NewsOne24

আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ, বেকায়দায় ঐক্যফ্রন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিউজ ওয়ান২ ৪

প্রকাশিত : ০১:৩৭ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দলগুলোর মত মিলছে না। এতে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে জোটটির শরিক দলগুলো। বেশ কয়েক বার বৈঠক করেও সমাধানে আসতে পারছে তারা। ফ্রন্টের বড় দল বিএনপি আসন ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্তে হিমশিম খাচ্ছে বাকিরা। ফলে আসন বণ্টন নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছে ঐক্যফ্রন্ট।

মূলত সমস্যা দেখা দিয়েছে বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতকে নিয়ে। বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতের জন্য সর্বোচ্চ ১০-১৫টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বরাদ্দ দেবে তারা। কিন্তু জামায়াত বলছে, তারা ৬৫ আসনে মনোনয়নপত্র কিনবে। এরইমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি তালিকা ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম খান বলেন, একেক শরিক দলের একেক রকম দাবি থাকতেই পারে। আমরা একসঙ্গে বসে এসব বিষয় সমাধান করবো। কিন্তু জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, তারা রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন পত্র দাখিলের চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে জামায়াতের কোনো প্রার্থী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

এছাড়া ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদের আসন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। অলি আহমেদ বেশ কিছুদিন জোটে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের অন্যতম এই নেতার ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এক নেতার একই আসন চট্টগ্রাম-১৩ (চন্দনাইশ) হওয়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

জামায়াতের আসন কিংবা ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষার বাইরেও এবার আসন ভাগাভাগিকে ঘিরে বিএনপির সামনে আরেকটি বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। দেশের রাজনীতিতে বগুড়া, নোয়াখালী, ফেনী এবং লক্ষ্মীপুর বিএনপি'র দূর্গ বলে পরিচিত। ওইসব নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি একটি আসনও ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বিএনপির এসব ‘নিজস্ব আসন’ থেকে ভোটে দাঁড়াতে চান।

যেমন ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়ার যে আসন থেকে নির্বাচন করতে চান, সে আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দূর্গ বলে পরিচিত। আবার ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা আ. স. ম. আব্দুর রব লক্ষ্মীপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন কিন্তু ওই এলাকাটিও বিএনপির শক্তিশালী দূর্গ। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু ঢাকার দুটি আসনে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের আসনটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আসন। তিনি বিএনপির একজন হেভিওয়েট প্রার্থী।

অন্যদিকে খালেদার নিজ আসন ফেনী-১ -এ প্রার্থী হতে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন গণদল চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী। তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এলাকায় আর্দশবান মানুষ হিসেবেও পরিচিত। একজন খাটি রাজনীতিক হিসেবে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। ধানের শীষে তিনি নির্বাচন করলে, তার বিপক্ষে যত শক্তিশালী প্রার্থী হোক না কেন জয়ী হওয়া কঠিন হবে।

এ অবস্থায় বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা রব, মান্না কিংবা জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের ঢাকা থেকে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু তাতেও হয়নি সমস্যার সমাধান।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠিত হয়েছিল তখন বিএনপি ধারণা ছিল ফ্রন্টের ছোট দলগুলোর নেতারা আসন নিয়ে যতটা না আগ্রহী হবেন তার চেয়ে বেশি উৎসাহী হবেন আন্দোলনে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ফ্রন্টের শরিকদের চাহিদা ২০ দল শরিকদের চেয়েও বেশি। আর তাতেই হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক বড় নেতা বলেন, দ্বিমুখী চাপের মধ্যে আছি। একদিকে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে শরিকরা বিএনপিকে দুর্বল মনে করে ঘাড়ে চেপে বসেছে। তারা অবাস্তব দাবিদাওয়া ও অকল্পনীয় আসনের চাহিদা দিয়ে বেকায়দায় ফেলছে।

এদিকে ফ্রন্টের এক শীর্ষনেতা বলেন, হালে পানি পাওয়া বিএনপি এখন নিজেদের অনেক বড় কিছু ভাবছে। মানে তাদের জনপ্রিয়তা আছে, কিন্তু মনে রাখতে হবে ছোট দলগুলো যোগ হওয়ায় বিএনপি মাঠে ঠিকে আছে। ছোট দলগুলোর ব্যক্তি পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা আর দেশব্যাপী বিএনপির জনপ্রিয়তা এক নয়। জনগণের মালিকানা ফেরাতে হলে বিএনপিকে অবশ্যই বড় ছাড় দিতে হবে।

নিউজওয়ান২৪/জেডএস