NewsOne24

এই দুনিয়ার রাস্তাঘাটে

তৌহিদ জামান, সাংবাদিক

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ০৯:৪৭ এএম, ৩০ জুলাই ২০১৫ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:০৮ এএম, ১৮ মে ২০১৬ বুধবার

প্রতীকি চিত্র (সংগৃহীত)

প্রতীকি চিত্র (সংগৃহীত)

প্রথম পর্ব
বিকেল সাড়ে ৫টা। যশোর শহরের ঘোপ এলাকার এক গলির ভেতরে বস্তি টাইপের কয়েকটি ঘরের সামনে আচমকা চিৎকার করে ধপ করে পড়ে গেলেন এক ভদ্রলোক! পড়ার আগে তার “ওরে আল্লারে, ওরে মারে...” শব্দে আশপাশের সবাই চমকে ওঠে।

এরপর ভদ্রলোক জ্ঞানহীন পড়ে থাকেন রাস্তায়।

আশপাশের বউ-ঝিরা এসে চোখেমুখে পানি দিয়ে, মাথায় বাতাস করে তার জ্ঞান ফেরান।

সম্বিত ফিরে পেয়ে তিনি বললেন, “আমার চালের বস্তা, টাকার ব্যাগ...”

অসুস্থ পঞ্চাশোর্ধ এই মানুষটি ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে সাড়ে ৮ হাজারের মতো টাকা আর এক বস্তা চাল সংগ্রহ করেছেন।

তিন শ টাকা ভাড়ায় একটি ভ্যানে সেই বস্তা আর টাকার ব্যাগটি রেখে পাশের মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নামাজশেষে ফিরে আর পাননি ভ্যানচালককে।

বমাল পালিয়েছে সে! এইখানে ঘটনার প্রথম পর্ব শেষ। একটু বিরতি নিয়ে পরের পর্বে আসি এবার।

পর্ব-২
অসুস্থ আর অসহায় মানুষের প্রতি এখনও আমাদের বউ-ঝিরা কত সজাগ! ভাবতেই পরাণ ভরে যায়! লোকটিকে সুস্থ করার পর তার সাকিন-ঠিকানা জানতে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছিল মেয়ে মহল।

প্রথমদিকে, লোকটি কথা বলতে পারছিলেন না। ইশারায় পানি চান। কয়েক সেকেন্ডেই পানি হাজির।

তৃষ্ণা নিবারণ শেষে বললেন, তার বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। তিনি ক্যান্সার আক্রান্ত! সেকারণে যশোরে এসে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য মাগছিলেন। সাহায্যের পরিমাণ বা অংক বেশ ভালই হয়েছিল।

এবার মেয়েদের চোখ ছল ছল করে ওঠে। তার সমস্বরে বলতে লাগলেন- চাচা সামনের রাস্তায় চলে যান, আমাদের ভাই-বেরাদররা সেখানে আছে। তারা আপনাকে কিছু সহযোগিতা করলে বাড়ি যেতে পারবেন অন্তত!

কিন্তু তিনি মোটেই গা করছেন না সেসব কথায়।

এরইমধ্যে আরও কয়েকজন জড়ো হয়েছেন বউ-ঝি। আশ্চর্য! তাদের অনেকেই মুরুব্বিকে চিনতে পেরেছেন। কারও কারও মুখ ফুটে বেড়িয়ে আসে বিস্ময় বচন, “হ্যাঁ, তিনিই তো!”

ভীড়ে নয়া জড়ো হওয়াদের কয়েকজনের বক্তব্য- চাচা, আপনি তো সেদিন আমাদের কাছ থেকে হাত ভেঙে গেছে বলে টাকা নিয়ে গেলেন!

আরেক মেয়ে বললো, আমিও তো দিয়েছিলাম!

এমন দু-একজনের বয়ানের পর তিনি একদম চুপ মেরে গেলেন। যেন পাত্থরকা মোরব্বা!

শুরুতে তার দুর্দশার বয়ানে বউ-ঝিরা তাকে এক শ দশ টাকা সংগ্রহ করে হাতে তুলে দিয়েছিল; এক ফাঁকে আলগোছে তিনি টাকাটা পাঞ্জাবির পকেটে ভরেই হাঁটা শুরু করলেন- কারও দিকে তাকালেনও না।

আমি পিছু নিয়ে খানিকটা এগিয়ে যাই। তিনি পেছনে তাকান না- সড়সড় করে হেঁটে চলছেন। খুব দ্রুতই জোর কদমে দ্রুত গতিতে রাস্তার বায়ে আরেকটি গলিতে হারিয়ে গেলেন...

নিউজওয়ান২৪.কম/এমএ