ও রোজি বেগমকে (২৮) নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অন্যরা গ্রেপ্তার এড়াতে গোপনে এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের পর স্থানীয় ছয়টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ১০ বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় প্রতিপক্ষ।
পুলিশ জানায়, তাজুল ইসলামের সমর্থকরা রোববার দুপুরে আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এপর্যায়ে দুই পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলি হয়। তখন অন্তত পাঁচটি বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট চলে।
এর জের ধরে সোমবার দুপুরে দুপক্ষ টেঁটা, লাঠি, বল্লম, দাসহ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। এপর্যায়ে ঘটনাস্থলেই তিনজন এবং হাসাপাতালে নেওয়ার পথে আরকেজনের মৃত্যু হয় বলে ওসি আজহারুল জানান।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়েছে বললেও কী পরিমাণ গুলি ছোড়া হয়েছে তা জানাতে পারেননি নরসিংদী পুলিশ সুপার আমেনা বেগম।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এসপি আমেনা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান তিনি।
আমেনা জানান, তাছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিকে গঠন করে তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পেছনের ঘটনা
নরসিংদীর অনেক এলাকায় দেখা যায়, এমনও পরিবার আছে যাদের সদস্যের সংখ্যা ১০ জন তাদের ঘরের চৌকির তলায়, মাচানে আর দরোজার পেছনে শতাধিক টেঁটা মওজুদ থাকে। ভয়বহ এই অস্ত্র ব্যবহার হয় গ্রামের মারামারি-সংঘর্ষে। সংঘর্ষ একবার বেঁধে গেল দূর-দূরান্ত থেকে আম্তীয় স্বজন এসে যোগ দেয় নিজ নিজ পক্ষে। পুলিশ তখন অসহায় দর্শক বা বা উল্টো মারপিট পিটুনির শিকার হয়ে পড়ে উভয় পক্ষের।
এদিক, রবিবারের ঘটনার সম্পর্কে খোঁজ-খবর করতে গিয়েও দেখা যায় যেন একই পটভূমিতে নয়া কাহিনীর মঞ্চায়ন। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক এবং বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে।
এই ধারাবহিকতায় গত শনিবার থেকে থেমে থেমে দুপক্ষে সংঘর্ষ চলছিল। এর রেশ ধরে আজ সোমবার সকালে উভয় পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। নংঘর্ষ মারাত্মক রূপ নিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। দুইপক্ষে মারমুখী অবস্থঅন ক্রমে ভয়াবহ রূপ নিতে থাকে। এসময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে। অপরদিকে দুই পক্ষের সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও টেঁটা নিক্ষেপ করে।
স্থানীয়রা জানায়, নির্বাচনের পর থেকে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত সাত মাসে দুপক্ষের সমর্থকদের মাঝে কমপক্ষে ১৫ বার সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয় শ তিনেক লোক। ভাঙচুর হয় শতাধিক বাড়িঘর, লুণ্ঠিত হয় গোয়ালের গরু, ধানসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র। ক্ষয় ক্ষতি হয় কোটি টাকার মালামাল।
একপর্যায়ে সাবেক চেয়ারম্যন আব্দুল হক সরকারকে গ্রেপ্তারও করা হয়। পুলিশ এলাকায় বেশ কয়েকটি সাঁড়াশি অভিযান চালায়। ফলে সাময়িকভাবে সংঘর্ষ থেমে ছিল। কিন্তু গত শনিবার থেকে যেন শনি লেগে যায় এলাকায়। সকাল থেকে আবার দুই পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয় যার বলি হয় ৪টি প্রাণ।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে
