NewsOne24

জার্মান দাপট পরাভূত ফরাসি সৌরভের কাছে

খেলা ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ৮ জুলাই ২০১৬ শুক্রবার | আপডেট: ১০:০৮ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৬ শনিবার

দ্বিতীয় গোলের পর গ্রিজমানের উদযাপন

দ্বিতীয় গোলের পর গ্রিজমানের উদযাপন

ফুটবল গোলের খেলা- কথাটা আবারও প্রমাণ হলো বৃহস্পতিবারের ফ্রান্স-জার্মানি সেমিফাইনালে। ইউরো-২০১৬ এর সেয়ানে সেয়ানে লড়াইয়ের এই ম্যাচে বেশিরভাগ সময় আধিপত্য বজায় রেখেও ফাইনালে যেতে পারল না জার্মানি।

ফুটবল খেলায় প্রতিপক্ষকে সহজে হারিয়ে জেতার মতো সবই ছিল এদিন তাদের। শুধু ছিল না অঁতোয়ান গ্রিজমানের মতো একজন স্কোরার। কিন্তু গ্রিজমান ভদ্রলোক হচ্ছে ফ্রান্সের খেলোয়াড়। তার জোড়া গোলেই পাওয়ার ফুটবলের ধারক-প্রবর্তক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে ইউরোর ফাইনালে উঠে গেছে ফ্রান্স। সামনে তাদের প্রতিপক্ষ এখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল।

বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্সের মার্সেই শহরের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিতে বলতে গেলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মধ্যমাঠ সারাক্ষণই ছিল জার্মান পরাশক্তির দখলে। বল ধারাবাহিকভাবে অবস্থান করেছে ফ্রান্সের সীমানায় বা ডি-বক্সের কাছাকাছি। কিন্তু খেলার ধারার বিপরীতে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়ে গোল নামের সোনার হরিণের দেখা পেয়েছে ‘ছবির দেশ কবিতার দেশ’ হিসেবে খ্যাত ফ্রান্সই।

গ্রিজমান যে ম্যাচে কিছু একটা করবেন তা শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। সপ্তম মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর থেকে গ্রিজমানের নিচু তেড়চা শট জার্মান গোলে ঢুকেই গিয়েছিল প্রায়। কিন্তু গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার চূড়ান্ত শারীরিক কসরত খেলিয়ে তা ফেরান। এরপর ধীরে ধীরে প্রথমার্ধের খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শোয়াইনস্টাইগার-ক্রসরা।

১৩তম মিনিটে একটু তুলনামূলক কঠিন সুযোগ ছিল একটা। তবে তা কাজে লাগাতে পারেননি জার্মান ফরোয়ার্ড টমাস মুলার। পরের মিনিটে এমরে কানের দূরপাল্লার শট গোল করেই ফেলতো যদি না ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ঠেকাতেন ফরাসি গোলরক্ষক উগো লরিস।

এরপর চলতে থাকে ফরাসি গোলমুখে জার্মানির একের পর এক আক্রমণ। কিন্তু কাঞ্চনমালা-কাঁকনমালার গল্পের মতোই যেন এই অর্ধের শেষদিকে সাফল্য আসে ফ্রান্সের ঘরে। শেষ পাঁচ মিনিটে হঠৎ হঠাৎ করে কয়েকটা গোলের সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। ৪২তম মিনিটে পাট্রিস এভরার পাসে গ্রিজমান যে শট নেন তা বাইরের দিক দিয়ে নেটে জড়ায়।

পরের মিনিটে অলিভিয়ে জিরুদের একাই গোল করতে চাওয়ার চেষ্টার পাপে সহজ সুযোগ নষ্ট হয়। বল নিয়ে গোলমুখে এগিয়ে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা গ্রিজমানকে পাস দেননি আর্সেনালের এই ফরোয়ার্ড। এই সুযোগে বল বিপদমুক্ত করেন বেনেডিক্ট হুভেডেস।

তবে প্রথমার্ধে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে গোলের সুযোগ এনে দেন জার্মান ক্যাপ্টেন বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার। তিনি হাত দিয়ে বল ঠেকান নিজেদের পেনাল্টি বক্সে। রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন গ্রিজমান। দৃষ্টিনন্দন ডজে নয়ারকে বিভ্রান্ত করেন তিনি। পেনাল্টি শট ঠেকাতে সম্পূর্ণ উল্টো দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন নয়ার।

এক গোলে এগিয়ে গিয়ে বিরতির পর থেকে ফ্রান্স যেন কিছুটা সঞ্জীবনী সুরার দেখা পায়। অনেকটাই পাল্লা দিয়ে খেলতে থাকে কঠিন পাত্র জার্মানির বিরুদ্ধে। তবে এটা সত্য- তখনো স্পষ্ট প্রাধান্য ছিল জার্মানিরই।

কিন্তু সেই যে ফুটবল গোলের খেলা! জার্মানি যতই আধিপত্য দেখাক আর যতই ভাল খেলুক- এবারও গোল হয় তাদের বিপক্ষে। ৭২তম মিনিটে গ্রিজমানের পা ফের ঝিলিক দিয়ে ওঠে। জার্মান রাইট ব্যাক জসুয়া কিমিচের ভুলে ডি-বক্সে বল পেয়ে যান পল পগবা। কুশলী মিডফিল্ডার পগবার খুনে ক্রসে চোখে ধাঁধাঁ দেখেন গোলরক্ষক নয়ার। এরপর ঠাণ্ডা মাথায় বুটের হালকা লাথিতে টুর্নামেন্টে নিজের ষষ্ঠ গোলটি করেন গ্রিজমান।
এর ফলে ৬ গোল করে টুর্নামেন্টের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন তিনি। গোল্ডেন বুটে তার পা এখন বলা যায় ঢুকি ঢুকি করছে।

এর দুই মিনিটের মাথায় ৭৪তম মিনিটে কিমিচের লম্বা শট ফরাসি ক্রসবারে লাগলে ব্যবধান কমানো হয়নি জার্মানির। এই গোলটি হলে খেলার মোড় হয়তো অন্যদিকে ঘুরেও যেতে পারতো।

কারণ, খেলায় স্পষ্ট আধিপত্য কিন্তু ছিল জার্মানির। বলা যায় ফ্রান্স প্রথম গোলটি করার পর যতোটা উজ্জীবিত হয়ে খেলেছে- জার্মানি একটি গোল পেলে তারচেয়ে কয়েকগুন বেশি জ্বলে উঠতে পারতো।

এদিকে, সেমি ফাইনালে অনন্য হ্যাট্রিকের সুযোগ গ্রিজমানের নাকের ডগা দিয়ে চলে যায়। ৮৬তম মিনিটে নেওয়া তার শটটি গোলরক্ষক নয়ারের এক্কেবারে যেন বুকে গিয়ে পড়ে। একটু ডানে বায়ে গেলে এই বল ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হতো।

তার আগে অবশ্য জার্মান ড্রাক্সলারের ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া ফ্রি-কিক একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

তবে পুরো খেলায় সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন গোলটি হতে পারতো খেলার শেষদিকের অতিরিক্ত সময়ে। এসময়ে কিমিচের অসাধারণ হেড দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন ফরাসি গোলরক্ষক লরিস। অসাধারণ অ্যাথলেটিজমের প্রদর্শন করেন তিনি। ফলে গোল শোধে জার্মানির সবশেষ সুযোগটিও হাতছাড়া হয়।

এই জয় ফ্রান্সের জন্য অনন্য। গত বিশ্বকাপে এই জার্মানির কাছে সেমিতে হেরেই বিদায় নিতে হয় ফ্রান্সকে। গল্প আরও আছে। ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে জার্মানির বিপক্ষে জিতেছিল ফ্রান্স। তারপর দীর্ঘদিনের জয় খরা কাটিয়ে এই প্রথম জিতল প্লাতিনি-জিদানের দেশ ফ্রান্স।

আগামী রোববার সাঁ-দেনির ফাইনালে গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের মতো ফের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন রোনালদো-গ্রিজমান। দেখা যাক, পর্তুগিজ রোনালদো না ফরাসি গ্রিজমান- কোন পক্ষ পায় কাপের দখল।

নিউজ্ওয়ান২৪.কম/এসকে