NewsOne24

পবিত্র জুমা: গুরুত্ব, আদব ও আমল

নিউজ ডেস্ক

নিউজ ওয়ান২ ৪

প্রকাশিত : ১০:১৪ এএম, ৯ নভেম্বর ২০১৮ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে জুমা’র দিন সেরা দিন ও আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিন। আল্লাহর কাছে তা ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)

আমলের দিক থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা যেসব দিনকে ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করেছেন এর অন্যতম হলো জুমা’র দিন। এ দিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক আহকাম ও ঐতিহাসিক নানা ঘটনা। সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমা’র দিন হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ।

অন্য হাদিসে আছে, ‘যেসব দিনে সূর্য উদিত হয়েছে এরমধ্যে সর্বোত্তম হলো জুমা’র দিন।’ জুমা’র দিনকে মুসলমানদের ঈদের দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

জুমা’র ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘এক জুমা থেকে অপর জুমা উভয়ের মাঝের (গোনাহের জন্য) কাফ্ফারা হয়ে যায়, যদি কবিরা গোনাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়ে থাকে।’ (মুসলিম)

মুসলিম সমাজে জুমাবার একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এ দিন জুমা’র নামাজ আদায় করা হয়। মুসলমানরা জুমা’র নামাজ আদায়ে মহান আল্লাহর ঘর মসজিদে সমবেত হন। জুমা’র আজানের আগেই সব কর্মব্যস্ততা ত্যাগ করে জুমা’র নামাজের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে মসজিদে গমন করা মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব।

পবিত্র জুমা সম্পর্কে মহান আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মনে রাখবে সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন পবিত্র জুমাবার। জুমা’র নামাজ আদায়ে রয়েছে অশেষ কল্যাণ।’

জুমা’র নামাজ সম্পর্কে মহান আল্লাহর রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা কারণে তিন জুমা’র নামাজে যাওয়ায় অবহেলা করে সে যেন ইসলামকে অবজ্ঞা করল এবং তার হৃদয়ে মরিচা পড়ে যায়।’

দু:খের বিষয় বর্তমানে জুমার দিন আজানের পরও মসজিদগুলো ফাঁকা থাকে। খুৎবার শেষ পর্যায়ে তড়িঘড়ি করে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করে যা ধর্মীয় দৃষ্টিতে অপছন্দনীয়।

পবিত্র জুমা দিবসে মুসলমান ধনী-দরিদ্র, উচু-নীচু, ছোট-বড় সকলে একই কাতারে দাঁড়িয়ে জুমা’র নামাজ আদায় করে। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র জুমা’র নামাজ আমাদের ওপর অপরিহার্য করেছেন।

মহান আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, ‘হে ঈমানদারগণ! যখন জুমা’র দিন নামাজের জন্য তোমাদের আহ্বান করা হয় তখন তোমরা বেচাকেনা ত্যাগ করে তাড়াতাড়ি আল্লাহকে স্মরণ করতে উপস্থিত হও। যখন সালাত বা নামাজ শেষ হয় তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়।’ (সূরা জুমা: ৯)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সালাতুল জুমা বা জুমা’র নামাজ আদায়ের জন্য আহ্বান করেছেন। হজরত রাসূলে পাক (সা.) এর বাণী, ‘যে ব্যক্তি অলসতা করে পর পর তিন জুমা উপস্থিত হবে না আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবেন।’

দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজের অনেক মুসলিম ভাইয়েরা মহান আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী শ্রবণের পরেও জুমা’র নামাজ আদায় করে না বরং সমাজে নানাবিধ অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

পবিত্র শুক্রবার জুমা দিবসে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতীর জীবনের সর্বক্ষেত্রে সত্য-ন্যায়, ত্যাগ ও সৎকর্মের অনুশীলন এবং দেশের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি কামনা করে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত কামনা করুন।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘জুমা’র দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতা থাকে, যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করে তার নাম লিখে রাখে। এর উদাহরণ হলো, প্রথম ব্যক্তি একটি উট কোরবানীর সাওয়াব পাবে, এরপর যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে একটি গরু কোরবানীর সাওয়াব পাবে, এর পর যে প্রবেশ করবে যে দুম্বা কোরবানীর সাওয়াব পাবে, এরপর যে প্রবেশ করবে সে মোরগ কোরবানীর সাওয়াব পাবে।’ (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

জুমা দিবসে করণীয়: সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে জামাতের সহিত ফজরের নামাজ আদায় করে জুমার আগে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। দয়াল নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমা’র দিন সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে মহান আল্লাহ পাক তার জন্য জুমা’র মাঝের সময়টা নূর দ্বারা ভরিয়ে দেয়।’ (বায়হাকী শরীফ)

জুমা’র দিন বেশি বেশি দোয়া পড়া উত্তম। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুমা’র দিন এমন একটা মুহুর্ত আছে যখন কনো মুসলমান আল্লাহর নিকট কিছু চায় তখন আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন’ (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।

অন্যদিনের তুলনায় জুমা’র দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করুন। বিশেষ করে দোয়া ও দরুদ শরীফ আসরের পরবর্তী সময়টাতে কবুলের নিশ্চয়তা বেশি থাকে।

জুমা’র দিনে হাতের নখ কাটা, উত্তম রূপে গোসল করা, পরিষ্কার জামা-কাপড় পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, আগে আগে মসজিদের যাওয়ার চেষ্টা করা, ধুমপান না করা, সুন্দর ভাবে দাঁত মেসওয়াক বা ব্রাশ করা।

মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকাত তাহইয়াতুল মসজিদের নামাজ আদায় করা, ইমাম সাহেবের খুৎবা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা উত্তম।

প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি খুৎবার সময় অবহেলা করে সময় নষ্ট করে তার নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।’ (মুসলিম শরীফ)

ইমাম সাহেবের সঙ্গে দুই রাকাত জুমা’র ফরজ নামাজ আদায় করার পর প্রতিবেশীদের খোঁজ-খবর নেওয়া, গরীব দু:খীদের সুখ-দুখের খবর নেয়া এবং কথাবার্তা বলা উত্তম।

মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করি, আমরা যেন যথাযথ ভাবে পবিত্র জুমা দিবসের গুরুত্ব উপলদ্ধি করে এ দিনের আদব ও আমল করতে পারি। আল্লাহুম্মা আমিন।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