মুক্তি পেলেন তুরস্ক তোলপাড় করা স্বামী হন্তারক সিলেম
বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০৬:২০ পিএম, ২১ জুন ২০১৬ মঙ্গলবার | আপডেট: ১২:৫৩ এএম, ২৪ জুন ২০১৬ শুক্রবার

আদালতে নেওয়ার পথে তুরস্কের নির্যাতীত নারীদের এখনকার আইকন সিলেম -ফাইল ফটো
ঘটনা বেশিদিন আগের নয়। ২৮ বছর বয়সী তুর্কি নারী সিলেম কারাবুলুত তার স্বামী হাসান কারাবুলতকে (৩৩) হত্যা করেন। হররোজ নির্যাতনে ত্যক্ত বিরক্ত সিলেম পিস্তল দিয়ে গুলি করে স্বামীকে হত্যা করেন। এরপর নিজেই পুলিশকে ডেকে আনেন। জবানবন্দিতে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সিলেম প্রশ্ন রাখেন- শুধু নারীদেরই হত্যা করা হবে কেন? পুরুষদেরও তো হত্যা করা যায়!
২০১৫ সালের জুলাই মাসে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় আদানা এলাকার এ ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় তোলে।
সেই ঘটনায় দায়ের মামলায় চলতি মাসের শুরুতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৫ বছরের জেলদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে দেশজুড়ে নারী মানবাধিকারকর্মীরা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে সিলেমের মুক্তির পক্ষে। তারা জানায়, অনেক তুর্কি নারীর মতো তিনিও স্বামী হাসানের ধারাবাহিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। তার স্বামী তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করতে চাইতো। সবশেষে তার পক্ষে দায়ের করা এক পিটিশনের জবাবে আপিল আদালত সম্মত হয় তার মুক্তির ব্যাপারে। তাকে ৫০ হাজার লিরা (১৩ লাখ ৫৪ হাজার ২৫৩ টাকা) জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনার সময় কারাবুলুত দম্পতির দেড় বছর বয়সী একমাত্র কন্যার বয়স এখন আড়াই। মুক্তি পাওয়ার পর সিলেম বলেন, আমরা আমাদের সংগ্রাম জারি রাখবো। আমরা আমাদের সব নারীদের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো।
স্থানীয় পত্রিকা হুররিয়েত জানায়, হরদম মারধরে আর অনৈতিক প্রস্তাবে ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে স্বামীকে গুলি করে হত্যার পর সিলেম নিজেই পুলিশ ডেকে এনে ধরা দেন। পরদিন আদালতে তার হাবভাব ছিল বেপরোয়া। হ্যান্ডকাফ পরা সিলেমকে দুইজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে যখন নিয়ে যায় তখন তার টিশার্টে ইংরেজিতে লেখা স্লোগানটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
এতে লেখা ছিল, “প্রিয় অতীত, সকল শিক্ষার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। প্রিয় ভবিষ্যত, আমি প্রস্তুত (ডিয়ার পাস্ট, থ্যাঙ্কস ফর অল দ্য লেসনস। ডিয়ার ফিউচার, আই অ্যাম রেডি)।”
এসময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তার প্রতি লোকজনের সমর্থনের জবাব দেন। তার এই আচরণ ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজ পায়। নারীবাদীদের আইকনে পরিণত হন তিনি।
স্টপ ভায়োলেন্স এগেইনস্ট ওমেন নামের একটি এনজিওর তথ্যমতে, ২০১৪ সালে দেশটিতে ২৮৬ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায়। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৯১ জন। আর চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত এই সংখ্যা ১১৩তে পৌঁছে গেছে।
তুরস্ক সরকারও স্বীকার করছে যে দেশটিতে নারীদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা একটি গুরুতর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামী বা নিকটাত্মীয়দের আক্রোশের শিকার হচ্ছে তারা।
আদালতে সিলেম জানান, স্বামী হাসান কারাবালুত (৩৩) প্রায়ই তাকে মারধর করতেন। এছাড়া তাকে পতিতাবৃত্তি এবং মাদক ব্যবসায় বাধ্য করতেও চাইতেন। সবশেষে তার নিজের জীবন সংশয়ও দেখা দিয়েছিল স্বামীর কাছে।
তুরস্ক তোলপাড় করা এ ঘটনাকে অনেকেই এক ধরনের ‘অনার কিলিং’ বলে চিহ্নিত করছেন। দেশটিতে স্বামীদের হাতে স্ত্রীদের নিহত হওয়ার ভুড়ি ভুড়ি ঘটনা থাকলেও স্ত্রীর হাতে কোনও স্বামী নিহত হয়েছেন- এমন ঘটনা অতি বিরল।
ভারত-পাকিস্তানসহ অনেক দেশেই পারিবারিক সম্মান রক্ষার্থে প্রেমঘটিত বিয়ের পাত্রপাত্রীদের হত্যা করে থাকে স্বজনরা। মূলত উঁচু-নিচু জাত বা ধনী-গরীব দ্বন্দ্বের জেরে ঘটিত এসব জঘন্য অপরাধ মিডিয়ায় ‘অনার কিলিং’ হিসেবে পরিচিত।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে