NewsOne24

আইসদের ‘গ্রীক রূপকথা’ লেখা হলো না!

খেলা ডেস্ক

নিউজওয়ান২৪.কম

প্রকাশিত : ০১:০০ পিএম, ৪ জুলাই ২০১৬ সোমবার | আপডেট: ১১:৪৫ এএম, ৮ জুলাই ২০১৬ শুক্রবার

গ্রিজমানের পাসে তৃতীয় গোলটি করেছিলেন পায়েত। পরেরটি গ্রিজমান নিজে করার পর পায়েত এভাবেই শ্রদ্ধা-কৃতজ্ঞতা জানান গ্রিজমানকে

গ্রিজমানের পাসে তৃতীয় গোলটি করেছিলেন পায়েত। পরেরটি গ্রিজমান নিজে করার পর পায়েত এভাবেই শ্রদ্ধা-কৃতজ্ঞতা জানান গ্রিজমানকে

এবারকার আইসল্যান্ডের রূপকথাময় পারফর্মেন্স দেখে মনে হচ্ছিল তারা কি ২০০৪ সালের গ্রীস হয়ে দেখা দিতে যাচ্ছে! ফুটবলপাগল রসিকজন নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছিলেন ২০০৪ সালের গ্রীক রূপকথার সেই আখ্যান। চলুন একবার ঘুরে আসি ফুটবল ইতিহাসের চমকপ্রদ ঘটনায় ঠাঁসা সেই টুর্নামেন্টের কিছু মুহূর্তে।

দীর্ঘ ২৪ বছর পর ইউরোতে ফিরে ইউরোপের তুলনামূলক দুর্বল দেশ (ক্রীড়া এবং অর্থনীতি) গ্রীস সেবার কাপটাই নিজের করে নেয়। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ১২তম ওই আসরের গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ য়ায় ইউরোপীয় ফুটবলের সেরা মোগলরা- জার্মানি, স্পেন ও ইতালি। অপর মজবুত শক্তি, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সও বাদ পড়ে কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষমেষ টিকে থাকে শুধু স্বাগতিক পর্তুগাল আর গ্রীস।

বড় টুর্নামেন্টের মধ্যে ইউরো ২০০৪ ছিল প্রথম যেখানে উদ্বোধনী ম্যাচের দুটি পক্ষই ফাইনালে মুখোমুখি হয়। শুরুর ম্যাচে পর্তুগাল হেরেছিল নবজাগরণের নেশায় উদ্দীপ্ত গ্রীসের যুবাদের কাছে ২-১ গোলে। ফাইনালে পর্তুগিজরা ভেবেছিল শোধ নেবে- কিন্তু না, গ্রীক ‘ফুটবল বীর’ অ্যাঞ্জোলোস ক্যারিসতিয়াস তা হতে দেননি। রাইট উইং থেকে পাওয়া ক্রসে তার ঘাতক হেডের ছোবল চুরমার করে দেয় পর্তুগিজ স্বপ্নসাধ। রেফারি পাঁচ মিনিট সময় বরাদ্দ করে ইনজুরি টাইম হিসেবে। তাতেও কিছু করতে পারেননি নুনো গোমেজ-ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরা। দুনিয়ার ছোটবড় সব ফুটবল বোদ্ধাকে বিস্মিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসে গ্রীস। আর পর্তুগালও একটা রেকর্ড করে। তা হলো- ইউরোপের প্রথম স্বাগতিক যারা ফাইনালে হেরেছে।

কিন্তু ২০১৬ ইউরোয় এসে তেমন সম্ভাভাবনা জাগিয়েও তা চূড়ান্ত পরিণিতিতে নিতে পারলো না ইউরোপের তুলনামূলক অপরিচিত ফুটবল শক্তি আইসল্যান্ড। গত রাতে শেষ হয়ে গেছে তাদের স্বপ্নের পথচলা। সেই শেষ যাত্রাটাও ছিল নিদারুণ কষ্টদায়ক। শেষ আটের লড়াইয়ে ফেভারিট এবং স্বাগতিক ফ্রান্স তাদের দাঁড়াতেই দেয়নি।

