NewsOne24

তুরস্কে বিদ্রোহী সেনাদের অভ্যুত্থানচেষ্টা: ১৭ পুলিশসহ নিহত ৪২

বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ০৮:০৭ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৬ শনিবার | আপডেট: ০৬:২৩ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৬ শনিবার

তুরস্কের ডানপন্থি তায়িপ এরদোয়ান সরকারকে উচ্ছেদের দাবি করেছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষে টিভিতে প্রচারিত বিবৃতিতে ‘সান্ধ্য আইন ও সামরিক আইন’ জারির ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল। তবে দেশটির পরাক্রমশালী সেনাবাহিনীর একটি অংশের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্ট তায়িপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, ক্ষমতা দখলে সেনাবাহিনীর একটি ‘ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর’ এই চেষ্টা তিনি সামলে উঠবেন শিগগির।

ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ জটিল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে উপস্থিত হলে হাজার হাজার জনতা তারপক্ষে স্লোগান দেয়। প্রধানমন্ত্রী এলদিরিম জাননিয়েছেন, সেনাপ্রধান সব সৈন্যকে ব্যারাকে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন।

ক্ষমতাদখল চেষ্টার এই লড়াইয়ের শুরুর দিকে নিহত হয়েছে ১৯ জন। সেনাবাহিনীর বিদ্রোহী গ্রুপের গোলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে ১৭ জন পুলিশ সদস্য ও দুইজন সাধারণ মানুষ। 

পরে নিহতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪২। অনেকেই আহত হয়েছে। বিদ্রোহী সেনারা প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করেছে। সেনাবাহিনীর এক জেনারেল নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন অফিসারকে বন্দি করা হয়েছে বলেও জানা গেছে- তবে তারা কোন পক্ষের হাতে বন্দি তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পথেঘাটে এরদোয়ানের জাস্টিস পার্টি সমর্থকদের বেপরোয়া মনোভাব দেখা গেছে যারা সশস্ত্র সেনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। 

তবে একরোখা স্বভাবের জন্য পরিচিত, একযুগেরও বেশি সময় ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় আসীন এরদোয়ানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দাবি সত্ত্বেও বাস্তব ‘পরিস্থিতি’ জটিল বলেই মনে করা হচ্ছে। রাতের এই অভ্যুত্থান চেষ্টার ধারাবাহিকতায় গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিয়েছিল বিদ্রোহী সেনারা। রাস্তায় টহলে নামানো হয় ট্যাংক- গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-সেতু সেনাদের দখলে চলে যায়। আকাশে চক্কর দেওয়া শুরু করে সামরিক হেলিকপ্টার, আকাশ-মাটি কাঁপিয়ে উড়তে শুরু করে জঙ্গি বিমান। সবই একটি ‘আদর্শ ক্যুর’ জানান দিচ্ছিল।

এর রেশ দীর্ঘকাল চলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তবে শেষ মুহূর্তে মনে হচ্ছে এবারও পরিস্থিতি সামলে উঠতে পেরেছেন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরে ‘গোস্বা প্রকাশ করা’ তুরস্ক প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। অতি সম্প্রতি তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন- রুশ বিমান ভূপাতিত করার দায় স্বীকার করে। এরপরই তিনি আইএস দমনে প্রতিবেশী সিরিয়ার সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করার কথাও বলেন। এমন পটভূমিতে এই অভ্যুত্থানচেষ্টায় বোঝা যাচ্ছে- দেশীয় ক্ষমতার বলয়ে তিনি ভেতরে ভেতরে চ্যালেঞ্জ অনুভব করছিলেন। যার কারণে তিনি রুশদের কাছে বেশ নতজানু হয়েই ক্ষমা চান। একই সঙ্গে প্রতিবেশী সিরিয়ার দিকেও সহযোগিতার হাত বাড়ান।

এদিকে, শুক্রবার দেশটির টিভি চ্যানেলগুলোয় ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে বলে বিবৃতি প্রচার করা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আতাতুর্ক বিমান বন্দর সংশ্লিষ্ট সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

টিভিতে সম্প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়, এখন ‘শান্তি পরিষদ’ দেশ চালাবে এবং সান্ধ্য আইন ও সামরিক আইন জারি থাকবে। এর সমান্তরালে বিদেশের সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রধান্য পাবে বলে সেনাবাহিনীর ওই বুলেটিনে বলা হয়েছিল।

তবে শেষদিকে এরদোয়ান আতাতুর্ক বিমানবন্দরে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ধারণা করা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত দেশটির সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী তার অনুগতই আছে।

কলকাঠি নাড়েন ইসলামপন্থি নেতা ফেতুল্লাহ
অভ্যুত্থান চেষ্টা শুরুর দিকে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদ্রিম সিএনএনকে সেলফোনে জানান, অনুমতি ছাড়াই সেনাবাহিনীর সদস্যরা ওই অভিযান শুরু করেছে। তবে এটা কোনো অভ্যুত্থান নয়। তুরস্ক সরকারে কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।

কিন্তু তারপরেই পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিলে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, সরকার দখল করা হয়েছে। এজন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইসলামপন্থি নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করেন।

তবে একই সঙ্গে এই অভ্যুত্থান তৎপরতা থামাতে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান ইলদ্রিম। একই আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও। পরবর্তীতে ঘটনা তাদের পক্ষে ঘুরে যাওয়ায় মনে করা হচ্ছে- সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ইলদ্রিমের এই আহ্বান কাজে দিয়েছে।

তুরস্কের ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ অভ্যুত্থানে ডানপন্থী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল। পাকিস্তানের মতো এই দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার দীর্ঘ ইতিহাস আছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে