মেসি পারেননি রোনালদোও পারলেন না, পর্তুগাল পেরেছে
স্পোর্টস রিপোর্টার
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০৩:৩৪ এএম, ১১ জুলাই ২০১৬ সোমবার | আপডেট: ০৪:০২ এএম, ১১ জুলাই ২০১৬ সোমবার

ছয় গোল করে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা ফরাসি গ্রিজমান। আপাতত এটাই স্বাগতিকদের সান্তনা -ফাইল ফটো
বিশ্ব ফুটবল ইতিহাসের সমসাময়িক দুই সুপারস্টারের ব্যক্তিগত লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে পারতেন রোনালদো। কিন্তু তিনি তা না পারলেও পেরেছে তার দল। হ্যাঁ, অ্যালিয়েন ফুটবলার খ্যাত মেসি যা পারেননি মাটির এই ধরাধামে- সেটি করতে পারেননি বিশ্ব ফুটবলে তার প্রধান প্রতিপক্ষ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বা সিআর সেভেনও।
তবে সেটা পেরেছে তার দল, তার দেশ পর্তুগাল। তারা রোনালদো ছাড়াই প্রবল প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারে মতো নিজেদের করে নিয়েছে ইউরো সেরার মুকুট।
রোববার ফ্রান্সের সাঁ-দেনিতে অনুষ্ঠিত ইউরো ২০১৬ এর বহুল প্রতীক্ষিত ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের গোলে স্বাগতিকদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রেনালদোবিহীন পর্তুগাল। রোনালেদোর কথাই সত্য হয় এতে করে- `ফেভারিট ফ্রান্স তবে জিতবো আমরা`। এমনিতো বলেছিলেন রোনালদো ফাইনাল সম্পর্কে!
যদিও সিআর সেভেনের জন্য একটা সান্তনা আছে যা মেসির নেই- তিনি খেলার ২৩ মিনিটে মাঠ ছাড়েন আঘাতজনিত কারণে। আঘাতটা এসেছিল ১৬তম মিনিটে। বলের দখল নিয়ে ফ্রান্সের পায়েতের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। একই মুহূর্তে উল্টোদিকে থেকে অপর ফরাসি খেলোয়াড় এভরা এসে পড়েন সিআর সেভেনের ওপর। এসময় মাঠে বসে থাকা রোনালদোকে অসহায় আর বিচলিত দেখায়। বিষয়টা ফরাসিদের পরিকল্পিত কি না- কে জানে!
তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় সুস্থ করে তোলার জন্য। এসময় মিনিট তিনেক পর্তুগিজরা দশ জনের দলে পরিণত হয়। এই সুযোগে ফরাসিরা চড়াও হয়ে খেলতে চায়। কিন্তু তখনি পর্তুগিজ সানচেজ অসাধারণ এক গোলের চেষ্টা চালান। হঠাৎই যেন রোনালদো ছাড়া পর্তুগিজ টিমটা জ্বলে ওঠে। জে মারিও, সানচেজ, রাফায়েলরা তৎপর হয়ে ওঠেন।
২১তম মিনিটে ফরাসি সিসোকো মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে গিয়ে অসাধারণ এক চেষ্টা চালান। তবে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার শট অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন পর্তুগিজ কিপার রুই প্যাত্রিসিও।
এরপর আসে পর্তুগিজদের জন্য মন খারাপ করে দেয়া মুহূর্তটি। দেখা যায় আবারও মাঠে বসে পড়েছেন সিআর সেভেন। ম্যাচের ২৩তম মিনিট ছিল এটি। এসময় তিনি হাত ইশারায় স্ট্রেচার আনতে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাতে শুয়ে মাঠ ত্যাগ করেন পর্তুগিজ শিবিরের `একাই একশো` মানের তারকা রোনালদো। তার বদলে মাঠে নামেন গুয়োরেসমা।
৩৩তম মিনিটে মারাত্মক ফাইলের জন্য হলুদকার্ড পান পর্তুগালের সেডরিক।
পুরো খেলায় ফরাসি আধিপত্য ছিল- এটা সত্য। তবে পর্তগিজরাও ছেড়ে কথা বলেনি। বিশেষ করে রোনালদোবিহীন পর্তুগাল চমৎকার বোঝাপড়া করে খেলেছে ফেভারিট ফ্রান্সের বিপক্ষে। যার ফল তারা পেয়েছে অতিরিক্ত মিনিটের চমৎকার এক গোলে।
ফরাসি তরুণ-তুর্কি গ্রিজমানের যাদুকরী ফুটবল ছন্দ বারবার আশা জাগিয়েছে ফরাসি সমর্থকদের। তার অসাধারণ দুটি হেড ঠেকিয়ে দেন পর্তুগিজ কিপার একেবারে গোলে ঢোকার মুহূর্তে। তার সঙ্গে ছিলেন হালের ফরাসি ফুটবল সৌরভের চেনা ব্রান্ড পল পগবা, জিরুদ, কোনানদের ফুটবল শৈলীর সেরা প্রদর্শনী। পায়েতের বদলি হিসেবে নেমে কোনান অসাধারণ আর কুশলী ফুটবলের প্রদর্শনী দেখান।
পুরো খেলায় ফ্রান্সের সেরার সেরা সুযোগটি আসে দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ে। এসময় পর্তুগিজ ডিফেন্স এবং সবশেষে গোলক্ষক রুই প্যাত্রিসিও পরাস্ত হয়ে যান, বল ছুটে চলে গোলের দিকে- সামনে কোনো বাঁধ নেই- কিন্তু একটা বাধা ঠিকই দাঁড়িয়ে গেল শেষ মুহূর্তে- হ্যাঁ, বামপাশের সাইডবারে লেগে বল ফিরে আসলো। হলো না গোল।
এর মিনিট কয়েক পরই রেফরি বাঁশি বাজান- খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে, অর্থাৎ খেলার ১০৭তম মিনিটে রাফায়েলের নেওয়া ফ্রিকিক ফরাসির গোলবারে ঢুকেই গিয়েছিল- কিন্তু এবারও গোল পোস্ট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফরাসিদের ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছিল পর্তুগিজদের সাইড বার আর পর্তুগিজদের ক্ষেত্রে বাঁধ সাধলো ফরাসিদের ক্রসবার।
তবে শেষ পর্যন্ত খেলার প্রথম গোলটি হয় ১০৮তম মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে পাওয়া বল নিয়ে পর্তুগিজ ডিফেন্ডার এডার ছুটে চলেন ফরাসি গোলপোস্টের দিকে।
তবে তিনি `বেশি নিখূঁত হবার জন্য বেশি কাছে` যাননি গোলপোস্টের। ডি-বক্সের অনেক বাইরে থেকেই কড়া শট নেন বামদিকের পোস্ট লক্ষ্য করে। এতেই আসে বহুল প্রতিক্ষীথ সাফল্য। ফরাসি কিপার চরম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মাটি ছূুঁয়ে বল গিয়ে আশ্রয় নেয় জালে।
এরপর আর কোনো পক্ষই গোল করতে পারেনি।
নিউজওয়ান২৪.কম/একে