প্রথম অর্ধেই চার গোল হজম করতে হয় আইসল্যান্ডকে। দ্বিতীয়ার্ধে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো চেপে বসে আরও এক গোল। তবে আইসল্যান্ড এ অর্ধে দুটি গোল শোধ দেয়। কিন্তু তারপরও ব্যবধান থেকে যায় তিন গোলের। প্রথমবারের মতো বড় কোনো প্রতিযোগিতায় খেলতে আসা দেশটি শেষ ষোলোয় ইংল্যান্ডের মতো শক্তিকেও বিদায় করে দিয়েছিল। কিন্তু টুর্নামেন্ন্টের শেষ কোয়ার্টার থেকে সেমিতে পৌঁছার দৌড়ে তাদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা খেলেছে স্বাগতিকরা।

ফ্রান্সের ৫ গোলের দুটিই করেন অলিভিয়ে জিরুদ। একটি করে গোল করেন পল পগবা, দিমিত্রি পায়েত ও অঁতোয়ান গ্রিজমান।

রোববার সন্ধ্যায় সাদেঁনিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। ব্লেইস মাতুইদির ডিফেন্স চেরা পাসে আর্সেনাল ফরোয়ার্ড জিরুদের পায়ে বল যায়। বিপজ্জনক জায়গায় দাঁড়ানো জিরুদ সহজেই পরাস্ত করেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে। ২০তম মিনিটে স্বাগতিক সমর্থকদের ফের উল্লাসে ভাসান যুভেন্তাস মিডফিল্ডার পগবা। গ্রিজমানের কর্নারে লাফিয়ে হেড করে বল পাঠান প্রতিপক্ষের গোলে। এসময় আইসল্যান্ডের এক খেলোয়াড় গোললাইন থেকে বল ফেরানোর চেষ্টায় প্রায় সফল হয়েও গিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

ম্যাচ বুঝে ওঠার আগেই দুই গোলে পিছিয়ে পড়া দলটি প্রথমারর্ধর বাকি সময়টা যেন দ্বিধায় ভুগতে থাকে- গোল শোধ না রক্ষণ! এমন পরিস্থিতিতে প্রথমার্ধের শেষ দিকে তাদের আরও দুই গোল ‘উপহার’ দেয় ফরাসিরা।

৪৩তম মিনিটে গ্রিজমানের কাছ থেকে বল পেয়ে কোনাকুনি শটে দলের তৃতীয় গোলটি করেন পায়েত। দুই মিনিট পর গোল উৎসবে যোগ দেন গ্রিজমান। মাঝমাঠে বল পেয়ে অনেকটা দৌড়ে চিপ শটে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন আতলেতিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড।

খেলার ধারার বিপরীতে দ্বিতীয়ার্ধে ৫৬তম মিনিটে ব্যবধান কমান কোলবেইন সিগথোরসন। জিলফি সিগার্ডসনের দারুণ ক্রসে বল ফরাসি জালে পাঠান তিনি। এর তিন মিনিট পরেই ব্যবধান আবার আগের জায়গায় নিয়ে যান ফরাসি ফরোয়ার্ড জিরুদ। এরপর ৮৪তম মিনিটে বারকির বিয়ারনাসনের হেডে ব্যবধান কমায় আইসল্যান্ড। এটিই ছিল ম্যাচের শেষ গোল।

ইউরোর এবারকার আসরে কোনো ম্যাচে এটাই হচ্ছে এখন পর্যন্ত কোনো দলের সর্বোচ্চ গোল। এর আগে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে চার গোল করে বেলজিয়াম।

ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে সেমিতে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। এর আগে টাইব্রেকারে ইতালিকে হতাশায় ডুবিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএল