NewsOne24

ট্রাম্প ধাক্কা: ফের স্বাধীনতা চায় ক্যালিফোর্নিয়া, অতীত কী বলে?

বিদেশ ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ০২:৪৮ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০১৬ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৫৫ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৬ শনিবার

ব্যবসায়ী ট্রাম্পের কাছে হিলারির হার সহজে হজম করতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঞ্চলের জনগণ। কেউ এটা প্রকাশ করছেন প্রকাশ্য কান্নাকাটিতে, কেউ ট্রাম্প বিরোধী স্লোগানে- কেউ মিছিল করে বলছেন, ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট না।

তবে এই যাত্রায় সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়াটা দেখা গেছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। সর্বাধিক ইলেক্টোরাল (৫৫টি) ভোটওয়ালা অন্যতম প্রধান অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের কথা এখন নতুন করে বিবেচনা করছে।

এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, অতীতে প্রতিবেশী মেক্সিকোর অংশ ছিল ক্যালিফোর্নিয়া এবং মাসখানেক কম সময়ের জন্য হলেও স্বাধীন রাষ্ট্রও ছিল।

এখন আবারো স্বাধীন ক্যালিফোর্নিয়ার চিন্তা-বিবেচনার প্রকাশ ট্রাম্পের জয়ের পর ফের দেখা গেল ‘ইয়েস ক্যালিফোর্নিয়া ইনডিপেনডেন্স ক্যাম্পেইন’ নামে গোষ্ঠীর তৎপরতায়। গত বুধবার থেকে জোরেশোরে এ প্রচার শুরু করে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ‘ব্রেক্সিট’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্যালেক্সিট’ নামে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার বের হয়ে যাওয়ার আন্দোলন-প্রক্রিয়ার নাম দেওয়অ হয়েছে ক্যালেক্সিট।

প্রসঙ্গত, ‘ইয়েস ক্যালিফোর্নিয়া ইনডিপেনডেন্স ক্যাম্পেইন’ গোষ্ঠী ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে আসছে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতির অঞ্চল ক্যালিফোর্নিয়া অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ফ্রান্সের চেয়ে শক্তিশালী। এর জনসংখ্যা পোল্যান্ডের চেয়ে বেশি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অন্য ৪৯টি অঙ্গরাজ্যের সঙ্গেই নয়, বিভিন্ন বিবেচনায় যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে ক্যালিফোর্নিয়া।

এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেক মূল্যবোধ আছে যেগুলোর সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার বিরোধ রয়েছে। এভাবে থাকার অর্থ- আমরা অন্য রাজ্যগুলোর জন্য অব্যাহতভাবে আমাদের ক্ষতি করে যাব, আমাদের শিশুদের অকল্যাণ বয়ে আনবো!

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে হারলেও সর্বোচ্চ ৫৫টি ইলেকটোরাল ভোটের মালিক অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় কিন্তু জয় পেয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি।

ইয়েস ক্যালিফোর্নিয়া গোষ্ঠীর প্রধান লুইস ম্যারিনেলি বলেছেন, রাজ্যের প্রচুর মানুষ তাদের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছেন। অনেকেই স্বাধীনতার জন্য গণভোট চেয়ে তাদের দাবিনামা প্রকাশের দাবি করেছেন।

স্বাধীনতাকামীদের অপর এক নেতা মার্কাস রুইজ ইভান্স বলেন, স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র হতে যেসব অবকাঠামোর দারকার- আমাদের তার সবই আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তারা স্কটিশদের স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা অনুসরণ করছেন।

তিনি আরও জানান, তারা চান দুনিয়ার সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ একটি দেশ হতে। তারা চান বিশ্ববাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হবে ক্যালিফোর্নিয়া।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিকে এভাবে প্রভাবিত করার পেছনে ডেমোক্রেটদের কোনো পক্ষের ইন্ধন আছে কি না-  তা জানা যায়নি।

ক্যাালিফোর্নিয়ার অতীত

ক্যালিফের্নিয়া একসময় প্রতিবেশী মেক্সিকোর অংশ ছিল। সেখান থেকে স্বাধীন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেয়। এর মাঝখানে (১৮৪৬ সালে) কয়েকটা সপ্তাহ (২৫ দিন) সম্পূর্ণ স্বাধীণ রাষ্ট্রই ছিল ক্যালিফোর্নিয়া। তখন এটির নাম দেওয়া হয় ক্যালিফোর্নিয়া রিপাবলিক। তবে আন্তর্জাতিক কোনো স্বীকৃতি পায়নি।

মূলত স্পেন থেকে মেক্সিকো স্বাধীণ হওয়ার পরবর্তী ২৫ বছরের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সেটলারদের সম্পত্তি কেনার অধিকারহীনতা ও অন্যান্য দাবিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বিরোধ। ক্যালিফোর্নিয়াজুড়ে তখন একটা বিষয় প্রকাশ্যেই আলোচনা হতো যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যুক্ত হওয়া উচিত নাকি পুরো স্বাধীন হয়ে যাওয়া উচিৎ। এমনি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অস্থির সময়ে এ অঞ্চলটি পিও পিকো এবং হোসে ক্যাস্ত্রো নামে দুজনের অধীনে শাসিতও হয় কিছুকাল।

এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এখানে হস্তক্ষেপ করে- শুরু হয় মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ।

প্রাচীন তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে ধারণা করা হয় ১৩,০০০-১৫,০০০ বছর আগে ক্যালিয়োনিয়ায় বসবাস শুরু করে আদিবাসী আমেরিকানরা। তার আগে ১৬,৫০০ বছর আগে এশিয়া থেকে এখানে অভিবাসনের ঘটনা ঘটে বলে এ যাবত প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদিতে দেখা যায়।

১৬ শতকের দিকে ইউরোপীয় অভিযাত্রী ও অভিবাসীরা ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূল অঞ্চলে আবাস গাড়তে শুরু করে।

১৮৪৮ সালে মেক্সিকো-আমেরিকা যুদ্ধে মেক্সিকো পরাজিত হওয়ার পর গুয়াদালুপ-হিডালগো চুক্তিসূত্রে ক্যালিফের্নিয়াকে প্রাথমিকভাবে অঙ্গীভূত করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় ১৮৫০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্র ইউনিয়নে যোগ দেয় ‘ফ্রি স্টেট’ হিসেবে। কেসিআরএ.কম, উইকিপিডিয়া

নিউজওয়ান২৪.কম/একে